ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে বিনোদন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৯ জুন ২০১৮

চট্টগ্রামে বিনোদন কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঈদে প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াবার প্রবণতায় পর্যটন স্পটগুলোতে অত্যাধিক ভিড়। নগরীর পতেঙ্গাসহ প্রতিটি বিনোদন স্পটে ছুটছে মানুষ। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও কাট্টলি বিচ, ফয়’স লেক, চিড়িয়াখানা, ওয়ার সিমেট্রি, অভয়মিত্র ঘাট, মেরিনার্স রোড, স্বাধীনতা পার্কসহ প্রতিটি স্পটেই ঈদের দিন বিকেল থেকেই মানুষের ভিড় পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে পতেঙ্গা সৈকতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগম লেগেই আছে। সপরিবারে এবং সবান্ধবে বেড়াবার বিশেষ এই সময়টুকু কাটছে আনন্দ আমেজে। পুলিশ প্রশাসনও পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে নিরাপত্তার নামে পুলিশী হয়রানির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে জেলার মীরসরাইয়ের মহামায়া লেক, খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, রূপসী ঝর্ণা, সীতাকু- ইকোপার্ক, সহ¯্রধারা, ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব, বাঁশবাড়ীয়া বিচ, রাঙ্গুনিয়ার শেখ রাসেল এ্যাভিয়ারি পার্ক, আনোয়ারার পারকি, বাঁশখালীর ডানের ছড়া, বামের ছড়া, ফটিকছড়ির বিভিন্ন চা বাগানসহ সব স্পটে ঈদের ছুটিতে যেন মানুষ আর মানুষ। শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ভ্রমণপিয়াসীরা ছুটছে লেক ও ঝর্ণা দেখতে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষ ঈদের এ সময়টুকু অতিবাহিত করতে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে। তিনদিনের সরকারী ছুটি শেষ হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি এখনও রয়ে গেছে। ফলে সপরিবারে যারা গ্রামে কিংবা দূরের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন তারা এখনও ফেরেনি। তাদের সময় কাটছে নগরীর বাইরের বিনোদন স্পটগুলোতে। . রাজশাহী স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, ঈদের ক’দিন আগে থেকেই সূর্য দহনে পুড়ছিল রাজশাহী অঞ্চল। ঈদের একদিন আগে ছিল আষাঢ়ের প্রথম দিন। এ দিন আরও রুদ্রমূর্তি ধারণ করে প্রকৃতি। বৃষ্টি দূরের কথা বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ উঠে এদিন। এর পরের দিনই ঈদ। মাথার ওপর সূর্যের তির্যক রশ্মি দেখে বোঝার উপাই নেই ধরায় আষাঢ় নেমেছে। সকাল থেকে প্রখর রোদ। গরমও ধারণ করেছে চরম আকার। এর মধ্যেই চলছে ঈদের ছুটি। এক মাস সিয়াম সাধনার পর কাঠফাটা রোদে ঈদের জামাত শেষে প্রথম দিনের অলস দুপুর কেটেছে তাই গৃহবন্দী থেকেই। তবে ঈদের দিন ভ্যাপসা গরমে বিকেলটাও ছিল ক্লান্তিময়। তারপরেও খরতাপ মাথায় নিয়েই বিনোদনপ্রেমী মানুষ পা বাড়িয়েছেন বাইরে। এ জন্য ঈদের দিনের বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন রবিবার ও সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর বিনোদনকেন্দ্রে ঢল নামে মানুষের। পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জন নিয়ে সবাই ভিড় জমাচ্ছেন রাজশাহীর সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়। কেবল শহর থেকেই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে বাস কিংবা মিনিট্রাক ভাড়া করেও দলবেঁধে এখানে ছুটে আসছেন ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। তাই ঈদের দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। বিকেল গড়াতেই বাড়ছে দর্শনার্থী। রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ছাড়াও জিয়া শিশু পার্ক, ভদ্রা পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের সমান ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা মানুষগুলোও দীর্ঘদিন পর পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন। সন্ধ্যায় রাজশাহীর পদ্মা পাড় যেন হয়ে উঠে বিনোদনের প্রধান কেন্দ্র। . বগুড়া স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, মহাস্থানগড়ে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। এবারের ঈদে পর্যটকের আগমনের সংখ্যা বেশি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক এখন বাংলাদেশকে নিরাপদ মনে করে আসতে শুরু করেছে। আগে যে ভয় ছিল তা কেটে গেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিশ্বের যে পর্যটকগণ আসেন তারা শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে আসেন না। বিশ্বের অনেক দেশেই সমুদ্র সৈকত আছে। বেশিরভাগ পর্যটক বৌদ্ধদের স্থাপনা ও কীর্তি দেখতে আসে। বৌদ্ধরা মিয়ানমার থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া লাওস ভিয়েতনাম জাপান হয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই বৌদ্ধদের কাছে বড় আসন করে নিয়েছে বগুড়ার মহাস্থানগড়। যেখানে রয়েছে বৌদ্ধদের অনেক কীর্তি। যা প্রতœ খননে বের হয়ে আসছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের অর্থায়নে বগুড়ার মহাস্থানগড়কে সুন্দর করে সাজানো হয়ছে। দু’ বছর আগে যারা মহাস্থানগড়ে গিয়েছিলেন এখন তারা গিয়ে অবাক হবেন। বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ভূমিকে যে কতভাবে সাজিয়ে তোলা যায় তার প্রমাণ দিয়েছে মহাস্থানগড়। . বাগেরহাট স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, হ্যরিটেজ ষাটগম্বুজ মসজিদ এবং হযরত খানহাজান আলীর (র.) মাজারসহ তার স্থাপত্যসমূহ দেখতে ভিড় করছেন হাজার হাজার পর্যটক। দেশী-বিদেশী এসব পর্যটকদের ভিড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয় বাগেরহাট শহরতলীর বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ ও খানজাহান আলীর মাজার এলাকা। ঈদের ছুটি শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই এই দুটি স্পটসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবন রিসোর্ট, শহরের দড়াটানা নদীর পাড়ে অবস্থিত পৌর পার্ক ও চন্দ্রমহলও ভিড় করে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা। এসব এলাকায় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠায় হাজার হাজর দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড় সামল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। . নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, ঈদের দিন বিকেল থেকে শুরু করে সোমবার পর্যন্ত নওগাঁ শহরের ‘আব্দুল জলিল শিশু পার্ক’সহ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিনোদন পিপাসুদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। হাজার হাজার শিশু কিশোর, নারী ও পুরুষের উৎসবমুখর পদচারণায় মুখোরিত হয়ে ওঠে স্থানগুলো। নওগাঁ শহরের আব্দুল জলিল শিশু পার্ক, বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ধামইরহাটের আলতাদীঘি শালবন জাতীয় উদ্যান, পতœীতলার ঐতিহাসিক দিবরদীঘি, মান্দার ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদ এবং আত্রাই উপজেলার পতিসর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারী বাড়ি এলাকা উল্লেখযোগ্য। নওগাঁ জেলা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। আবাদ উদ্বৃত্ত এই জেলা ধানের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে মানুষের বিনোদনের জন্য তেমন কোন জায়গা নেই। শহরের কেন্দ্র বিন্দুতে পুরনো জেলা পরিষদের একটি ছোট পার্ক থাকলেও পার্কের মাঝখানে একটি পুকুর আর চারপাশে হাঁটার জন্য রাস্তা ছাড়া এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য তেমন কিছু নাই। . কলাপাড়া নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, কুয়াকাটা এখন হাজারো পর্যটকের পদভারে মুখরিত। উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের উন্মাদনায় মত্ত হয়ে বর্ষার কুয়াকাটা উপভোগ করছেন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সী মানুষ। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ যেন বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। আর পর্যটকের আগমনে ঈদের আগে হতাশ হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের মরা মনে যেন বান ডেকেছে। তারাও ব্যবসায়িক লাভের ধারায় ফিরেছেন। এখন কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্টের এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পর্যটকের সাগর দাপানো উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয়ে আছে। সোমবার সকাল থেকে সাগরে নামা হাজারো পর্যটক দুপুর পর্যন্ত উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে কখনও মিতালি করছেন। আবার কখনও ঢেউয়ের তা-বের সঙ্গে হাঙ্গামা করছেন। যেন এক অচেনা সাগরকে উপভোগ করছেন আগতরা।
×