ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ॥ আইজিপি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ জুন ২০১৮

 ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ॥ আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ মিলে আমরা এনফোর্স করার চেষ্টা করছি। ঈদ উপলক্ষে যারা রাত্রিকালীন যাত্রা করবেন তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হবে। ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাবার পথে আমরা পুলিশ মোতায়েন করেছি, বিশেষ আয়োজন করেছি, অতিরিক্ত জনবল দিয়েছি। সমন্বিতভাবে আমাদের জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রিজার্ভ পুলিশ সবাই মিলে এখানে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে যাতে অপর সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করতে পারি। এর বাইরে আমাদের ওয়াচ টাওয়ার আছে, চেকপোস্ট আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের গ্রামে ফিরতে পারবে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে মহাসড়কের সবটুকু অংশ আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে গাড়ি দ্রুত গতিতে যেতে পারবে। সব মিলিয়ে আমরা মনে করছি আমরা যে সব ব্যবস্থা নিয়েছি, তাতে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের গ্রামে ফিরে যেতে পারবে। এই ঈদটা সঠিকভাবে করতে পারবে বলে আমরা মনে করছি। তিনি বলেন, নিরাপত্তার সাধারণ টিপসগুলো মেনে চললে ঈদে সতর্কভাবে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। নিজের নিরাপত্তাটা আগে আপনাকে নিজে দেখতে হবে। যদি আপনি নিজেই নিজেকে অবহেলা করেন তাহলে আরেকজনের সাহায্য আপনি পাবেন কিভাবে? ঈদে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির বিরুদ্ধেও আইনশৃখলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপরতা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু গ্যাং ধরা পড়েছে। তিনি যাত্রীদের রাস্তাঘাটে অপরিচিত কারো কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বুধবার দুপুরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়ে স্থাপিত পুলিশের কন্ট্রোলরুম উদ্বোধন করতে এসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর-রশিদ, হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলামসহ প্রমুখ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ঈদ যাত্রায় এখন সবাই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নরমাল সময়ে রাস্তায় যেটুকু গাড়ি থাকে এখন তার চাইতে অনেক বেশি গাড়ি রয়েছে। রাস্তার একটা ধারণ ক্ষমতা থাকে। ধারণ ক্ষমতা যখন অতিরিক্ত হয়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রেসার থাকবেই। এছাড়াও শুধুমাত্র রাস্তায় ট্রাফিকিংটা একমাত্র পুলিশের ওপরে নির্ভর করে না। এনফোর্সমেন্টের ওপর নির্ভর করে না। আরও অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। তিনি বলেন, ফিটনেস বিহীন যানবাহনের কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। তবে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে যাতে যানজটের সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। আইজিপি আরও বলেন, আমাদের এখানে হাইওয়ে আছে, জেলা পুলিশ আছে। আমরা নরমালি হাইওয়েগুলোতে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মিলে এনফোর্স করার চেষ্টা করছি। ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ প্রত্যেকটা হাইওয়েতে স্পেশাল এরেজমেন্ট করেছি। আমাদের নরমাল জনবলের অতিরিক্ত জনবল দিয়েছি এবং সমন্বিতভাবে আমরা জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেঞ্জের রিজার্ভ ফোর্স সবাই মিলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরে আইজিপি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ি ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় যাত্রী পরিবহন ও যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পুলিশের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। মহাসড়কে সিসিটিভি প্রকল্পের উদ্বোধন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার থেকে জানান, আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি এবং আমরা সব সময় মনে করি আপনাদের নিরাপদ রাখা আমাদের প্রধান এবং একমাত্র দায়িত্ব। আপনারা যদি নিরাপদ বোধ করেন, আপানারা যদি শান্তিতে থাকেন তাহলে দেশ নিরাপদে এবং শান্তিতে থাকবে। সাভার মডেল থানা কম্পাউন্ডে অবস্থিত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার হতে নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় স্থাপিত সিসিটিভি প্রকল্প ও সেন্ট্রাল মনিটরিং এ্যান্ড কমান্ড সেন্টারের উদ্বোধন উপলক্ষে স্থানীয় সুধীসমাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার দুপুরে এ সব মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা জেলা পুলিশ। আইজিপি বলেন, এ সিসিটিভি ব্যবস্থা এই ঈদে যানজট নিয়ন্ত্রণে অনেক কাজে আসবে। যারা সব সময় আইন মান্য করেন, তাদের জন্য এটা নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। এটা তাদের জন্যই ভীতিকর যারা আইন অমান্য করেন। যারা আইন অমান্য করেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্যই এই প্রচেষ্টা। এ প্রকল্পটি শুধুমাত্র এটা মনিটরিং সিস্টেম নয়, এটি সপ্তাহে সাত দিনই ২৪ ঘণ্টা তথ্য দিতে থাকবে। যেটা কোনভাবেই একজন মানুষকে দিয়ে করানো সম্ভব হয় না। পৃথিবীর বড় বড় উন্নত শহরগুলোতে অনেক পূর্বেই এ ধরনের প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে, যেটাকে স্মার্ট সিটি বলা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, চেষ্টা চলছে গোটা ঢাকা শহরকে এ ধরনের প্রকল্পের আওতায় আনার জন্য। ঢাকা জেলায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে যেটা শুরু করা হয়েছে তার জন্য তিনি উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আপনাদের নিরাপত্তা নয়, আপনাদের জীবনকে নিশ্চিত করা, আপনাদের শান্তি দেয়ার এটি একটি উদ্যোগ মাত্র। অধিবাসীগণ যেন নিরাপদে থাকতে পারেন, নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন এবং আমাদের যে পুলিশ বাহিনী আছে তার সক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার এটি একটি প্রকল্প। যদিও মাত্র ২২ কিলোমিটারের একটি পাইলট প্রকল্প, পরবর্তীতে এটা সমগ্র ঢাকা জেলা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিস্তৃত করা হবে।’ ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারী ও বেসরকারী প্রশসানের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×