ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক ফাউন্ডেশন

পাহাড়ের চূড়ায় রোহিঙ্গা বসতিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, ক্যাম্পে পানিবাহিত রোগ

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৫ জুন ২০১৮

পাহাড়ের চূড়ায় রোহিঙ্গা বসতিগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, ক্যাম্পে পানিবাহিত রোগ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন পাহাড় ধসের ঘটনায় হতাহত হচ্ছে রোহিঙ্গারা। পাহাড়ের চূড়ায় বসতিগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে-চূড়ায় ঝুপড়ি করলেও পাহাড়ের পাদদেশে কিছু রোহিঙ্গা ঝুপড়ি তৈরি করতে পাহাড় কেটেছে। এতে দুর্বল হয়ে পড়েছে ওই পাহাড়ের প্রাকৃতিক ফাউন্ডেশন। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নিচে পড়ার সময় পাদদেশের কর্তন করা মাটিও নিয়ে যাচ্ছে। উখিয়ার জামতলী ও কুতুপালং ক্যাম্পে গত তিন দিনে ৮জন হতাহত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, টানা চার দিনের ভারি বর্ষণে উখিয়া ও টেকনাফের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পাহাড়ধস ঘটনা বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে অন্য রোহিঙ্গাদেরও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেয়া হবে। অতি বৃষ্টির কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রাস্তাগুলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে যাওয়া মুশকিল। বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের তাহের মাঝি জানান, ওই ক্যাম্পের অধিকাংশ ঝুপড়িঘর পাহাড় কেটেই তৈরি করা হয়েছে। যা বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বুঝতে পারছে রোহিঙ্গারা। তিনি বলেন, তারপরও পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আবাসস্থল তৈরির ওই সময় পাহাড়ের খাদে ও উপরে যে যেখানে পেরেছে, পাহাড় কেটে নিজেদের ঠাঁই করে নিয়েছে। অভিজ্ঞজনরা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের কারণে পরিবেশ প্রতিবেশের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হবার নয়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ আশ্রয় নিয়েছে পাহাড়ের চূড়ায়, কেউ পাদদেশে আবার কেউ একই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুপড়ি তৈরি করেছে। পাদদেশে ও মাঝখানে যারা আশ্রয় নিয়েছে, তারা জায়গা প্রশস্ত করতে পাহাড় কাটছে। যারা চূড়ায় রয়েছে, তারা উঠন তৈরি করতে পাহাড়ের চূড়া কেটে সমান করেছে। এতে বর্ষায় বৃষ্টির কাদা মাটিযুক্ত পানি নিচে গড়িয়ে পড়ছে। ফলে ফাটল ও ভাঙ্গছে রোহিঙ্গা বসতির পাহাড়। স্থানীয়রা বলেন, রোহিঙ্গারা পাহাড় কেটে যে হারে ঝুপড়ি তৈরি করেছে, এতে যে কোন মুহূর্তে পাহাড় ধসে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। রোহিঙ্গা নাগরিকদের অস্থায়ীভাবে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাদের অবশ্যই সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার উখিয়ার সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো উপহার সামগ্রী বিতরণকালে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে গত চার দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাতে ক্যাম্পগুলোতে টয়লেট ও খাবার পানির সঙ্কটে পড়েছে রোহিঙ্গারা। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। ঢলের সঙ্গে পাহাড় থেকে ময়লা কাদা-মাটি মিশ্রিত পানি দ্রুতগতিতে নিচে নেমে এসে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে বহু রোহিঙ্গা বসতি। পাহাড়ী ঢলের পানি, কাদামাটি ও টয়লেটের ময়লা একসঙ্গে মিশে ঢালু স্থান বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসার কারণে নিচে থাকা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসবাসের স্থানগুলোও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় বালুর বস্তা ও প্রতিরোধক দেয়াল ধসেপড়া বিভিন্ন উদ্ভিদ ও গাছের সঙ্গে নেমে আসা কাদা-ময়লা মেশা পানি ঠেকাতে পারেনি। এমনিতেই বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এলাকা কক্সবাজারে বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেশি। বর্ষা শুরু হওয়ার পর পানিবাহিত রোগসমূহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে এনজিওর একজন কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে ডায়রিয়াসহ তীব্রভাবে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
×