ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ মুহূর্তে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ছুটছেন সবাই

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১৫ জুন ২০১৮

  শেষ মুহূর্তে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ছুটছেন সবাই

এম শাহজাহান ॥ ঈদ উৎসব উদযাপনে শেষ মুহূর্তে ভোক্তারা চিনি দুধ সেমাই পোলাওর চাল মাংস ও মসলা কিনতে ছুটছেন ভোগ্যপণ্যের বাজারে। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বাজারে হরেক রকম সেমাই পাওয়া যাচ্ছে। মানভেদে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ১০০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেমাই। সেমাই রান্নার প্রধান উপকরণ তরল দুধের চাহিদা বেড়েছে অন্য সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ। কোন কোন বাজারে ৬৫ টাকা লিটারের দুধ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। চাহিদা বাড়ায় প্রতিকেজি গরুর মাংসে ৫০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। এছাড়া চিনি, ভোজ্যতেল, পোলাওর চাল ও ঘি’য়ের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ঈদের কেনাকটা করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর ভোগ্যপণ্যের বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে লাইন ধরে গরুর মাংস কিনতে দেখা যায়। অতিরিক্ত চাহিদা বাড়ায় প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১৬৫-১৭০ টাকায়। মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া মসলা জাতীয় পণ্যের কেনাকাটা বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি চিনি ৫৬-৬২, মিল্কভিটা ও আড়ং দুধের লিটার বাজারভেদে ৬৫-৮০, ভোজ্যতেল ৮৫-৮৮ টাকা প্রতিলিটার, পোলাওর চাল প্যাকেট ৯৫-১০০, খোলা ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। মসলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজ ৩০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তরল দুধের দাম বাড়লেও প্যাকেটকৃত গুঁড়া দুধের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লারমিনি স্ট্রিটের বাসিন্দা শাহ আলম সরকার বাজার ঈদের বাজার করতে এসেছেন কাপ্তান বাজারে। তিনি জানালেন, দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। সারা মাস রোজার পরে খুশির ঈদ পালন করতে বিশেষ খাবার-দাবারের পণ্যসামগ্রী কেনাকাটা শুরু হয়েছে। ঈদের প্রধান অনুসর্গ দুই আইটিমের সেমাই কেনা হয়েছে। গরু, খাসি ও মুরগির মাংস কেনা হলো। এছাড়া সুগন্ধি চাল, চিনি ও মসলা তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে ঈদ উৎসব পালনে বড় বাজার করা হয়েছে। তিনি বলেন, চাহিদা বাড়ায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে কোন কোন পণ্যসামগ্রীর বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে মুরগি ও তরল দুধের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংসের দাম তো আগেই বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব পণ্যের দাম বাড়ার ফলে সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়বে। সাধারণ মানুষ যাতে খুশি মনে ঈদ করতে পারেন, সেজন্য এসব পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সবচেয়ে বেশি তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। এদিকে রাতের আঁধারে শত শত মহিষ কাটার পর খুব ভোরে তা গরুর মাংস হিসেবে দোকানগুলোতে উঠে যাচ্ছে। রাজধানীর কাপ্তান বাজার, কাওরান বাজার, মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ ছোটবড় সব বাজারগুলোতে এখন মহিষের মাংস গরু হিসেবে উচ্চমূলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঈদ বাজার ধরতে মঙ্গলবার রাত থেকে শত শত মহিষ কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন রাজধানীতে শত শত মণ মাংস বিক্রি হচ্ছে। এই সুযোগে মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মহিষকে উচ্চমূল্যে গরুর মাংস হিসেবে বিক্রি করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের মাংস বিক্রেতা রশিদ জানালেন, ঈদ সামনে রেখে মাংসের দাম বেড়ে গেছে। গরুর দাম বেশি হওয়ায় মাংসের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা হলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়বেন। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মহিষ জবাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানালেন, এই বাজারে কোন মহিষ কাটা হয় না। তবে কাপ্তান বাজারের মাংস ক্রেতারা বলছেন, মাংসর রং বলে দিচ্ছে এটা মহিষের। তারপরও তারা স্বীকার করবে না। তিনি বলেন, মহিষের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ নয়, তবে দাম কম। বাজার মনিটরিং কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এসব মাংস চিহ্নিত করে তা কম দামে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামের কোথাও মাংস বিক্রি হচ্ছে না। ৫৫০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস সংগ্রহ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। খাসির মাংস মানভেদে ৭০০-৮৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানি মাঝারি সাইজের মুরগির হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়। একটু বড় হলে তা হাজার টাকা দাম ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে। কালেভদ্রে দেশী মুরগির দেখা মিলছে বাজারগুলোতে। দু’চারটি পাওয়া গেলেও উচ্চমূলে বিক্রি করা হচ্ছে। একজোড়া দেশী মোরগ বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকায়।
×