ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত প্রযুক্তি ও বীজনির্ভর পাটচাষ হবে

পাটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২০ জুন ২০১৮

 পাটের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ পাটের হারিয়ে ফেলা অর্থনৈতিক গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এর অংশ হিসেবে এবার প্রায় ৭ লাখ কৃষকের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট চাষ ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পাট চাষ বেশি হয় দেশের এমন ৪৬ জেলার ২৩০ উপজেলার কৃষকদের জন্য এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় হবে ৩৭৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগামী ৫ বছরে ৮০ লাখ বেল উচ্চফলনশীল তোষা পাট উৎপাদন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রচলিত পাট চাষের জমিতে ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদন ও কৃষকদের উন্নত পাট পচন পদ্ধতি অনুসরণে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের প্রধান পাট উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। তা সত্ত্বেও চাহিদা মেটাতে সিংহভাগ পাটবীজ আমদানি করতে হয় ভারত থেকে। দেশে পাটবীজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সরকারীভাবে সরবরাহ করা হয় মাত্র ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। তাছাড়া কৃষকদের মধ্যে এখনও কম ফলনশীল ও দুর্বল জাতের দেশীয় পাট চাষের প্রবণতা রয়েছে। ফলে পাট চাষ শেষ পর্যন্ত আর লাভজনক হয়ে ওঠছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কম জমিতে উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে অধিক পরিমাণে পাট উৎপাদন করা সম্ভব হবে। চলতি বছর থেকে মার্চ ২০২৩ সাল মেয়াদে পাট পরিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির গুরুত্ব প্রসঙ্গ জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে আমাদের রফতানি আয়ের বেশির ভাগ আসে পোশাক খাত থেকে। উন্নত অর্থনীতির দেশ হতে হলে রফতানিতে বহুমুখীকরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পাটের বাণিজ্যিক গুরুত্ব কমেনি। পাটপণ্য পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই প্রকল্প আধুনিক পদ্ধতিতে পাট চাষ, উন্নত পাটবীজের প্রচলন ও বিকাশ ঘটাবে। সরকার প্রাথমিকভাবে পাটের রফতানি দুই বিলিয়ন ডলারে নেয়ার টার্গেট ঠিক করেছে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পাট খাত দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ১০ শতাংশ এবং জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৪ শতাংশ। রফতানি আয়ের ৫ শতাংশ আসে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত পাট উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শীর্ষে। সে সময় দেশে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হতো, যা কমতে কমতে বর্তমানে ৪ লাখ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। চাষের জমি কমার পাশাপাশি কমেছে গুণগত মানসম্পন্ন পাটের উৎপাদন। এ সময়ে পাটের উৎপাদন ৬৮ লাখ বেল হতে কমে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ বেল হয়েছে। পাট ও পাটবীজ উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তি ও সঠিক পদক্ষেপ নিলে আঞ্চলিক ও বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যকে একটা মানসম্পন্ন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার কৃষকের অংশগ্রহণে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগামী ৫ বছরে ৭০ থেকে ৮২ লাখ বেল উচ্চফলনশীল তোষা পাট উদৎপাদন। এছাড়া ৩৬ জেলার ১৫০ উপজেলায় প্রতি বছর সাড়ে ৭ হাজার কৃষকের অংশগ্রহণে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রকল্প মেয়াদে নিম্ন মানের পাটবীজের পরিবর্তে ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদন এবং ২৮ জেলার ১০০টি উপজেলায় উন্নত পাট পচন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার পাটচাষী, ৫৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
×