ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক যোগব্যায়াম দিবসের অনুষ্ঠানে কাদের

মাদকের বিরুদ্ধে যোগ ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২২ জুন ২০১৮

 মাদকের বিরুদ্ধে যোগ ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আজকে তরুণ সমাজে মাদক যখন হিংস্র ছোবল দিচ্ছে, যখন তা সুনামির মতো সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে, তখন ইয়োগা বা যোগ ব্যায়াম শক্তিশালী ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’ বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক যোগব্যায়াম দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আয়োজনে যোগ দিবসের এই আয়োজনে ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে হাজারও স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিক যোগ দেন। সরকার দেশজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। তারই প্রেক্ষাপটে তিনি তার বক্তব্যে এ প্রসঙ্গ নিয়ে বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন, পরে তা বাংলাদেশেও চলে এসেছে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে। যোগ অভ্যাসে শরীর ও মন ভাল থাকবে- যুব সমাজকে এমন পরামর্শ দিয়ে কাদের বলেন, ‘আজকে তরুণ সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ সমাবেশে যোগ দিয়েছে। কর্মক্ষম সুস্থ জীবনের মূলমন্ত্র হলো- এই ইয়োগা। এটা করলে তরুণরা নিজেদের আরও বেশি সৃজনশীল কর্মোদ্যমে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবে।’ ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় নিজের হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে কাদের বলেন, ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও’ তিনি যোগচর্চা করতে পারেন না। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, ‘সুস্থ ও নিরোগ শরীর, সুস্থ ও সুন্দর মনের জন্য যোগ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।’ আয়োজকদের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্র্রিংলা বলেন, চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এই যোগ সমাবেশে প্রায় ৫ হাজার নাগরিক যোগ দিয়েছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী নাগরিকরাও যোগ দেন আয়োজনের এক পর্যায়ে। যোগচর্চা সুস্থ, সুন্দর জীবনের সহজ পন্থা- আমরা সেই বারতা নাগরিকদের দিতে চাই।’ ভারতীয় হাইকমিশনার জানান, ২০০০ সালে তারা যখন প্রথমবারের মতো এই আয়োজনটি করেছিলেন তাতে মাত্র ৭০০ জন অংশ নিয়েছিল। পরে ২০১৬ সালের দ্বিতীয় আসরে ১ হাজার ৫০০ জন, ২০১৭ সালে প্রায় ৫ হাজার নাগরিক যোগ দেন। অনুষ্ঠানে ভিয়েতনাম, ভাটিকান সিটি, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, প্যালেস্টাইন দূতাবাস ও জাতিসংঘ মিশনের কূটনীতিকরা যোগ দেন। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি, জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, দক্ষিণ এশীয় গেমসের স্বর্ণপদকজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, মেহজাবীন চৌধুরী, আমান রেজা, সোহানা সাবা, কণ্ঠশিল্পী মেহরীন মাহমুদ যোগ দেন যোগ সমাবেশে। যোগ সমাবেশে যোগ দিতে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে এসেছিলেন স্কুল শিক্ষিকা নূরুন্নাহার চৌধুরী। রায়াত ইউনিয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের এই শিক্ষিকা বলেন, ‘মফস্বলে সীমিত পরিসরে হলেও আমরা যোগ চর্চা শুরু করেছি। ২০১৬ সালের আসর থেকে আমি এখানে আসছি। এখানে এসে যোগের নতুন কৌশলগুলো জেনে নিচ্ছি। এগুলো গিয়ে স্টুডেন্টদের শেখাব। শরীর, স্বাস্থ্য ভালো থাকলে তারা পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে পারবে।’ গাজীপুর থেকে আসা ৬১ বছর বয়সী নারী শামসুন্নাহার চৌধুরী জানান, তারা ৭ বন্ধু মিলে এই প্রথমবারের মতো এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া ও তার বন্ধুরা রাজধানীর মিরপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘হার্ট অব ইয়োগা’ নামে একটি সংগঠন। মিরপুরের স্টেডিয়াম এলাকার বিভিন্ন গলিতে রয়েছে তাদের প্রশিক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমি হার্টের পেশেন্ট। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক আমি নিয়মিত যোগ চর্চা করছি। এতে বডি খুব ফ্লেক্সিবল হয়। আগে তো খুব কাজ করতে পারতাম না। আমার দেখাদেখি আরও অনেকে যখন আগ্রহী হলো, তখন সবাই মিলে একটি সংগঠন গড়ে তুললাম। এখন এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও যোগ দিচ্ছেন।’ ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের যোগ প্রশিক্ষক মাম্পী দে যোগাসনের বিভিন্ন পদ্ধতির পাশাপাশি দেখান প্রাণায়ামের পদ্ধতিগুলো। উৎকট আসন, গঙ্গাসন, বক্রাসন, বজ্রাসন, উষ্টাসন, ভুজঙ্গাসনসহ নানা আসনের কলাকৌশল দেখানোর পাশাপাশি তিনি বলে দেন, শারীরিক সমস্যাভেদে এই ব্যয়ামগুলোর চর্চা কিভাবে করতে হবে।
×