ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে পালিত হলো শব-ই-কদর

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৩ জুন ২০১৮

সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে পালিত হলো শব-ই-কদর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাতভর ইবাদত বন্দেগি, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে পালিত হয়েছে পবিত্র রজনী লাইলাতুল কদর। মহাগ্রন্থ আল কোরানে এই রজনীকে অধিক মর্যাদা দান করা হয়েছে। সওয়াব লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাতে কোরান তোলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির আসকার ও নফল ইবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে পার করেন। অতীতের পাপ মোচন, কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা, অনুতাপ ও রহমত লাভের আশায় আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তারাবির নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইবাদত বন্দেগি। তা সেহরি খাওয়ার আগ পর্যন্ত চলে। রাত শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। মঙ্গলবার সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এ রাতের মহত্ত্ব। সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত রাতে মর্যাদা বজায় থাকে। এই সময়ের মধ্যে কেউ ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকলে আল্লাহ তার বান্দাদের গোনাহ খাতা মাফ করে দেন। এই রাতে মহত্ত্ব সম্পর্কে আল কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে শব-ই-কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে শব-ই-কদর রজনীতে যে ব্যক্তি সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে মগ্ন থাকবে সে হাজার মাসের ইবাদতের ভাগীদার হবে। এই রাতেই পবিত্র গ্রন্থ আল কোরান নাজিল করা হয়েছে। ফলে সারারাতই দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভে ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে রাতব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ছিল রাতে তারাবির পর শব-ই-কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া রাতব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুর ২ টায় (বাদ জোহর) বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াজ করেন রাজধানীর মিরপুরস্থ বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা আবদুল মুকিত আল আজহারী। এছাড়া তারাবিহ নামাজের পর রাত ১০-৪৫ মিনিটে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও করণীয়’ শিরোনামে ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলও অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াজ পেশ করেন ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা কাফিলুদ্দীন সরকার সালেহী ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। এছাড়াও মুসলিম উম্মাহর সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পাশাপাশি ঢাকার সব মসজিদে বিশেষ ইবাদত বন্দেগির আয়োজন করা হয়। এসব মসজিদগুলোতে আলেমগণ লায়লাতুল কদরের তাৎপর্যের ওপর আলোচনা করেন। রাতে কোরান তেলাওয়াত, তাছবিহ্ তাহলীল, নফল নামাজ, জিকির ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে রজনী পার করেন। এছাড়াও পবিত্র এ রাতে অনেকেই কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে। আল্লাহতাআলার করুণা লাভের আশায় কেউ আবার গরিব দুঃখীদের মধ্যে দান খয়রাত করেন। লাইলাতুল কদর বা শব-ই-কদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে ক’টি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ শব-ই-কদর। পবিত্র রমজানের এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরান অবতীর্ণ হয়। কোরান নাজিলের মাস হিসেবে রমজান যেমন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত, তেমনি কোরান নাজিলের কারণেই শব-ই-কদর অতি ফজিলত ও তাৎপর্য বহন করে। পবিত্র গ্রন্থ আল কোরানে এ রজনীর গুরুত্ব ফজিলত বর্ণনা করে আল কদর নামে আলাদা একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘আমি একে নাজিল করেছি শবে-কদরে। শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? শবে-কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালন কর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে আজ বুধবার সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা করা হয়। সংবাদপত্রগুলো তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করে। টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এদিকে পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ দেশ ও জনগণের কল্যাণ কামনা করে বাণী প্রদান করেন।
×