ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কানাডা ১২ বছর আগেই তাকে ফেরত দিতে চেয়েছিল

নূর চৌধুরীকে বিএনপি জামায়াত জোট ফিরিয়ে আনেনি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৪ জুন ২০১৮

নূর চৌধুরীকে বিএনপি জামায়াত জোট ফিরিয়ে আনেনি

শংকর কুমার দে ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনী কানাডায় পলাতক মেজর (অব) নূর চৌধুরীকে এক যুগ আগেই ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছিল কানাডা। কিন্তু তাকে তখন দেশে আনতে রাজি হয়নি বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। শুধু তাই নয়, নূর চৌধুরী যাতে কানাডায় থাকতে পারেন সেই জন্য জোট সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। এটা প্রায় ১২ বছর আগে ২০০৬ সালের ঘটনা। এর ২ বছর আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় নূর চৌধুরীর সম্পৃক্ততার তথ্য পায় গোয়েন্দা সংস্থা। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছেন পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের খুনী নূর চৌধুরীকে। এমন অভিযোগের ওই সময়েই তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সময়ে গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে ‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার মতো’ নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে চলে আসে পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির আরেক ঘটনা। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছরেও পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির ঘটনাসহ সেসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফেরাতে আইনী লড়াই চালাবেন বলে ঘোষণা দেয়ার পর আবারও তার বিষয়ে পুরনো মামলার নথিপত্র দলিল দস্তাবেজ ঘাটাঘাটি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গত ১০ জুন কানাডা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন কানাডায় সফররত প্রধানমন্ত্রী। ওই দিন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকেও নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে কানাডার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া পলাতক আসামি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার কানাডার আদালতে আইনি লড়াই চালাবে। এজন্য কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সংস্থা বাসস এর খবরে বলা হয়, ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরী এবং পাকিস্তানে পলাতক রশিদ ও ডালিমসহ বঙ্গবন্ধুর সব খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। সাবেক সেনা কর্মকর্তা নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনীর একজন। ১৯৭৫ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ ছাড়ার পর কূটনীতিক হিসেবে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন। নূর তার কূটনীতিক পাসপোর্ট নিয়েই হংকং থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই বছর তিনি কানাডায় প্রবেশ করেন। কানাডা মৃত্যুদন্ডাদেশের বিপক্ষে। সে দেশের আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি কানাডায় অভিবাসী হলে ও জীবনাশঙ্কার কথা জানিয়ে আবেদন করলে সেই ব্যক্তিকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয় না। গত ১০ জুন শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো জানিয়েছেন, নূর চৌধুরী কানাডার নাগরিকত্ব পায়নি, সে কানাডার নাগরিক নয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিতাড়নের প্রশ্নে তার দেশের আইনী ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে ট্রুডো বলেছেন, কানাডীয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করছেন। নূর চৌধুরী কানাডার নাগরিকত্ব না পেলেও ‘প্রি-রিম্যুভাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট’ বিধির সুযোগ নিয়ে কানাডায় আছেন। ২০০৬ সালে কানাডায় তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নামঞ্জুরের পর তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফেরত দেয়া হয় এবং তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কানাডা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।
×