ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৩ জুন ২০১৮

সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টর ॥ প্রবল মৌসুমি বায়ুর কারণে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার পর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার মাঝারি ধরনের বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়লেও ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পায় রাজধানীবাসী। নগরীর বিভিন্ন স্থানে সাময়িক জলাবদ্ধতার বৃষ্টি হয়। ভারি বর্ষণের মধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অতিভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুদিন থেকে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এলাকায় অতিভারি বর্ষণে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ জানান, প্রবল মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বিস্তার লাভ করেছে। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার পর বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। অনেকে পথ চলতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছেন। এর সঙ্গে তীব্র যানজট ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর রাস্তাঘাট ও অলিগলিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। মঙ্গলবারও অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার অভিজ্ঞতা পায় নগরবাসী। একই সময়ে নগরীর সর্বত্র চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। বৃষ্টির পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ওই সব জায়গা। এমনিতেই ব্যবহারের অনুপযোগী রাজধানীর ৪০ ভাগের বেশি রাস্তা। রাজপথ থেকে অলিগলি সবখানেই রাস্তার বেহাল দশা। কোথাও বিশাল গর্ত। সংস্কারের অভাবে কোথাও কোথাও রাস্তা পরিণত হয়েছে ড্রেনে। তবে রাজপথ থেকে রাজধানীর অলিগলির চিত্র খুবই করুণ। প্রতি বছরই এমন অভিজ্ঞতা পেতে হয় নগরবাসীদের। বিশেষ করে বৃষ্টিপাত হলে নগরীবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। রাস্তার ওপর জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পা রাখতে গিয়ে অজান্তেই গর্তে পড়তে হয় পথচারীদের। বৃহস্পতিবারও নগরবাসীদের একই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। বৃষ্টিতে আটকা পড়ে হাজার হাজার মানুষ। নিকটস্থ শপিংমল, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয় লোকজন। অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় রিক্সা, অটো, সিএনজি ও ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া। বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেন চালকরা। আর বৃষ্টি শেষ হলে শুরু হয় পাবলিক পরিবহনে উঠার তীব্র প্রতিযোগিতা। রাস্তা ও ফুটপাতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। রাস্তার দু’পাশে বাসাফেরা নগরবাসী দলে দলে হাটতে থাকে। আর বৃষ্টির কাদা পানি ও বেহাল রাস্তাঘাট বাড়িয়ে দেয় নগরবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা। পথচারীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বিজলী চমকানির বিকট শব্দ। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চলতি মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তরলাভ করতে পারে। চলতি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জুনে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ৩৫৬ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৪৩২ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৫৮৯ মিলিমিটার, সিলেটে ৬৩৪ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ৩০৫ মিলিমিটার, রংপুরে ৩৮৯ মিলিমিটার, খুলনায় ২৯৬ মিলিমিটার ও বরিশাল বিভাগে ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। দিন হিসেবে ঢাকা বিভাগে ১৪ দিন, ময়মনসিংহে ১৫ দিন, চট্টগ্রামে ১৭ দিন, সিলেটে ২০ দিন, রাজশাহীতে ১২ দিন, রংপুরে ১৫ দিন, খুলনায় ১৪ দিন ও বরিশাল বিভাগে ১৬ দিন বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মে মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা শতকরা ১৪.৩ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সিলেট ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সংযোগ এবং বায়ুম-লের নিম্নস্তরে অধিক জলীয় বাষ্পের যোগান থাকায় গত মাসে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে।
×