ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ আর গো-ও-ও-ও-ল, কোনটি ছেড়ে কোনটি...!

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৫ জুন ২০১৮

 ঈদ আর গো-ও-ও-ও-ল,  কোনটি ছেড়ে  কোনটি...!

সমুদ্র হক ॥ কোনটি ছেড়ে কোনটি! ঈদ দুয়ারে। ফুটবলের ফু-ড়-ড়-ড়.... বাঁশি বেজেছে..’। গো-ও-ও-ও-ল..... কণ্ঠের শক্তিতে মহানন্দে এমন টানা চিৎকার শুধু ফুটবলেই আছে। মান্না দের কণ্ঠে গান আছে- ‘সব খেলার সেরা বাঙালীর খেলা ফুটবল....’। বিশ্বকাপ ফুটবলের আনন্দের এই ঝর্না ধারায় ঈদের আনন্দ এবার একাকার হয়ে গিয়েছে। তরুণ তরুণীরা যতটা ভক্ত ক্রিকেটের ততটাই ভক্ত ফুটবলের। বাড়ি ঘরে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, পর্তুগাল ও স্পেনের পতাকা ওড়ানো তার প্রমাণ। বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে নেই তবে ফুটবলের ভক্তরা তো আছে। ফুটবল জ্বরের (ফিভার) যে কাঁপুনি শুরু হয়েছে তা যে ঈদের কাঁপুনিতে যোগ হবে তা টের পাওয়া গেল বৃহস্পতিবারেই। প্রথম দিনের রাশিয়া-সৌদি আরবের খেলার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও খেলা দেখার আমেজ আছে। এর মধ্যেই চলছে ঈদের পড়ন্ত বেলার কেনাকাটায়। মজার বিষয় হলো, তরুণ-তরুণীরা ঈদের পাঞ্জাবি ও পোশাকে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি ও ফ্রান্সের পতাকার সঙ্গে মিল রেখে কেনার চেষ্টা করছে। কয়েক দোকানি বেশ হতাশার সঙ্গে বললেন, আগে জানলে ওইসব দেশের পতাকার সঙ্গে ম্যাচ করে এমন পোশাক বেশি করে আনা যেত। এখন শেষের বেলায় এই ধরনের পোশাকের চাহিদা বেড়ে গেল। আফসোস করা ছাড়া আর কী উপায়। তবে দোকানিরাও বুঝতে পারছে ঈদের সঙ্গে ফুটবল ক্রেজ বাড়তি প্রাধান্য পেয়েছে। ঈদের দিন কে কোথায় বেড়াতে যাবে তার চেয়ে বড় প্রোগ্রাম করা শুরু হয়েছে, ঈদের দিনে টিভি সেটের সামনে থেকে বোধ হয় সহজে উঠা যাবে না। কয়েক তরুণ বলল, ঈদের দিন বিকেল ৪টায় আছে ফ্রান্সের খেলা, সাতটায় আছে আর্জেন্টিনার খেলা। ঈদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখার বুঝি ফুরসত পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ঈদের জন্য যারা নাটক সঙ্গীতানুষ্ঠান ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানিয়েছেন তারা এবার কিছুটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যেই আছেন। দর্শকরা খেলা দেখবে না নাটক দেখবে। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ খবর করে জানা গেল, এবার বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ঈদের সময় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময়সূচী সামনে রেখে চাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। অনেক অনুষ্ঠান নির্মাতারাও বিপাকে পড়েছেন। যদি দর্শক নাই দেখল তাহলে লাভটি কি হলো! এমন শঙ্কা অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যেও। এদিকে ঈদের কেনাকাটার একেবারে শেষের বেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ‘কিছু বাদ পড়লো কিনা’ তা মেলাবার পালাও শুরু হয়েছে। সন্তান ও নাতি নাতনীদের ভাবনা এক, বাড়ির কর্তার ভাবনা এক, বাড়ির গৃহিণীর ভাবনা এক, আবার কর্তা গিন্নীর ভাবনা আরেক। কে কতভাবে অতিথি ও আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করবে তার ফিরিস্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানেও ঢুকে পড়েছে ফুটবল। অতিথি ও আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে ফুটবল খেলা দেখার আনন্দই আলাদা। ঈদের আমেজে ফুটবলের আনন্দ। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে স্বজনরা রওনা দিয়ে আপন গৃহে প্রবেশ করেছে। এখানেও ফুটবল। নিজ গৃহের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বলা শুরু করেছেন, যাদের সিরিয়াল দেখার রোগ আছে তারা টিভি সেটের সামনে থেকে সরে থাকবে। আগে ফুটবল তারপর সিরিয়াল। যাদের সিরিয়াল প্রীতি আছে তারা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার চেষ্টা করছে। ফুটবল ক্রেজের দাপটে তাও বুঝি সম্ভব হবে না। কারণ একবার যদি চিৎকার করে গো-ও-ও-ও-ল শব্দ উচ্চারিত হয় তাহলে শব্দ দূষণের পাকে পড়ে সিরিয়ালের তালগোল পাকিয়ে যাবে। ঈদের আনন্দে এমন আনন্দও কম নয়।
×