মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ এবারও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ-উল- ফিতরের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এতে দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি মানুষ এ মাঠে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ১৯১তম জামাতে ইমামতি করেন মুফতি আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। এদিকে ঈদ জামাতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোর থেকে মুসল্লিরা দলে দলে আসতে থাকেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মুসল্লির সংখ্যা। সকাল ৯টা নাগাদ বিস্তীর্ণ শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। তখনও শোলাকিয়ার পথে হাজারো মানুষের ঢল। শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঈদগাহমুখী সকল সড়ক চলে যায় মুসল্লিদের দখলে। কয়েক ঘণ্টার জন্য এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
জামাত শুরুর আগেই সাত একর আয়তনের বিশাল ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড়, নবনির্মিত শোলাকিয়া সেতু ও বাড়ির ছাদে জায়গা করে নিয়ে জামাতে শরিক হন। ঈদগাহের রীতি অনুযায়ী জামাত শুরুর ১৫ মিনিট, ৫ মিনিট ও সবশেষ এক মিনিট আগে বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি জানানো হয়। দূরের মুসল্লিদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে ছেড়ে আসে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন। নানা কষ্ট আর বিড়ম্বনা স্বীকার করেও দেশের বড় ঈদ জামাতে শরিক হতে পারায় মুসল্লিদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।
নামাজ শেষে ইমাম বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এ সময় কয়েক লাখ মুসল্লির উচ্চকিত হাত আর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার আমিন, আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ঈদগাহ এলাকা। জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম এ আফজল, পিপি শাহ আজিজুল হক, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, এডিসি (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল, সদরের ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাসউদসহ বিশিষ্টজনেরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রুতির কারণে ঈদের কয়েক দিন পূর্ব থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারা দেশের বিভিন্ন স্থান তথা দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে।
উল্লেখ্য, ১৮২৮ সালে ঈদের জামাতে এখানে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত। ঈশাখাঁর ১৬ তম বংশধর দেওয়ান মান্নানদাদ খান ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ করেন। এরও প্রায় দু’শ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
.
দিনাজপুর
স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের ঈদ জামাতে এ বছর ৬ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন মাঠটির তত্ত্বাবধায়করা। তাদের দাবি, এই ঈদ জামাতটিই দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত। জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপিও এ দাবি করেছেন। দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ১৬ জুন সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে এই বিশাল ঈদ জামাতটি অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সামশুল আলম কাশেমী। বৃহৎ এই ঈদের জামাতে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, পুলিশ সুপার হামিদুল আলমসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা অংশ নেন। দিনাজপুর ছাড়াও বগুড়া, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলাসহ আশেপাশের জেলার মুসল্লিরাও এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি আশেপাশের ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা। বড় এই ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়ে মুসল্লিদের যাতে করে কোন ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয় সে জন্য অস্থায়ী ওজুখানা, পানি সরবরাহ ও পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়। জঙ্গী হামলাসহ সব ধরনের নাশকতা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ সব ধরনের আইন-শৃৃঙ্খলা বাহিনী এ ঈদগাহের নিরাপত্তায় মোতায়েন ছিল। একইসঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারিসহ সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়। প্রায় ২২ একরের বিশাল এই মাঠে যেন গত বছরের তুলনায় আরও বেশি মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে, তারই প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি মতবিনিময় সভাও করেন জেলা প্রশাসক ড.আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: