ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমএইচে চিকিৎসা

বেগম জিয়ার মত জানতে আজ তার কাছে যাবে কারা কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৪ জুন ২০১৮

   বেগম জিয়ার মত জানতে আজ তার কাছে যাবে  কারা কর্তৃপক্ষ

মশিউর রহমান খান ॥ কারা বিধি অনুযায়ী সরকারী হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা প্রদানের কোন সুযোগ না থাকায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে কারা অধিদফতর। কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে আজ যে কোন সময় খালেদা জিয়ার কাছে সিএমএইচে চিকিৎসা গ্রহণ করতে রাজি আছেন কী না তা জানতে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করবে। সেই মতামতের ওপর ভিত্তি করেই খালেদার চিকিৎসা গ্রহণের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। সিএমএইচে চিকিৎসা গ্রহণে খালেদা জিয়া রাজি হওয়া মাত্রই তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এর বাইরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় সতর্কতার অংশ হিসেবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিএমএইচে ‘অন কল’ ডিউটিরত ডাক্তার এনেও চিকিৎসা প্রদান করার প্রয়োজন হলে তাও করা হবে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বেগম জিয়া চিকিৎসা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে তার পরিবারের সদস্যরা বেসরকারী ইউনাটেড হাসপাতালে নিজ খরচে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মঙ্গলবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারে খালেদা জিয়ার কাছে সিএমএইচে চিকিৎসা গ্রহণে রাজি আছেন কী না তা জানতে চান। কিন্তু খালেদা জিয়া এ বিষয়ে কোন মতামত না জানিয়ে পরে জানাবেন বলে কারা কর্মকর্তাদেরকে জানান। কারা মহাপরিদর্শকের প্রস্তাব গ্রহণ না করায় বিকল্প হিসেবে সিএমএইচ কে চিকিৎসা প্রদানের প্রস্তাব দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে তেমন গুরুতর নয়। কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানে কোন প্রকার গাফিলতি যাতে না হয় তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সূত্র মতে, ঈদের আগে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের কোন প্রকার অবনতি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই যাতে ডাক্তারের পরামর্শ ও হাসপাতালে পাঠানো যায় তার ব্যবস্থা করে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার কাছে বিশেষ কারাগারে দায়িত্বরত কারাগারের ডাক্তার ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কারা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বর্তমানে আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ রয়েছেন। তবে যে কোন সময় স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে কারা কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেবে। জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবার ও স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া সঙ্গে নিয়ে আসা সকল প্রকার খাবার পরীক্ষাপূর্বক খালেদা জিয়াকে খেতে দেয়া হবে। কারা সূত্র জানায়, প্রথম শ্রেণীর বন্দী হিসেবে ঈদ উপলক্ষে খাবারসহ সার্বিক সুবিধা পাবেন খালেদা জিয়া। এর বাইরে পছন্দের খাবার হিসেবে তাকে বিশেষ খাবারের তালিকা প্রদান করা হবে। এর বাইরেও কোন খাবার খেতে চাইলে তাকে তা রান্না করে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। মোটকথা নির্বিঘœ ঈদ উদ্যাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার কারাগারে আটক বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন কী না তা জানতে কারা কর্মকর্তাদের পাঠানো হবে। এ জন্য ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে সুচিকিৎসার স্বার্থে প্রয়োজনে আমি নিজে চিকিৎসা সম্পর্কিত মতামত জানতে চাইব। যদি তিনি সিএমএইচে যেতে রাজি থাকেন তাহলে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই করা হবে। এমনকি যে কোন সময় তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে তার জন্য ডাক্তার নার্সসহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত পরবর্তী সবকিছু নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার মতামতের ওপর। এ ছাড়া একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে ঈদের দিনে পছন্দমতো খাবারের বিশেষ তালিকা প্রদান করা হবে। এর বাইরেও সকল প্রকার খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হবে। পরিবারের লোকদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা ও তাদের সঙ্গে করে আনা ঘরে তৈরি খাবারও তাকে খেতে দেয়া হবে। আমরা তার চিকিৎসা প্রদানে সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছি। প্যারোলে খালেদার মুক্তি দাবি ॥ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চেয়েছেন। বুধবার রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সরকারের কাছে এ আহ্বান জানান। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৪ মাস কারাবন্দী থেকে খালেদা জিয়ার রোগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার তার জীবনের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিন। যেহেতু আপীল বিভাগে তার জামিন নিয়ে কয়েকটি মামলা পেন্ডিং আছে, এছাড়া ঈদের কারণে উচ্চাদালত ও নিম্ন আদালত বন্ধ। এই অবস্থায় আইনী প্রক্রিয়ায় তাকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয়। সুতরাং তার চিকিৎসার জন্য একটাই পথ খোলা রয়েছে, তা হচ্ছে প্যারোলে মুক্তি। খালেদা জিয়াকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়া হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা করাতে ইচ্ছুক, তার ইচ্ছার গুরুত্ব দেয়া উচিত। তার চিকিৎসার দায়িত্ব যেন সরকার না নেয়। সামরিক শাসনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সেনাশাসনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন এবং তিনি চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছিলেন। এমনকি তিনি প্যারোলে মুক্ত হয়েই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। খালেদাকেও সেই সুযোগ দেয়া উচিত। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেয় রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওই দিন বিকেলে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে বন্দী রয়েছেন।
×