ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘসূত্রতায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কার্যকারিতা কমেছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৪ জুন ২০১৮

 দীর্ঘসূত্রতায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কার্যকারিতা কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনে প্রিমিয়াম চাওয়া কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরে পাবলিক ইস্যু রুলস জারি করা হয়েছে। এই রুলস জারি করার পরে গত আড়াই বছরে ১৭টি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে। তবে এরমধ্যে মাত্র ৪টি কোম্পানি বিডিং করার অনুমোদন পেয়েছে। এই দীর্ঘসূত্রতার কবলে অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। একটি কোম্পানিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ‘রোড শো’ ও বিডিংয়ের ২টি অতিরিক্ত ধাপ পার করতে হয়। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রথমে কোম্পানিগুলোর ‘রোড শো’ আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাতে টাকা সংগ্রহ করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা অবহিত হতে পারেন। এর পরবর্তীতে নিলামের জন্য বিডিংয়ের অনুমোদন পেতে হয়। প্রিমিয়ামসহ শেয়ারবাজারে আসতে চাইলে পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫’তে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই পাবলিক ইস্যু রুলস জারি করা হয়েছে। এরই আলোকে বেশ কিছু কোম্পানি ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে। তবে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র ৪টি কোম্পানি বিডিংয়ের অনুমোদন পেয়েছে। রোড শো’ সম্পন্ন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে – ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ্যাপোলো হাসপাতাল ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া একই বছরের ১২ এপ্রিল আমরা নেটওয়ার্ক, ৩০ জুন বসুন্ধরা পেপার মিলস, ২৪ জুলাই আমান কটন ফাইবার্স, ৯ অক্টোবর বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার স্যাক লিমিটেড, ১৯ অক্টোবর রানার অটোমোবাইলস, ২৪ অক্টোবর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, ৬ অক্টোবর ডেল্টা হসপিটাল, ১৮ অক্টোবর ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে। এছাড়া ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল এ্যাস্কয়ার নিট কোম্পোজিট, ১৯ এপ্রিল শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটের, ১৫ অক্টোবর এনার্জিপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ, ১৯ অক্টোবর এডিএন টেলিকম ও ৫ ডিসেম্বর লুব-রেফ বাংলাদেশ রোড শো সম্পন্ন করেছে। আর চলতি বছরের ২৮ মার্চ বারাকা পতেঙ্গা, ২৯ মার্চ স্টার সিরামিকস ও ২২ এপ্রিল মডার্ন স্টিল মিলসের রোড শো সম্পন্ন হয়েছে। রোড শো’ সম্পন্ন করা এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক, বসুন্ধরা পেপার মিলস ও আমান কটন ফাইবার্সের বিডিং সম্পন্ন হয়েছে। আর এ্যাস্কয়ার নিট কোম্পোজিট বিডিংয়ের অনুমোদন পেয়েছে, তবে তা শুরু হয়নি। এর মধ্যে আইপিও অনুমোদন পেয়ে টাকা উত্তোলন করেছে আমরা নেটওয়ার্ক। আর বসুন্ধরা পেপার মিলস ও আমান কটন ফাইবার্সের লেনদেন শুরু না হওয়ায়, এখনো ব্যবহারের জন্য ফান্ড পায়নি। আমরা নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল ‘রোড শো’ সম্পন্ন করে। এতে ঋণ পরিশোধ, আধুনিকায়ন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে শেয়ারবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করার কথা জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিডিংয়ের অনুমোদন পায় একইবছরের ২১ ডিসেম্বর এবং চলে ২০১৭ সালের ৫-৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আইপিও অনুমোদন পায় ১৩ জুন। এরপরে ২ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়। যাতে ওইদিন কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে টাকা ব্যবহারের জন্য সুযোগ পেয়েছে। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির রোড শো থেকে টাকা উত্তোলন পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর সময় লেগেছে। বসুন্ধরা পেপার মিল ২০০ কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষে ২০১৬ সালের ৩০ জুন ‘রোড শো’ করেছে। কারখানার আধুনিকায়ন ও মেশিনারি আমদানি করার লক্ষে এ টাকা সংগ্রহ করতে চায়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ‘রোড শো’তে ২০১৬ সালের (জানুয়ারি-মার্চ) সময়ের ব্যবসায়িক অবস্থা তুলে ধরা হয়। আর কোম্পানিটির বিডিং শুরু হয় ১৬ অক্টোবর। আমান কটন শেয়ারবাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই রোড শো করেছে। কারখানায় আধুনিক মেশিনারি স্থাপন করবে কোম্পানিটি। যাতে ব্যয় করা হবে ৪৯ কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এছাড়া আইপিওতে উত্তোলিত অর্থ থেকে ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যবহার হবে ঋণ পরিশোধে, ওয়ার্কিং মূলধন হিসাবে ১০ কোটি টাকা ও আইপিওতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যবহার করা হবে। কোম্পানিটি ২০১৭ সালের ৬ নবেম্বর বিডিং সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের ১০ জুন আইপিওতে আবেদন শুরু হয়েছে। ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষে অ্যাপোলো হাসপাতাল শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ‘রোড শো’ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের ব্যবসায়িক চিত্র তুলে ধরা হয়। ‘রোড শো’র পরে ২ বছর পার হলেও বিডিংয়ের অনুমোদন পায়নি। এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, একটি কোম্পানির রোড শো করার পরেও এক বছরের বেশি সময় লেগে যায় বিডিংয়ের অনুমোদন পেতে। এরপরে আইপিও অনুমোদন পেতে আরও অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতে বুক বিল্ডিংসহ ফিক্সড পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে উদ্যোক্তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায়। আইডিএলসি ইনভেষ্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি কোম্পানিকে আইপিওতে নিয়ে আসতে যথেষ্ট সময় লাগে। একদিকে যেমন কোম্পানির প্রস্ততি গ্রহণে সময় লাগে, অন্যদিকে ‘রোড শো’করে তালিকাভুক্ত হতে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পদ্ধতিগুলো পর্যালোচনা করে যদি আমাদের আইপিও পক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করা যায়, সেটা নতুন কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে।
×