ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছা ও আত্মীয় রক্তদাতার সংখ্যা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৪ জুন ২০১৮

 স্বেচ্ছা ও আত্মীয় রক্তদাতার সংখ্যা বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রক্ত দান একটি মহৎ সেবা। রক্তের প্রয়োজনে জীবাণুমুক্ত নিরাপদ রক্তই রোগীকে নতুন জীবন দিতে পারে। তবে রক্ত যেমন একদিকে জীবন রক্ষা করে, অন্যদিকে অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে এইডস, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-বি সিফিলিস, ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এ সব জটিল রোগ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে পেশাদার রক্তদাতা থেকে রক্ত গ্রহণে বিরত থাকা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে রক্ত গ্রহণ করা। দেশে স্বেচ্ছা রক্তদাতা এবং আত্মীয় রক্তদাতার হার বেড়েছে বলে দাবি করেছে সরকার। কিন্তু দেশের সব ক’টি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র সরকারী নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই রক্তগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, প্রতি চার মাস অন্তর একজন সুস্থ ব্যক্তি রক্ত দান করতে পারে। স্বেচ্ছায় রক্তদান সর্বোত্তম সেবা। স্বেচ্ছায় রক্তদান করলে বারডেমের পক্ষ থেকে একটি কোটপিন দেয়া হয়। আর দেয়া হয় ভল্যুন্টারি ডোনার কার্ড, যা রক্ত দানের ছয়মাস পর থেকে যেকোন রক্তের প্রয়োজনে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপনার প্রেরণকৃত ডোনারের জন্য সেবা প্রদানে বাধ্য থাকে। তিনি আরো বলেন, রক্তদানের আগে ডোনারদের অ্যালকোহল পান বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। রক্তদানের আধঘণ্টা পূর্বে চা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। খাবার গ্রহণ করে আসতে হবে। সুস্থ ব্যক্তি আদর্শ রক্তদাতা। ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, হাঁপানি, জ্বর, ইত্যাদি থাকলে রক্তদান থেকে বিরত থাকতে হবে। তিনি আরো জানান, রক্তদানের পর ডোনারকে তরল জাতীয় খাবার (যেমন জুস) গ্রহণ করা দরকার। প্রচুর (প্রায় তিন লিটার) পানি/পানীয় পান করা উচিত। নিতে হবে বিশ্রাম। ভারি কাজ, গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে। আর দুধ জাতীয় খাদ্য রক্ত দানের একঘণ্টা পর খেতে পারেন । পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। প্রতিনিয়ত অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা, মায়ের প্রসবজনিত জটিলতা, ক্যান্সার, লিওকেমিয়া এবং থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর জীবন রক্ষার্থে রক্তের প্রয়োজন হয়। তবে রক্ত যেমন একদিকে জীবন রক্ষা করে, অন্যদিকে অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে এইডস, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-বি সিফিলিস, ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এ সব জটিল রোগ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র উপায় হচ্ছে পেশাদার রক্তদাতা থেকে রক্ত গ্রহণে বিরত থাকা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে রক্ত গ্রহণ করা। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, দেশের শতকরা ৮১ ভাগ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র অনুমোদনহীন। রক্ত সংগ্রহের সময় বাধ্যতামূলক পাঁচটি পরিসঞ্চালন সংক্রমণ পরীক্ষা করা হয় না শতকরা ৫০ ভাগ কেন্দ্রে। রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের কাজে নিয়োজিত লোকদের শতকরা ৭৪ ভাগ নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন না। এ সব কেন্দ্র থেকে সরবরাহকৃত রক্ত গ্রহণে সব সময় ঝুঁকি রয়ে যায়। আশঙ্কা থাকে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আর বেসরকারীভাবে গড়ে ওঠা ব্লাড ব্যাংকগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চালন হয় এমন অধিকাংশ রক্তই মাদকসেবীদের বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সংগৃহীত রক্তের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
×