ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এতে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে

চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২০ জুন ২০১৮

চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য

এম শাহজাহান ॥ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার মাধ্যমে চীন থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আনতে চায় বাংলাদেশ। চীনের লক্ষ্য বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বাড়ানো। এ অবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ হলে বাংলাদেশ-চীন কতটুকু লাভবান হবে সে বিষয়ে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষা যাচাই গ্রুপের দু দিনব্যাপী বৈঠক আজ বুধবার শুরু হচ্ছে বেজিংয়ে। এফটিএ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের অবকাঠামো ও সার্ভিস খাতে বিনিয়োগ চাওয়া হবে। বরাবরই পণ্য রফতানিতে চীনের বড় বাজার বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে চুক্তি হলেও পণ্য রফতানি করে চীনের বাজার ধরা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এফটিএ’র আওতায় চীনের বিনিয়োগ আনাই মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে প্রায় কয়েক বছর আগে চীন থেকে প্রথম এফটিএ করার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়। শুরুতে চীনের এই প্রস্তাব নিয়ে সরকারী-বেসরকারীখাত তেমন আগ্রহ না দেখালেও এখন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে। যদিও ব্যবসায়ী মহলে এফটিএ করার বিষয়ে বিরোধিতা রয়েছে। তাদের মতে, এ ধরনের চুক্তি হলে চীনা পণ্য শুল্কমুক্তভাবে ঢুকে স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। দেশীয় শিল্প বিকাশের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাই চীনের সঙ্গে এফটিএ করার আগে এ নিয়ে উচ্চমানের সমীক্ষা প্রয়োজন। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ করতে হবে। উদ্যোক্তাদের মতে, এখনও প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্যে উচ্চ শুল্ক দিয়ে দেশটির বাজারে প্রবেশ করতে হয়। বড় বাজার চীনে সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে রফতানি বাড়বে বর্তমানের কয়েকগুণ। এরপরও ভয় আছে, দেশের আমদানিকৃত পণ্যের বেশিরভাগ পণ্যসামগ্রী চীনে তৈরি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হলে চীনা পণ্যের বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, চীনের সঙ্গে এফটিএ করার আগে দু দেশের যৌথ সমীক্ষা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, আমাদের বাজার কোন ঝুঁকির মুখে পড়বে কী না সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া উচিত। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার চীনা পণ্যের দখলে। অন্যদিকে, দেশে দেশীয় শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। দেশের গার্মেন্টস, প্লাস্টিক, চামড়া, ওষুধ ও পাটজাতপণ্যখাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনের সঙ্গে এফটিএ করার আগে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত গ্রহণ করতে হবে। এ দিকে, সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তার মতে, এফটিএ হলে বাণিজ্য বৈষম্য কমবে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অনেক পুরনো। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৭টি উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে চীনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে, কর্ণফুলী টানেল উন্নয়ন, পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট উন্নয়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নসহ একাধিক খাতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিতে চায় চীন। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে ঢাকার পাশে থাকবে বেজিং। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-চীন আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বর্তমানে ৮৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পণ্য। বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৫৪ কোটি ৮ লাখ ডলার। চীনে রফতানি তালিকায় উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি পণ্য প্রভৃতি। যৌথ সমীক্ষা গ্রুপের প্রথম বৈঠক ॥ চীনের সঙ্গে এফটিএ ইস্যুতে আজ বুধবার থেকে দু দিনব্যাপী বেজিংয়ে বেঠকে বসছে বাংলাদেশ। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ের সমীক্ষা যাচাই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে এফটিএ চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চায় না ঢাকা। কেননা বেজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আর এই ঘাটতি শুধু পণ্য রফতানি বাড়িয়ে কমানো সম্ভব নয়। এ কারণে চীনের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। সরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশটির উদ্যোক্তারাও যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেন সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এশিয়া প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তির (এপিটিএ) আওতায় ২০১০ সাল থেকে চীনের বাজারে চার হাজার ৮৮৬টি পণ্যেও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এফটিএ করার ক্ষেত্রে বেজিংয়ের যুক্তি হলো, এফটিএ’র মধ্য দিয়ে ঢাকায় চীনের বিনিয়োগ বাড়বে। সেই সঙ্গে ঢাকার রফতানিও হবে বহুমুখী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ এইচ এম আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, যৌথ সমীক্ষা ও চুক্তি এক জিনিস নয়। এ ধরনের চুক্তি করার আগে বহু পক্ষের মতামত গ্রহণ ও সমীক্ষা প্রয়োজন হয়। আলোচনা চলছে, চলবে। পরবর্তী বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ সবার আগে। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য কিংবা শিল্পগ্রস্ত হয় এমন কোন বিষয় আছে কী না সেটা যাচাই করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ চুক্তি হলে চীনের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ চাওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ হবে, কীভাবে সেটা হবে তারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
×