ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মনোয়ার হোসেন

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২২ জুন ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

আক্ষরিক অর্থে শেষ হয়েছে ঈদ। তবে রয়ে গেছে উৎসবের আমেজ। নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া অধিকাংশ মানুষ ফেরেনি শহর ঢাকায়। কিছু সংখ্যক ফিরলেও এখনও নগরী পায়নি তার চিরচেনা রূপ। রাজধানীতে বিরাজ করছে কোলাহলহীন সিগ্ধ পরিবেশ। নেই জন কিংবা যানজট। সেই সুবাদে এখনও আড়মোড়া ভেঙ্গে পুরোদমে জেগে ওঠেনি যান্ত্রিক শহর ঢাকা। বলা যায়, শহরের শরীরে যেন ভর করেছে আলস্য। জড়তা কাটিয়ে পায়নি সম্পূর্ণ সচলতা। জীবিকার তাগিদে নির্ধারিত ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটি নেয়া চাকরিজীবীদের অনেকে বৃহস্পতিবার ফিরেছেন রাজধানীতে। শহর ছেড়ে যাওয়ার তুমুল ঝক্কিটি পোহাতে হয়নি ফেরার সময়। তাই বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে ফেরাটা হয়েছে বেশ স্বস্তির। একসঙ্গে সবাই ঢাকায় না ঢোকার কারণে যাত্রী ও পরিবহনের চাপ কম থাকায় পথে পথে পোহাতে হয়নি দুর্ভোগ। তবে শ্রমজীবী ও ব্যবসায়ীসহ শহরবাসী মানুষের বিশাল অংশটি এখনও ফেরেনি। এ কারণেই ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। সেই সুযোগে এই শহর ঘিরেই গড়ে উঠেছে যাদের শিকড়- তাদের কাছে শত বিড়ম্বনার নগরী হয়ে উঠেছে প্রশান্তিময়। ফাঁকা হওয়া ঢাকায় চলছে ঈদ উদ্যাপনে ঘোরাঘুরি। বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় দেখা মিলছে সরগরম করা দর্শনার্থীর উপস্থিতি। নিমিষেই ছুটে বেড়ানো যাচ্ছে নগরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। তাই ৫২ বাজার ৫৩ গলির নগরে বয়ে যাচ্ছে ঈদ বিনোদনের হাওয়া। চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, সিনেমা হলসহ নানামুখী বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় জমেছে ঈদ উদযাপনকারী মানুষের। নজরে পড়ছে শহরের প্রতি শহরবাসীর ভাললাগার আবেশ। চারপাশের চিত্র বলে দিচ্ছে, কাল শনিবার পর্যন্ত থাকবে এই নির্ঝঞ্ঝাট ভাব। তারপর শহরটি ফিরে পাবে তার সেই চিরচেনা রূপ। পূর্ণোদ্যমে চালু হবে শহরের সব অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাথে শোনা যাবে হকারের কোলাহল, সড়কগুলোয় বিকট শব্দে বাজবে গাড়ির হর্ন, যানজটে পড়ে যাত্রীকে নষ্ট করতে হবে অনাকাক্সিক্ষত সময়। আবার হাজির হবে প্রতিক্ষণে ছুটে চলা ঢাকার নিত্যদিনের কর্মব্যস্ত চিত্রটি। এবার আসি বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনার কথায়। সারাদেশের মতোই গোলের খেলা ফুটবল জোয়ারে ভাসছে ঢাকা। বাড়ির ছাদে ছাদে উড়ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ প্রিয় দলের পতাকা। মহল্লার অলিগলিসহ চায়ের দোকানে চলছে ফুটবল বিতর্কের ঝড়। নিজ দলের সমর্থনে একে অপরের সামনে উপস্থাপন করছেন নানা ঝাঁজালো যুক্তি। নিজ দলের জয়ী হওয়ার উল্লাসের পাশাপাশি বিপক্ষ দলের হেরে যাওয়া নিয়ে চলছে টিটকারি মারা বা টিপ্পনি কাটা। সবমিলিয়ে অম্ল-মধুর পরিবেশ। ফুটবল খেলা দেখার দাপটে ম্লান হয়ে যাচ্ছে ঈদকেন্দ্রিক টেলিভিশনের নানা অনুষ্ঠান। হই-হুল্লোড় করে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বসে খেলা দেখাটি হয়ে উঠেছে দারুণ উপভোগ্য। এর বাইরে পুরনো ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রজেক্টর লাগিয়ে বিশাল স্ক্রিনে ফুটবল খেলা উপভোগ করছেন মহল্লাবাসী। শুধু কি তাই। ঘর-বাড়ি কিংবা পাড়া-মহল্লা ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা হাজির হয়েছে অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। অফিসের ডেস্কে ডেস্কে শোভা পাচ্ছে প্রিয় দলের পতাকা। চলছে সহকর্মীর সঙ্গে নিজ দলের সমর্থনে তর্ক-বিতর্ক। ফুটবল প্রেমে এতটাই উচ্ছ্বসিত শহরবাসী যে, বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বৃহস্পতিবার গুলিস্তান এলাকায় অনেককেই দেখা গেছে প্রিয় দলের জার্সি সংগ্রহ করতে। এবার আসি ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নগরবাসীর বিনোদনের কথায়। উৎসবপ্রিয় বাঙালীর কাছে স্বমহিমায় ধরা দিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব। যদিও আনন্দপ্রিয় বাঙালী সত্তার কাছে ধর্মের গ-ি পেরিয়ে সৌহার্দ্যরে পথরেখায় ধর্মীয় উৎসবও পেয়ে যায় সর্বজনীন রূপ। গৌন হয়ে যায় ধর্মভিত্তিক পৃথক পরিচয়। উৎসবের সন্ধানে সবাই মেতেছে আনন্দের অবগাহনে। ঈদ আনন্দ উদ্্যাপনে নগরবাসীর সরব পদচারণায় রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো হয়েছে মুখরিত। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হওয়া ঢাকায় বিরাজ করছে সুখময় দৃশ্যকল্প। বিনোদনের সন্ধানে শহরময় ছুটে বেড়িয়েছে বিনোদনপিপাসু নগরবাসী। ট্রাফিক জ্যামহীন শহরে মনের সুখে ঘুরে বেড়িয়েছে শহরবাসী। নীরব হওয়া শহরে ক্রিং ক্রিং শব্দ তুলে চলেছে রিকশাভ্রমণ। আনন্দের সন্ধানে শহরবাসী ছুটেছে শাহবাগের শিশু পার্ক, জাতীয় জাদুঘর, মিরপুরের চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, শ্যামলীর ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড, যমুনা ফিউচার পার্ক, পুরনো ঢাকার লালবাগ কেল্লা কিংবা আহসান মঞ্জিলে। ঘোরাঘুরির তালিকায় বাদ যায়নি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাতির ঝিল, সংসদ ভবনের চারপাশ কিংবা পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনসহ বিভিন্ন স্পট। ঢাকার অদূরে ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দন পার্কেও রকমারি রাইডে চড়ে উৎসব উদ্্যাপন করেছেন অনেকে। এই তালিকায় বাদ পড়েনি ঐতিহাসিক স্থাপনার রেপ্লিকায় সাজানো হেরিটেজ পার্কও। অন্যদিকে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ঘরে ঘরে চলেছে অতিথিবান্ধব বাঙালীর অতিথি আপ্যায়ন। মধুমিতা, স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা কিংবা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে নতুন আসা ঢাকাই ছবিটি দেখেও আনন্দ উপভোগ করেছেন অনেক সিনেমাপ্রেমী। এদিকে রোজা ও ঈদের আড়মোড়া ভেঙ্গে সরব হতে শুরু করেছে শহরের সংস্কৃতি অঙ্গন। বিশ্বসঙ্গীত দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে নানা আয়োজন। ‘বিশ্ব ভরে উঠুক মানবতার জয়গানে’ প্রতিপাদ্যে শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এদিন থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমিও নিজস্ব আয়োজনে উদ্যাপন করেছে বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকাতেও ছিল সঙ্গীত দিবসের বিশেষ আয়োজন।
×