ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুয়াকাটাগামী পর্যটক বাসে ফ্রিস্টাইলে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২০ জুন ২০১৮

  কুয়াকাটাগামী পর্যটক বাসে ফ্রিস্টাইলে চাঁদাবাজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৯ জুন ॥ মেহেরপুর জেলার গাংনি থেকে ৬০ পর্যটক নিয়ে ঈদের পরের রাতে কুয়াকাটায় এসেছিলেন গোল্ডেন ট্রাভেলস পরিবহনের বাসের চালক শাজিবুল ইসলাম। তার বাস থামিয়ে শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশদ্বারে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার টোলের নামে রশিদ দিয়ে ( নম্বর ২৮৬৭) এক শ’ টাকা হাতিয়ে নেয় হোন্ডা আরোহী দুই ক্যাডার। শাজিবুলের ভাষ্য, রাত আনুমানিক সোয়া চারটার ঘটনা। পৌরসভার কোন টার্মিনাল ব্যবহার করলেন না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কে চলাচলকারী পর্যটকবাহী বাস থামিয়ে এভাবে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়। ঝিনাইদহ থেকে এসলাইন পরিবহন বাসের চালক আমজাদ হোসেন ৬৫ পর্যটক নিয়ে এসছেন। তাকে গুনতে হয়েছে ওই পরিমাণ টাকা। একই অভিযোগ করলেন, বরিশাল থেকে আসা জয়রাজ পরিবহন বাসটির চালক মোঃ সোহেল, মেহেরপুরের এসলাইন পরিবহনের চালক রকিবুল ইসলাম। এমন অভিযোগ অন্তত অর্ধশত পর্যটকবাহী বাস চালকের। এভাবে মহাসড়কে বাস আটকে পুরো বছর চাঁদাবাজি চলে এলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর কোন প্রতিকার করেনি। এনিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এক কথায় কলাপাড়া পৌরসভার চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত অন্তত সাত স্তরে বিভিন্ন ধরনের যনবাহন থেকে চাঁদাবাজি চলে আসছে। স্থানীয়রা জানান, বরগুনা জেলার পুরাঘাটার অলি ও চাকামইয়া-নিশানবাড়িয়ার সোহেলসহ তাদের ক্যাডাররা মাঠ পর্যায়ে দিন-রাত পালাক্রমে নিত্যদিন ৩০ থেকে অর্ধলাখ টাকা টাকা চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। পর্যটকবাহী বাস থেকে পৌরটোল আদায়ের ঘটনাটি হতবাক করেছেন উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকবাহী বাস চালককে। একেকজন চালক টোলসহ চাঁদার বিভিন্ন ধরনের রশিদ দেখিয়েছেন। কিন্তু কোথাও পর্যটকবাহী বাস থেকে পৌরটোল আদায়ের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে এ চাঁদাবাজচক্র সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ করে যাচ্ছে। এ চক্রের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না অটোবাইক, হোন্ডাসহ কোন ধরনের যানবাহন। এমনকি টমটম পর্যন্ত চাঁদার কবল থেকে রক্ষা পায় না। এরা যেন সব করছে ফ্রি-স্টাইলে। কোন রসিদে বাসের নম্বর লিখে দেয় না। পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড ইজারার নিয়মে স্বচ্ছভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যদি কোন পরিবহন থেকে শুরু করে আন্তঃ কিংবা বহিঃগামী যানবাহন বাস টার্মিনাল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট হারে টোল আদায় করবে ইজারাদার। কিন্তু ইজারাদাররা চাঁদাবাজদের মতো মহাসড়কে পর্যটকবাহী বাস আটকে দিন-রাত চাঁদা আদায়ের ঘটনায় ত্যক্ত-বিরক্ত বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকসহ বাস চালকরা। মোট কথা শেখ কামাল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশদ্বার থেকে নাচনাপাড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকা এখন সাত ক্যাডারের দখলে। পৌরমেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, পৌরসভার নির্দেশনা লিখিত আকারে বাসস্ট্যান্ড ইজারাদারকে দেয়া রয়েছে। এর ব্যত্যয় করলে তার দায় তাকেই বইতে হবে। পর্যটকবাহী বাস থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে তিনিও পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কোন বাসচালক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। শেখ কামাল সেতুর টোল পয়েন্টে গিয়ে জানা গেছে ঈদের পরের দিন কুয়াকাটায় পর্যটকের রিজার্ভ বাস এসেছে অন্তত ৬০টি। এছাড়া পরিবহনসহ বিভিন্ন রুটের অন্তত আরও এক/দেড়শ’ বাস কুয়াকাটায় যাওয়া-আসা করছে। কোন বাস চাঁদা না দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। এনিয়ে বাস চালকসহ পর্যটকরা চরম ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আবুল হাসান মিয়াজি নামের এক পর্যটক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কুয়াকাটাগামী সড়কে সেতু করে দিয়েছেন। অথচ সেই সেতুর সংযোগস্থলে সন্ত্রাসী-ক্যাডাররা পর্যটকের বাস আটকে চাঁদা আদায় করলেও পুলিশ প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নেয় না তা বুঝে উঠতে পারছেন না। বাসস্ট্যান্ড ইজারাদার মেসার্স রূপ স্টোর্সের পরিচালক মোঃ মামুন হাওলাদার জানান, নিয়মনীতি ছাড়া কেউ যদি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে তার দায় তাকেই বহন করতে হবে। তবে তিনি এও দাবি করেন, যদিওবা তার নামে এর ইজারা কিন্তু পরিচালনা করছেন পৌরসভার কাউন্সিলররা। তবে নতুনভাবে পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড ইজারা ফের দেয়া হয়েছে বলে জানালেন প্রকৌশলী মিজানুজ্জামান। যা জুলাই মাসে বুঝিয়ে দেয়া হবে। তখন এটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার আশাবাদ ব্যক্ত করলেন এই পৌর কর্মকর্তা।
×