ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অর্থ সঙ্কটে রাসিক ॥ উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় নজর মেয়রের

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৪ জুন ২০১৮

চরম অর্থ সঙ্কটে রাসিক ॥  উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায়  নজর মেয়রের

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ নির্বাচনের প্রাক্কালে এসে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে, ঠিকাদারদের বিলও পরিশোধ করা হয়নি। এর মধ্যেই ঈদের আগে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে কোমর বেঁধে আন্দোলন শুরু করেছেন কর্মচারীরা। ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে এসে এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে মরিয়া মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নজর এখন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের দিকে। জানা গেছে, সম্প্রতি রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্যের ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে রাসিকের কাছে এই অর্থ হস্তান্তরও করা হয়ে গেছে। এখন মেয়র বুলবুল সেই টাকার দিকে ঝুঁকেছেন বলে জানা গেছে। রাসিকের একাধিক সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে সিটি কর্পোরেশনে আর্থিক সঙ্কট চলছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির সপ্তদশ সাধারণ সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ না করার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। ওই সভায় স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্তদের বেতন-ভাতা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে পরিশোধের অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এতকিছুর পরেও সঙ্কট পিছু ছাড়েনি। সূত্র মতে, গত বছর ৪০ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে কর্মচারীদের আন্দোলন থামাতে মেয়র বুলবুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুতই এর সুরাহা করার। কিন্তু বছর ঘুরলেও বকেয়ার আবর্ত থেকে বেরুতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। এবারও প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়লে গত মাসে আন্দোলনে নামে কর্মচারী ইউনিয়ন। এরপর ঈদের আগে এসে সেই কর্মসূচী আরও জোরেশোরে শুরু হয়েছে। রাসিক মেয়রের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আন্দোলনের মুখে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধের সময় নিয়েছেন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে সংসদ সদস্যের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ছাড় হওয়া অর্থ সাময়িকভাবে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় করা যায় কি না তা নিয়ে তার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাদের কেউ কেউ মেয়রকে প্রকল্পের টাকা থেকে বেতন ভাতা পরিশোধ করে আপাতত সঙ্কট নিরসনের পরামর্শ দিয়েছেন। তবে তাদের একজন মেয়রকে সরাসরি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ভোটের আগে এসব প্রকল্পের চেয়ে তার জন্য বকেয়া পরিশোধ বেশি জরুরী। এ সময় একজন কর্মকর্তা প্রকল্পের টাকা খরচ করলে পরে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান। এর জবাবে আরেকজন জনপ্রতিনিধি বিএনপির সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সময়ে সিটি বাইপাস থেকে ফায়ার ব্রিগেড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পের অর্থ তিনি অন্যখাতে ব্যয় করেছিলেন বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মেয়র বুলবুলকে বলেন, পরের মেয়র সেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য আলাদা বরাদ্দ এনেছিলেন। এ নিয়ে কোনো সমস্যাও হয়নি। তবে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক ওই আলোচনায় চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। সিটি কর্পোরেশনকে ৭ কোটি টাকা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের লেখা চিঠি থেকে জানা যায়, সংসদ সদস্যের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে একুশের প্রথম শহীদ মিনারের স্থায়ী রূপ দেয়া, বধ্যভূমি সংস্কার, হযরত শাহ মখদুমের (রহ.) দরগার উন্নয়ন কাজ, সাহেববাজার বড় মসজিদ ও ভেড়িপাড়া মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্নকরণ, জেলা পরিষদ মিলনায়তনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্নকরণ এবং হরিজনপল্লি ও বস্তি উন্নয়ন। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে জরুরী এসব উন্নয়ন কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব প্রকল্পের অর্থ অন্যখাতে ব্যয় করলে উন্নয়ন কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হবে। এ ব্যাপারে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত প্রকল্প আমি ছাড় করিয়ে এনেছি। এর প্রত্যেকটি কাজ জনগণ বুঝে নেবে। আর কেউ যদি এসব প্রকল্পের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করে, তাহলে সেটা সমীচীন হবে না। এসব প্রকল্পের একটি টাকাও অন্যখাতে খরচ করা হলে সে জন্য সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তার ফোন রিসিভ করেননি।
×