ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

ফুটপাথ থেকে শপিংমল সর্বত্র কেনাকাটায় রাজধানীজুড়ে জনজট

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১৫ জুন ২০১৮

  ফুটপাথ থেকে শপিংমল সর্বত্র কেনাকাটায় রাজধানীজুড়ে জনজট

রহিম শেখ ॥ ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি এবার চাঁদ রাত ঘিরে। ওই রাতের জন্য অনেক ব্যবসায়ী সারা মাস অপেক্ষায় থাকেন। অনেকেই কেনাকাটা করেন ঈদের চাঁদ দেখার পর। আবার অনেকেই সারারাত মার্কেট, বিপণিবিতান, শপিংমল আর ফুটপাথ ঘুরে ঈদের কেনাকাটা করেন। এই সময়ে বিশেষ ছাড় কিংবা স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা চলেছে রাজধানীজুড়ে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমলে যাওয়া কোন মানুষকেই খালি হাতে ফিরতে দেখা যায়নি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে সারারাতই তাদের মার্কেট খোলা থাকবে। গত কয়েক বছরের বেচাকেনার হিসাব করলে দেখা যায়, চাঁদ রাতে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা কেনাকাটা করে থাকেন। জানা গেছে, এবার ঈদের ছুটি কম হওয়ায় শেষ মুহূর্তে বাড়ি ছুটেছেন নগরবাসী। আপনজনের সঙ্গে উৎসব পালন করতে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষজন। যারা এখন নগরীতে অবস্থান করছেন তারাই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারছেন। যারা ঢাকায় ঈদ করবেন তাদের জন্য চাঁদ রাতের কেনাকাটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছে চাঁদ রাতে ঈদবাজার করা বিশেষ রীতিতে পরিণত হয়েছে। তারা চাঁদ রাতে চাহিদা মতো কেনাকাটা করে থাকেন। তাদের কাছে দরদাম কোন বিষয় নয়। পছন্দ হলেই তার ঠিকানা সোজা প্যাকেটে। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের হৃদি ফ্যাশনের ম্যানেজার আব্দুস সালাম জনকণ্ঠকে বলেন, চাঁদ রাত মানেই অন্য রকম আনন্দ। ওই রাতে বেচাকেনা হয় সবচেয়ে বেশি। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে প্রতিটি দোকানদারকে হিমশিম খেতে হয়। কেনাকাটা চলে ভোররাত পর্যন্ত। বুধবার রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, এ্যালিফ্যান্ট রোড, গাজী ভবন, মৌচাক মার্কেট, কর্ণফুলী শপিং কমপ্লেক্স, বেইলি রোড এলাকা, আনারকলি মার্কেট, ফরচুন শপিংমল ও পলওয়েল মার্কেটে বিক্রেতাদেরও ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। দিনভর ছিল ক্রেতার ভিড়। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরায় সব ধরনের মার্কেটে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড়। আজ শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে এসব মার্কেটের দোকানপাট সারারাত খোলা থাকবে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এবার রোজার মাঝামাঝি থেকে বেচাবিক্রি ভাল হচ্ছে। শেষ মুুহূর্তে নারী এবং শিশুদের পোশাকের কাটতি বেশি ছিল। এদিন দুপুরের পর থেকে পুরো এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন দোকানে বেশিরভাগ ক্রেতাকে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি কেনার জন্য। নিউমার্কেট এলাকায় ছেলেদের শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট, জুতা, কসমেটিকস ও গহনা এবং ব্যাগ ও ঈদ কার্ড, ঈদ গিফট সামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। এদিন সকাল থেকে গাউছিয়া মার্কেটে ছিল নারী ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার চাপে গুলিস্তান, ফার্মগেট, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকা, ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাথ ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় জনারণ্য ও যানজট দুই-ই সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। এসব এলাকায় সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি বেচাবিক্রি চলে সমানতালে। ফুটপাথগুলোতেও অনেকেই কেনাকাটা করেছেন এটা-সেটা দেখে শুনে। বিক্রেতারা বলেছেন, এখন আর দরদামের সময় নেই। সামান্য লাভে তারা ছেড়ে দিচ্ছেন সব ধরনের পণ্য। দোকানিরা বলেছেন, শেষ বাজারে এখন কিছুটা সুলভ মূল্যের পণ্যের বিক্রি চলছে বেশি। ফুটপাথ থেকে শুরু করে মধ্যম শ্রেণীর মার্কেট, অভিজাত মার্কেট ও শপিংমলে সবখানেই ক্রেতা। মানুষ কেবল কিনছে। চূড়ান্ত পর্বের কেনাকাটা করে লঞ্চ-ট্রেন-বাস ধরার তাগিদ থেকে ক্রেতারা আসছেন মার্কেটগুলোতে। মিরপুর-১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বর শাহ আলী মার্কেট পর্যন্ত গড়ে ওঠা শতাধিক মৌসুমি মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও দম ফেলার ফুরসত ছিল না। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এসব মৌসুমি দোকান। এছাড়া এ এলাকার বাংলার মেলা, তাঁত, গ্রামীণমেলা, অন্যমেলা, গ্রামীণ কালেকশন, গ্রামীণ বাজার, গ্রামীণ নকশা, অন্য আলো, বাংলার চোখসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে প্রচুর বৈচিত্র্যের শাড়ি, থ্রি-পিস, ছোটদের পোশাক, পাঞ্জাবি বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ড, ভাসাভি, নাবিলা শপিং কমপ্লেক্স, উত্তরা এলাকার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, রাজউক সেন্টার, নর্থ টাওয়ার ও মাসকট প্লাজা, আরএকে টাওয়ারেও চাঁদ রাতের প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, মিরপুর-১০, গুলিস্তান, নগর ভবন এলাকার ফুটপাথ ঘুরে দেখা গেছে, রকমারি পোশাক, জুতা, টুপি, আতর থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যার পসরা সাজিয়ে বসেনি ফুটপাথের দোকানিরা। বাদ পড়েনি ঘর সাজানোর পণ্য, বাচ্চাদের খেলনা, পারফিউম, রূপসজ্জার সামগ্রী। হকারদের কেউ কেউ ২শ’, ৩শ’, ৫শ’, আবার কেউ ‘দেইখ্যা লন দুইশ’, ‘বাইছ্যা লন দুইশ’, ‘এক দাম দুইশ’, ‘যেইটা নিবেন দুইশ’ টাকা এমন সুর তুলে খরিদ্দার ডাকছেন। পণ্য বিক্রিতে হকারদের হাঁকডাকে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারছেন ক্রেতারা। শুধু সড়কের দু’পাশই নয়, রাজধানীর ফুটওভার ব্রিজের উপরেও বসেছে অস্থায়ী দোকানপাট। এদিকে ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট এবং মসজিদের দক্ষিণ গেট ও জিপিওসংলগ্ন ফুটপাথের রাস্তাসংলগ্ন ফুটপাথের প্রায় শতাধিক দোকানে টুপি, আতর, সুরমা, তসবিহ, জায়নামাজ, মেসওয়াক ও ধর্মীয় বইপুস্তক বিক্রি হচ্ছে। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামাজের আগমুহূর্ত পর্যন্ত। এছাড়া চাঁদ রাত ঘিরে নগরীর বিউটি পার্লার ও সেলুনগুলো নতুন সাজে সেজেছে। রূপ সচেতন ও সৌন্দর্যপিপাসু তরুণী ও মহিলারা ছুটে যাচ্ছেন বিউটি পার্লারগুলোতে। স্পা, ফেসিয়াল, চুলের কাট, চুলের রং ও ভুরু প্লাক করতে ব্যস্ত বিউটিশিয়ানরা। বিউটিশিয়ানরা বলছেন, ঈদের চাঁদ রাতেই তাদের কাজ সবচেয়ে বেশি হয়। বিশেষ করে ফেসিয়াল, স্পা ও ভুরু প্লাক করতে মহিলারা চাঁদ রাতেই বিউটি পার্লারে আসেন। এজন্য চাঁদ রাতে সারারাত কাজ করার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। রাজধানীর পারসোনা, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড, গ্লামার টাচ, রূপকথা, গ্লোরী, শাহনাজ, গ্লামার ওয়ার্ল্ডসহ অধিকাংশ বিউটি পার্লারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ সিরিয়ালে সেবাগ্রহীতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রয়েছেন। সেখানে কর্মীদের দম ফেলার সময় নেই। তরুণী, মধ্যবয়সীদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত চলছে পরিচর্যা। ছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহিণী পর্যন্ত নানা বয়সী নারী চেহারার সঙ্গে মানানসই নিত্যনতুন ডিজাইনে চুল কাটা, রং করা, ফেসিয়াল, রিবন্ডিং, হ্যান্ড এ্যান্ড ফুট কেয়ার, ব্লিচ, স্কিন পলিশ, মেহেদি রাঙানো এসব কাজে ব্যস্ত পার্লারগুলো। মেয়েদের সৌন্দর্যেও পাশাপাশি এখন ছেলেরাও সৌন্দর্যচর্চার জন্য বিভিন্ন পার্লারে যাচ্ছে। আর তাই ঈদ ঘিরে ছেলেদের পার্লারগুলোতেও এখন প্রচন্ড ভিড় লক্ষ করা যায়। হেয়ারকাট এবং সেভের সঙ্গে ফ্রি দেয়া হচ্ছে শ্যাম্পু ওয়াশ এবং ফেস ওয়াশ।
×