ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিলেটে বন্যা ॥ তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ১৯ জুন ২০১৮

সিলেটে বন্যা ॥ তিন লাখ  মানুষ পানিবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকটি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলায় ৩ লক্ষাধিক লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন স্থানে বসতঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। সুরমা-কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সুনামপুর-চন্দরপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গোলাপগঞ্জের সঙ্গে বিয়ানীবাজারের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। বুধবারীবাজার, উত্তর বাদেপাশা, বাঘা, শরীফগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ, ভাদেশ্বর, ফুলবাড়ি, গোলাপগঞ্জসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে মৎস্য খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। জকিগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পুরো উপজেলা এখন বন্যায় আক্রান্ত। উপজেলার শতাধিক গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। একাধিক স্থানে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক ডুবে যাওয়ায় ঈদের দিন বিকেল থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৯৬ সেন্টিমিটার এবং সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান ও সোমবার জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিনের আহমদের নেতৃত্বে একটি টিম বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জকিগঞ্জকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। মাসুক উদ্দিন আহমদও সোমবার জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবে দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন করে এসে সাংবাদিকদের জানান, সরকার জরুরীভিত্তিতে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। উপজেলার জকিগঞ্জ সদর, মানিকপুর, বারঠাকুরি, বারহাল, বীরশ্রী, কসকনপুর, কাজলসার, ইউনিয়ন পুরোপুরি ও পৌর এলাকার একাধিক ওয়ার্ড, সুলতানপুর ও খলাছড়া ইউনিয়ন আংশিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে অন্তত ৩০টি স্থান দিয়ে এবং ডাইক উপছে নানা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। নতুন নতুন এলাকা দ্রুত প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। উপজেলার বারঠাকুরি ইউনিয়নের মিনাপাড়ায় মাহতাবের বাড়ির সামনে সুরমা নদীর ডাইকে প্রায় ২০০ ফুটব্যাপী ভাঙ্গন দিয়ে পানি ঢুকছে। পিল্লাকান্দি গ্রামের মনু মিয়ার বাড়ির সামনে কুশিয়ারা নদীর ডাইকে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমলশীদ, শাহশরীফসহ একাধিক স্থানে ডাইক উপছে পানি ডুকছে। বারঠাকুরি ইউনিয়নের বারঠাকুরি, উত্তরবাগ, মিনাপাড়া, কাজীরপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নোয়ারপাড়া, উত্তরকূল, কামারগ্রাম, কসতৈল গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বুধবার দিবাগত রাতে আকস্মিক ভারতের বরাক ও লোভা নদীর পানিতে সুরমা কুশিয়ারা ফুলে উঠে। সুরমা কুশিয়ারা নদী থেকে হাওরের সংযোগকারী ৩৭টি খালনালা বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্থানে ডাইক ভেঙ্গে জনবসতি প্লাবিত হয়। . মৌলভীবাজারে ত্রাণমন্ত্রী নিজস্ব সংবাদদাতা মৌলভীবাজার থেকে জানান, উত্তর ত্রিপুরায় উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে মনু নদের বারইকোণাতে প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গন দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পৌর এলাকা ও সদর উপজেলার মোস্তফাপুর এবং কনকপুর ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের বড়হাট এলাকায় আটকাপড়া মানুষদের সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলা আকস্মিক এই ভাঙ্গনের ফলে নিজ ঘরে আটকা পরে অনেকে। পানি ঢুকে ঘরের ও দোকান পাটের মূল্যবান মালামাল ডুবে নষ্ট হয়েছে। অনেকেই বাড়ির দোতালায় আশ্রয় নিয়েছেন আবার অনেককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আনা হয়েছে। গতকাল রাতে শহরের উত্তর মোস্তাফাপুর এলাকায় পানির তোড়ে সোবহান নামের একজন মারা গেছে। এ পর্যন্ত জেলায় পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে ৮ জন মারা গেছে। দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বন্য দুর্গতদের দেখতে এসে বলেছেন, মৌলভীবাজারসহ বৃহত্তর সিলেটের যে সব জায়গায় পানিবন্দী মানুষ কষ্টে আছেন তাদের জানমাল রক্ষা করা এটি হলো আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। যতদিন পর্যন্ত বন্যার্তদের দুঃখ দুর্দশা ও কষ্ট লাঘব হবে না ততদিন পর্যন্ত এ ত্রাণ দেয়া অব্যাহত থাকবে। আমাদের ত্রাণের কোন অভাব নাই। এলাকার মানুষের যে চাহিদা তার চেয়ে বেশি ত্রাণ দিতে সক্ষম হব। সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউসে প্রশাসনসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেছেন। পরে মন্ত্রী বন্যা দুর্গত এলাকা শহরের বড়হাট ও রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকা পরির্দশন করেন এবং দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
×