ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল ব্যাংকিংয়ে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা

আমানতের ৮৫ শতাংশই বেসরকারী ব্যাংকে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২০ জুন ২০১৮

আমানতের ৮৫ শতাংশই বেসরকারী ব্যাংকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্কুল ব্যাংকিংয়ে সরকারী ব্যাংকগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বেসরকারী ব্যাংকগুলো। তাছাড়া গ্রামের ছেলেমেদের তুলনায় শহরাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের এ কার্যক্রমে বেশি আগ্রহ। স্কুল ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে খোলা ১৪ লাখ ৬১ হাজার ৮০৬টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মধ্যে বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে খোলা হয়েছে ৯ লাখ ৯৩৬টি যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ৬১.৬৩ শতাংশ। এসব হিসাবের বিপরীতে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা আমানত রাখা আছে যা এ খাতের মোট আমানতের ৮৫.৩০ শতাংশ। যেখানে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা সবগুলো হিসাবে জমা আছে ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে ২৯.২৮ শতাংশ স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হলেও ওই হিসাবগুলোতে আমানতের স্থিতি ১১.৮৯ শতাংশ। তাছাড়া স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় খোলা হিসাব সংখ্যার দিক দিয়ে শহরাঞ্চলে ৬১.৩৩ শতাংশ এবং জমাকৃত আমানত ৭৬.২০ শতাংশ। আবার মোট হিসাবগুলোর মধ্যে ছাত্রদের হিসাব সংখ্যা ৫৮ শতাংশ এবং জমাকৃত অর্থের দিক দিয়ে ছাত্রদের আমানত ৫৪.৭৪ শতাংশ। জানা গেছে, বাংলাদেশে কার্যরত ৫৭টি তফসিলী ব্যাংকের মধ্যে মোট ৫৬টি ব্যাংকই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। হিসাব সংখ্যার দিক দিয়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এই ব্যাংকটিতে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব রয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪১টি, যা মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ১৬.৪১ শতাংশ। জমাকৃত অর্থের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকটিতে খোলা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে মোট ৪১২ কোটি টাকা জমা আছে যা এ খাতের মোট আমানতের ২৮.৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের অন্যতম পদক্ষেপ স্কুল ব্যাংকিং। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৮ বছরের কম বয়সের শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবা ও আধুনিক ব্যাংকিং প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এ কর্মসূচীর উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক কর্মকা-ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে দেশের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসা স্কুল ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২ নবেম্বর ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) সার্কুলার লেটার নং-১২ এর মাধ্যমে সব তফসিলী ব্যাংককে নির্দেশনা প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে ২৮ অক্টোবর ২০১৩ অন্য একটি সার্কুলারের মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করা হয়। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম জনপ্রিয় করার জন্য নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলো ন্যূনতম ১০০ টাকা জমা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খুলছে। এছাড়াও ব্যাংক হিসাবে আকর্ষণীয় মুনাফা প্রদান, সার্ভিস চার্জ গ্রহণ না করা, এটিএম বা ডেবিট কার্ড প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান এবং স্কুল কেন্দ্রিক আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রসার ঘটছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে লেনদেন করছে ৪ হাজার ৩৮১ জন পথশিশু। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৪৪ জন। অর্থাৎ ত্রৈমাসিকে হিসাব সংখ্যা কমেছে ১৬৩টি। দেশের ১৫টি এনজিও এই পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে। অধিকাংশ পথশিশুর কোন অভিভাবক না থাকায় এনজিও প্রতিনিধিরা তাদের অভিভাবক হয়ে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন। ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনাগ্রহের কারণে পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ১০ টাকার বিনিময়ে পথশিশুদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গবর্নর ড. আতিউর রহমান। ড. আতিউর রহমানের ওই নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলো পথশিশুদের আর্থিক সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিল। কিন্তু বর্তমানে পথশিশুদের ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমে গেছে। ২০১৪ সালে প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরও ৯টি ব্যাংক এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম ও উত্তরা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে যে ১৫টি এনজিও পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব দেখভাল করছে। এই এনজিওগুলো হলো- মাসাস, সাফ, উদ্দীপন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নারী মৈত্রী, সিপিডি, প্রদীপন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, এএসডি, শক্তি বিদ্যালয়, ইবিসিআর প্রকল্প, মানবসেবা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা, সোসাইটি ফর আনপ্রিভিলিজেড ফ্যামিলি ও পরিবর্তন।
×