ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাপপ্রবাহের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২০ জুন ২০১৮

  তাপপ্রবাহের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহতভাবে চলা তাপপ্রবাহের মধ্যে অবশেষে আচমকা কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সামান্য বৃষ্টিপাতের কারণে। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে হালকা বৃষ্টিপাতে গরমের তীব্রতা কমে আসে। জনমনে নেমে আসে স্বস্তি। কয়েকদিনের অসহ্য গরমের হাত থেকে শান্তির পরশও বুলিয়ে দিয়ে যায় এই বৃষ্টি। গত কয়েকদিন ধরেই আষাঢ়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল প্রকৃতিতে। প্রচন্ড গরমে অস্বস্তি এমন চরম আকার ধারণ করে যে রাতে ঘুমানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। এবারের গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাতের কারণে তাপপ্রবাহ না থাকলেও হঠাতই আষাঢ়ের শুরুতে দেখা দেয় তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করলেও তা কম সক্রিয় থাকার কারণে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় তাপপ্রবাহ। মৌসুমি বায়ু দুর্বল অবস্থানে থাকার পাশাপাশি সাগর থেকে পুবালি হাওয়ার বদলে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে গরম বায়ু প্রবাহের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মৌসুমের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠে যায় গত সোমবার। এদিন তাপমাত্রা উঠে যায় ৪১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। যা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। এছাড়া একইদিনে যশোরে ৪১.১, রাজশাহীতে ৪১, কুমারখালীতে ৪১.২ এবং ঈশ্বরদীতে ৪০.৫, তাড়াশে তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৯.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে উঠে গেলেই তা অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। যদিও মঙ্গলবার সামান্য বৃষ্টিতে এবং আকাশ মেঘলা থাকার কারণে প্রচ- গরমের হাত থেকে যেমন স্বস্তি মেলে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমে আসে। অবশ্য আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, একটি পশ্চিমা লঘুচাপ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া ও বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় সারাদেশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে বর্তমানে খুলনা বিভাগসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু অঞ্চল থেকে প্রশমিত হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি না হলেও এতে তাপমাত্রা আগের দিনের চেয়ে অনেক কমে আসে। ফলে প্রকৃতিতে গরমের বদলের ঠা-ার পরশ বয়ে যায়। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়া নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় গরমের হাত থেকে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এদিন ভোর থেকেই আকাশে লক্ষ্য করা যায় মেঘের আনাগোনা। এক পর্যায়ে মেঘে ঢেকে যায় পুরো আকাশ। সকাল আটটা নাগাদ নামে বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি পরিমাণ বেশি না হলেও গরম আর ফিরে আসেনি সারাদিনে। সারাদিন আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। রোদের দেখা মেলেনি। এতেই গরমের তীব্রতা অনেকটা কমে যায়। প্রচন্ড গরমে এবার ঈদে ঘরে ফেরা এবং ঈদ শেষে রাজধানীতে ফেরা মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়। গরমের কারণে খুশির ঈদেও অস্বস্তি ছিল চরমে। রাতে মানুষ ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি। গা দিয়ে দরদর করে ঘাম বের হয়েছে। দিনে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হয় রাতে। ফ্যানের নিচে বসেও অনেককে অনবরত ঘামতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও লোডশেডিংয়ের কারণে অসহনীয় হয়ে উঠে জীবন। এ অবস্থায় বৃষ্টির প্রতীক্ষায় থাকে মানুষ। তবে মঙ্গলবার বৃষ্টিতে বেশি না হলে স্বস্তির মাত্রা ছিল অনেক বেশি। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস বলছে, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আর সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
×