ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১৯ জুন ২০১৮

বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে

কয়েকমাস আগেও বিশ্ব অর্থনীতিতে ইতিবাচক লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলো একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সার্বিকভাবে গতি সঞ্চার করেছিল। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। সহযোগিতার স্থলে বাণিজ্য যুদ্ধের লক্ষণগুলোই এখন দেখা দিচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এখন প্রতিপক্ষ দেশগুলোর মতো মিত্র দেশগুলোর ওপরও শুল্ক আরোপের নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে মিত্রদেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করতে যাচ্ছে। এতে করে বিশ্ব বাণিজ্যে গতি আসার বদলে স্থবির হয়ে পড়তে পারে। সর্বশেষ বিবাদ শুক্রবার শুরু হয়েছে। ট্রাম্প এদিন চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে ৫শ’ কোটি ডলার শুল্ক আরোপ করেন। বেজিংও দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। বাণিজ্য বিরোধ জটিল হতে থাকায় বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরগুলোতে জাহাজীকরণের এবং বিমানবন্দরগুলোতে মাল ওঠানামার গতি কমে যায়। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দর বেড়ে যায়। জার্মানি থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত বাণিজ্যিক লেনদেন ও বিনিয়োগ বিলম্বিত হয়। মিত্রদেশগুলোর পাল্টা পদক্ষেপের ফলে বিক্রি কমে গিয়ে বিপাকে পড়ে মার্কিন খামারিরা। চলতি মাসে আরও আগের দিকে ট্রাম্প প্রতিবেশী কানাডা থেকে ধাতু আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন। ফলে কানাডার ইস্পাত কারখানাগুলোর শ্রমিকদের বেকার বসে থাকতে দেখা গেছে। কারণ অনেক মার্কিন কাস্টোমার তাদের অর্ডার বাতিল করেছেন। মার্কিন শহর সিয়াটলের এডমান্টনে অবস্থিত আল্টাস্টিলের প্রধান জন হবস বলেন, ধাতব পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে তাড়াতাড়ি। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিদেশে ব্যবসা গুটিয়ে দেশে কারখানা ফিরিয়ে আনার জন্য এর কোন বিকল্প ছিল। ট্রাম্প মনে করেন, শুল্ক আরোপের ফলে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিলেও এ যুদ্ধে জেতা কঠিন হবে না। কারণ চীন বা জার্মানির মতো শক্তিশালী অর্থনীতির সঙ্গে তখন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমে আসবে। ট্রাম্প প্রশাসন একে দর কষাকষির উপায় করতে চাইছে বলেও অনেকে মনে করেন। তাদের ধারণা বহির্বিশ্বে বানিজ্যেও সুযোগ সঙ্কুচিত হলেও অভ্যন্তরীণ ক্রেতাদের জন্য মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ইতিহাস প্রমাণ করেছে বাণিজ্য যুদ্ধ ব্যাপক মাত্রার বৈরিতার ঝুঁকি তৈরি করে। উৎপাদনকারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এর পরে কি হতে যাচ্ছে এ নিয়ে সব সময় তাদের আশঙ্কায় থাকতে হয়। জেনেভা ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্দোসুয়েজ ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ মেরি ওয়েন্স টমসন বলছেন, ‘সংরক্ষণবাদ এখানে মূল সমস্যা। এটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।’ ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত তিন বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে বিমান পরিবহন ব্যবসা উর্ধমূখী থাকার পর গত তিন মাসে এ ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কন্টেনার শিপের ব্যবসা গত প্রায় ছয়মাস ধরে মন্দাবস্থায় রয়েছে। গত বছর শুরুর দিকের বিশ্ব অর্থনীতি এই প্রথম সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে বলে লন্ডন ভিত্তিক অক্সফোর্ড ইকনোমিক্সের গবেষকরা জানিয়েছেন। শুল্ক নিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ গত সপ্তাহেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য দেশগুলোও অনুরূপ ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি সঙ্কটপূর্ণ হয়ে উঠবে। তিনি বলেছিলেন, কানাডা, জার্মানি ও ইউরোপের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। শুল্ক আরোপ ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে তেলের দাম বেড়ে গেছে। বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন ক্রমেই সংঘাতে জড়াচ্ছে।
×