ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটপাথের চাঁদাবাজদের টার্গেট ৩শ’ কোটি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ জুন ২০১৮

 ফুটপাথের চাঁদাবাজদের টার্গেট ৩শ’  কোটি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ফুটপাথগুলো ফের দখল হয়ে গেছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ফুটপাথ ততই সরগরম হয়ে উঠছে। পুলিশ ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও ফুটপাথ হকারমুক্ত হয়নি। ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ফুটপাথের চাঁদাবাজরা। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় এবার ৩শ’ কোটি টাকা চাঁদাবাজির টার্গেট নিয়ে রাজধানীজুড়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত ৭০ গ্রুপ। সংঘবদ্ধ এসব চাঁদাবাজ গ্রুপের মাঠপর্যায়ে টাকা আদায়ে তৎপর ৫ শতাধিক লাইনম্যান। এরা ক্ষমতাসীন দলের লেবাসে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একের পর এক ফুটপাথ দখল করে কোটি কোটি টাকা আদায় করছে। ঈদ চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে নেই মাঠপর্যায়ের পুলিশ-আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। ইতোমধ্যেই এককালীন টাকা নিয়ে ফুটপাথে দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়েছে চাঁদাবাজ চক্র। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে ফের ফুটপাথ দখলসহ চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাঝেমধ্যেই হকার উচ্ছেদ হলেও টাকার বিনিময়ে ফের একই স্থানে পসরা সাজাচ্ছেন হকাররা। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রমজানের শুরুতেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকার ফুটপাথ দখলে নিয়েছে চক্রটি। প্রতিটি এলাকায় দৈনিক চাঁদার হার বেড়েছে কয়েকগুণ। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ, সরকারী খাস জমি ও মালিকানা জমিতে মেলার নামে নতুন নতুন দোকান বসিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও অদ্যাবধি কোন সুফল পায়নি নগরবাসী। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। তবে পুলিশসহ যে কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে চাঁদাবাজদের ধরতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় গোয়েন্দা নজরদারিও চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের ফুটপাথ থেকে ৫ শতাধিক ব্যক্তি নিয়মিত চাঁদার টাকা তুলছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী-ফিটিংপার্টিসহ অর্ধশত ব্যক্তি। প্রতিটি এলাকায়ই পুলিশের নামেও তোলা হচ্ছে বখরা। ফুটপাথে আগে থেকে ব্যবসা করে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেছেন, রমজান শুরুর আগ থেকেই মৌসুমি হকারের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজরা তাদের ওপর চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। কয়েকটি এলাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চাঁদাবাজদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের জড়িয়ে পড়ছে চাঁদাবাজিতে। ফলে যথাযথ আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা াকা সত্ত্বেও ফুটপা দখলমুক্ত করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁদাবাজরা এলাকাভেদে ২ থেকে ৩শ’ দোকানের একটি অংশকে নাম দিয়েছে ‘ফুট’। চক্রাকারে ফুটের হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদার টাকা নিচ্ছে চাঁদাবাজ গ্রুপের নিয়োজিত লাইনম্যানরা। তাদের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছেন প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার মনোনীত সর্দার। লাইনম্যানের উত্তোলিত টাকার সিংহভাগই যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মস্তান বাহিনীর পকেটে। আর সর্দারদের কাছে পৌঁছানো টাকার ৭৫ শতাংশ পাচ্ছেন অসাধু ওই পুলিশ-আনসার সদস্যরা। দোকানগুলোয় অবৈধভাবে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার সঙ্গে জড়িত বিদ্যুত বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটেও যাচ্ছে লাইনম্যান ও সর্দারের উত্তোলিত টাকার একটি অংশ। রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইনম্যানদের দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা পরিশোধ করে দোকান চালাতে হয়। চাঁদার রেট কম হলেই উচ্ছেদসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়া হয়। ভেঙ্গে দেয়া হয় দোকানপাট। জানা গেছে, শুধু ফুটপাথের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে এমন গডফাদার গুলিস্তানে ৪, মতিঝিলে ৩, সদরঘাটে ৩, নিউ মার্কেটে ৫, ফার্মগেটে ৩, মিরপুর-১ নম্বরে ২, মিরপুর-১০ নম্বরে ২, উত্তরায় ২, বাড্ডায় ২, কুড়িলে ২, কামরাঙ্গীরচরে ১৯, লালবাগ বেড়িবাঁধে ৭, বংশাল-কোতোয়ালিতে ৬ জন রয়েছে। অন্যরা রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিদিন ফুটপাথ থেকে চাঁদা তুলছে ৭০টি চাঁদাবাজ গ্রুপের নিয়োজিত ৫ শতাধিক লাইনম্যান। ঢাকা গভঃ নিউ মার্কেট সংলগ্ন ঢাকা নিউ সুপার (দক্ষিণ) মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গভঃ ঢাকা নিউ মার্কেটের ৩ নং গেট সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটের দোতলায় রয়েছে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) বণিক সমিতির অফিস। এর সামনেই মার্কেটে আলোবাতাস প্রবেশে গ্রিলঘেরা খোলা জায়গা। কিন্তু সমিতির কতিপয় অসাদু কর্মকর্তা মার্কেটের সব প্রবেশপথ, খোলা জায়গা ও সিঁড়িকোঠাসহ সবমিলিয়ে দেড়শতাধিক ফুটপাথের দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়েছে। অফেরতযোগ্য এককালীন ঘোষণায় দোকানপ্রতি নগদ ২ লাখ টাকা আদায়সহ প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নিয়মিত ভাড়া তুলছে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সাগর ও সমিতির প্রচার সম্পাদক ফরমান মোল্লা। ওই নেতারা মার্কেটের বিভিন্ন স্পটে গাড়িপার্কিং থেকেও ডিএসসিসি’র বিধি উপেক্ষা করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রমজান শুরুর আগেই সমিতির নেতারা যৌথভাবে মার্কেটের নিচতলায় মাঝামাঝি খোলা জায়গার চারপাশে নতুন করে আরও ৮-১০টি দোকান বসিয়ে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দিয়েছে। ফলে মার্কেটে আলোবাতাস প্রবেশের শেষপথটিও বন্ধ হতে চলেছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে মার্কেটের পরিবেশ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ডিএসসিসির অনুমোদন ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের ওই চত্বরে গভীর নলকূপ বসিয়ে বাইরে পানি বিক্রির করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সমিতির কতিপয় নেতা এমন অভিযোগ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। এছাড়া মার্কেট সংস্কারের নামে প্রতিটি দোকান মালিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছে সমিতির নেতারা। চাঁদার টাকা না দিলে দোকানে তালা লাগানোর হুমকি দেয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমিতির কর্মকা- নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে ধানম-ি হকার্স মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, মিরপুর রোডের ধানম-ি ও নিউ মার্কেট অংশে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কিছু ক্যাডার ফুটপাথসহ মার্কেটের ফাঁকা জায়গায় দোকান বসিয়ে নিয়মিত চাঁদা তোলে। ছাত্রদের উৎপাত সারাবছর তো থাকেই, তবুও ঈদ এলে ছাত্রধারী এসব ক্যাডার আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে লাভ নেই। বরং হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হতে হয়। গুলিস্তান হকার্স, গাউছিয়া, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, খিলগাঁও তালতলা, মিরপুর শাহ আলী, ১ নম্বর, গুলশান-১ ও ২, মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার, মুক্তবাংলা, উত্তরা ও পুরান ঢাকার ফুটপাথ ব্যবসায়ীরাও একই রকম তথ্য জানান ফুটপাথের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা। এদিকে কামরাঙ্গীরচর রসুলপুর ব্রিজ মার্কেটের দুটি ব্যক্তিমালিকানা জমিতে অনুমোদন ছাড়াই জবরদখল করে ঈদ বাণিজ্য মেলার নামে প্রায় ৬০টি দোকান বসিয়ে ভাড়া দিয়েছে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়দানকারী মাউচ্ছা দেলু, জাবেদুল ইসলাম জাবেদ ওরফে সমিতি জাবেদ, মফিজ, খোকন, কামাল, অহিদুল, বাবু, হানিফ, সিদ্দিক, বাদশা, মঞ্জু, ফিরোজ, সুমন, মাসুদ, মামুন, মুসা, শাকিল, মনির ও সিরাজ তালুকদার। ইতোমধ্যেই দোকান প্রতি ৫ লাখ টাকা করে আদায় করেছে মৌসুমি এসব চাঁদাবাজ গ্রুপ। এদিকে লালবাগের নবাবগঞ্জ বেড়িবাঁধে মঙ্গলবার হলিডে মার্কেটের অন্তত ২ হাজার ফুট দোকান থেকে দোকানপ্রতি গড়ে আড়াই শ’ টাকা করে প্রতি সপ্তাহে ৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলেন শাসক দলের নেতা পরিচয়দানকারী হাফেজ সুমন, জাকির, শাহীন ওরফে অটোশাহীন, বারেক, সেলিম, বিপ্লব ও মোকলেস। এছাড়া চোরাই মোবাইল মার্কেট ও ভান্ডারি ফেরদৌসসহ কয়েকটি গ্যারেজ থেকে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহীন ফকির দৈনিক ৫শ’ টাকা হারে মাসিক ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণ করেন। একই স্পট থেকে ওসির নির্দেশে গ্যারেজ মালিককে আরও বাড়তি ৮ হাজার টাকা করে সিরাজ নামে কথিত বিতর্কিত এক নেতাকে দিতে হয় বলে জানিয়েছেন ভা-ারি ফেরদৌস। এছাড়া বংশাল ও কোতোয়ালিতে মেহেদীর নেতৃত্বে ফুটপাথের ৫ হাজার দোকান থেকে দৈনিক ১২০ টাকা হারে প্রতিদিন চাঁদা তুলছে লাইনম্যান মিরাজ, জসিম, আলম ও ইউনুস। চাঁদার ভাগ পাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা বজলু, হুমায়ুনসহ থানা-ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী কয়েক ব্যবসায়ী জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। খিলগাঁওয়ের জিসান, মিরপুরের শাহাদাত ও লিটু, কাওরানবাজারের আশিক, কল্যাণপুরের বিকাশ-প্রকাশ, বাড্ডার মেহেদী, মগবাজারের রনি, আদাবরের নবী, মোহাম্মদপুরের কালা মনির, শাহ আলীর গাজী সুমন, পল্লবীর মোক্তার, কাফরুলের শাহীন সিকদার, যাত্রাবাড়ীতে ইটালি নাসির, জুরাইনের কচির নাম ব্যবহার করছে চাঁদাবাজ চক্র। বাড্ডা এলাকায় ডালিম, রবিন, ভাগ্নে ফারুক, আরিফ, মান্নান, রমজান, দুলাল, মানিক, শিপলু, রায়হান, রুবেল, রিয়াদ, রামপুরায় কালা পলাশ ও মুরাদ, গুলশান-বনানীতে টিপু, মহাখালীতে অপু, মিলন ও জামাই মুকুল, সাততলা বস্তিতে মনির ও লম্বু সেলিম, খিলগাঁওয়ে খালেদ ও মানিক, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদে জাহাঙ্গীর ও সায়েম আলী, হাজারীবাগে বুলু, লিংকন, তপু, জনি, রফিক, বিল্লু ও মুন্না, কলাবাগানে নাজিম বাবু ও ইমন, মোহাম্মদপুরে গালকাটা মোশারফ, লম্বা মোশারফ, চিকা জসিম, আহম্মদ, সাজ্জাদ, মোহন, পাভেল, লোটন, চায়নিজ তানভীর, রবিন, আদিত, মীম, খলিল ও হাজী আক্কাস এবং শাহ আলীতে বল্টু রাসেল, মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরে কালাচান ও কিলার বুলবুল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফুটপাথ-সড়কে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মতিঝিল, পল্টন ও শাহবাগ ানায় ৭২ চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করেন ডিএসসিসি সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সামছুল আলম। মতিঝিল ানার মামলায় গত বছরের ১০ জুলাই দু’জনকে অব্যাহতি দিয়ে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দিয়েছে পুলিশ। ৪ আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলেও তারা সবাই এখন জামিনে। ওই মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলাম মোল্লা ফুটপাথে এখনও বহাল তবিয়তে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের পাশের মার্কেটে চাঁদা আদায় করছে তার সহযোগী শিবলু ও শাহজাহান মৃধা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বায়তুল মোকাররম জিপিও লিংক রোডে হলিডে মার্কেটে খোকন মজুমদার, আবুল হাসেম, মজিবর, পোটল, নসু, হারুন অর রশীদ ও তার সহযোগীরা, উত্তরগেট এলাকায় দুম্বা রহিম, সাজু চাঁদা তুলছে। শাপলা চত্বরে আরিফ চৌধুরী, পল্টনে দুলাল মিয়া ও তার সহযোগী, গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্স ও রাস্তায় আমিন মিয়া, সাহিদ ও লম্বা হারুন, জুতাপট্টিতে সালেক, গোলাপশাহ মাজারের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে ঘাউড়া বাবুল ও শাহীন টাকা তুলছে। ওসমানী উদ্যানের পূর্ব ও উত্তর অংশে লম্বা শাজাহান, গুলিস্তান খদ্দর মার্কেটের পশ্চিমে কাদের ও উত্তরে হান্নান, পূর্বে সালাম, আক্তার ও জাহাঙ্গীর, গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তায় লাইনম্যান সর্দার বাবুল, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের উত্তর পাশের রাস্তায় জজ মিয়া, পূর্ব পাশের রাস্তায় সেলিম মিয়া, মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে মোঃ আলী, আবদুল গফুর ও বাবুল ভুঁইয়া, শাহবাগে ফজর আলী, আকাশ, কালাম ও নুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ীতে সোনামিয়া, তোরাব আলী, মান্নান টাকা তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। জুরাইন-পোস্তগোলায় খায়রুল, সিরাজ তালুকদার ও গরু হানিফ, লালবাগে আবদুস সামাদ, চাঁনমিয়া ও ফিরোজ, মিরপুরে-১-এ ছোট জুয়েল, আলী, বাদশা ও মিজান, মিরপর-১১ এ আবদুল ওয়াদুদ, শফিক ও হানিফ, গুলশানে হাকিম আলী, কুড়িলে আবদুর রহীম ও নুরুল আমিন, এয়ারপোর্টে আকতার, মনির, ইব্রাহিম, জামাল ও বাবুল, উত্তরায় টিপু, নাসির ও হামিদ। গুলিস্তানের লাইনম্যান জজমিয়া জানান, এক হাজার টাকা তুললে তাকে দেয়া হয় ২শ’ টাকা। পুলিশ নেয় ৫শ’, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পান ৩শ’ টাকা। প্রতিরাতে থানার ক্যাশিয়ার এসে ভাগের টাকা নিয়ে যায়। আর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের টাকা পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে যারা চাঁদার টাকা গ্রহণ করেন তাদের কোন নেতাকর্মীর নাম প্রকাশে রাজি হননি তিনি। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, রাজধানীতে ১ লাখ ১০ হাজারের মতো হকার রয়েছে। ফুটপাথের দোকানের পজেশন ও পরিধি বুঝে প্রতিদিন দোকান প্রতি ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। রমজান শুরুর পর কয়েকদিনের মধ্যেই ধাপে ধাপে এ চাঁদার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০ রমজানের পর থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত চাঁদাবাজির এমন অরাজকতা চলবে। চাহিদার টাকা বুঝে পেয়ে চাঁদাবাজরা নানা কৌশলে প্রতিদিনই তাদের মনমতো মৌসুমি হকারও বসাচ্ছেন। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই বাধে বিপত্তি। এভাবে হকারদের কাছ থেকে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রগুলো কেবল রমজান মাসজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাতিয়ে নেবে অন্তত ৩শ’ কোটি টাকা। চাঁদাবাজ দমন করে এ টাকা যদি সরকার নিত, তাহলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতো। তিনি বলেন, পুলিশ কয়েক দফায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছিল। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা ফের চাঁদাবাজি শুরু করেছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন যদি প্রকৃত হকারদের কাছে ফুটপাথ ইজারা দিত তাহলে এমন অবস্থা হতো না। এতে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি হকাররাও শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে পারবেন। হকার্স ফেডারেশনের নেতা আবুল কাশেম জানান, রাস্তা দখল করে ফুটপাথ বসিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে বহুবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। মামলাও করা হয়েছে। কাজ হয়নি। উল্টো অভিযোগের বিষয় ফাঁস হলেই লাইনম্যানরা সন্ত্রাসী দিয়ে তাদের হকার উচ্ছেদ বা মালামাল লুট করত। বাধা দিলে মারধরের শিকারও হতে হয়। ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন চাইলে প্রকৃত হকারদের কাছে ফুটপাথ ইজারা দিতে পারে। এদিকে ডিএমপির (মিডিয়া) উপকমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের অব্যাহত অভিযানের কারণে ফুটপাথের চাঁদাবাজরা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। ঈদ সামনে রেখে কোথাও যেন চাঁদাবাজি না হয়, সে লক্ষ্যে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চাঁদাবাজি ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে টহল পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে ডিএসসিসির সহকারী সম্পত্তি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সামছুল আলম জানান, হকার পুনর্বাসন ও তাদের সমস্যার সমাধানে এরই মধ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে ফুটপাথে হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিল। ফুটপাথ-রাস্তায় পথচারীদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
×