ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউনাইটেডে নিতে চান ভাই, সরকারের প্রস্তাব সিএমএইচে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৩ জুন ২০১৮

ইউনাইটেডে নিতে চান ভাই, সরকারের প্রস্তাব সিএমএইচে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পারিবারিক খরচে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। মঙ্গলবার দুপুরে শামীম ইস্কান্দার স্বাক্ষরিত একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএসএমএমইউর পরিবর্তে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পর তাকে সিএমএইচে নেয়ার প্রস্তাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ দিকে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ জানিয়ে তিনি অবিলম্বে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার দাবি জানান। মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি থাকলেও তার অনীহার কারণে সেখানে নেয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানান। তিনি বলেছিলেন, কারাবিধিতে বেসরকারী হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ না থাকায় তা পেতে হলে খালেদা জিয়াকে আবেদন করতে হবে। কারা অধিদফতর ফটকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন। এরপর খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিজ খরচে চিকিৎসা নেয়ার আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আর সেই আবেদন পাওয়ার পর ইউনাইটেডের বদলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়ার প্রস্তাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিএমএইচ অনেক সমৃদ্ধ। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও রয়েছেন। তাছাড়া সিএমএইচ অনেক সঙ্কটকালে ভূমিকা রেখেছে। সেই বিবেচনায় আমরা সিএমএইচের প্রস্তাব দেব। আসাদুজ্জামান খঁাঁন কামাল বলেন, আমরা মনে করি, তার সিএমএইচে যাওয়া উচিৎ। আমরা এখন তাকে প্রস্তাবটা দেব। তিনি কী রি-এ্যাকশন দেন, সেটা আমরা দেখব। জেলকোড মেনেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে যে কোন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সরকার প্রস্তুত কি না? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আন্তরিক। প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। হঠাৎ পরিস্থিতি তো হঠাতই। তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সব সময় প্রস্তুত। এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। মন্ত্রী বলেন, কারাবন্দী বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে সরকার তার অবস্থান আগেই স্পষ্ট করেছে। সরকারী ব্যবস্থায় তার সর্বোচ্চ উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জেলকোড মেনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখন রাজি না হলে তো আমরা সেখানে তাকে নিতে পারি না। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার আবেদন বিবেচনার কোন সুযোগ রয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটার কোন যুক্তি আছে বলে আমার মনে হয় না। সিএমএইচে না যাওয়ার মতো যুক্তি আমার মনে হয় থাকতে পারে না। খালেদা জিয়া বা তার পরিবার সিএমএইচের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। নিজ দফতরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কথা বলার আগেই পারিবারিক খরচে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। মঙ্গলবার দুপুরে শামীম ইস্কান্দার স্বাক্ষরিত একটি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। আবেদনে শামীম ইস্কান্দার বলেন, বর্তমানে আমার বড় বোন খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত। কারাগারের ভেতরে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে দীর্ঘ কারাবাসে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়, ৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কারাগারের ভেতরে তার শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। উক্ত চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া মাইল্ড স্ট্রোক করেছেন। ফলে ভবিষ্যতের জন্য এ ধরনের বিষয় বড় রকমের ঝুঁকির পূর্বাভাস বহন করছে। তাই দেরি না করে তাকে ঢাকার বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান করা জরুরী। সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। তার কিছু হলে সরকারের পরিণাম শুভ হবে না। সারাদেশের মানুষ অপেক্ষা করছে কখন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। ড. মোশাররফ বলেন, এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার সুচিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একটা লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে। আমরাও আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবেই জানাচ্ছি, খালেদা জিয়াকে তার পছন্দের হাসপাতাল ইউনাইটেডে এনে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। চিকিৎসা ব্যয় দলের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছেন। এটা জানার পরেও তাকে আরও অসুস্থ করে ফেলার জন্য পরিত্যক্ত জেলখানায় একমাত্র বন্দী হিসেবে নির্জনে রাখা হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তার স্বাস্থ্য অবনতির খবর গোপন রাখার অপচেষ্টা হয়েছে। এসব ঘটনায় স্পষ্টই বোঝা যায় ক্ষমতাসীন সরকার তাদের সবচেয়ে শক্তিশাল প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসার ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। খন্দকার মোশাররফ বলেন, আইজি প্রিজন গণমাধ্যমকে বলছেন, কারাবিধি অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তার এই বক্তব্য থেকে খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে সরকারের অনীহার বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে। অথচ ওয়ান ইলেভেনের সময় একবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিকিৎসার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। আর তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এত দিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক ও অত্যন্ত নিন্দনীয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ। খালেদার মুক্তির দাবিতে শহীদ মিনারে বিশিষ্টজনদের কর্মসূচী পুলিশী বাধায় প- ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশিষ্টজনদের মৌন অবস্থান কর্মসূচী পুলিশের বাধায় প- হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে দুই দফায় বিশিষ্টজনেরা সেখানে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় সরে যেতে বাধ্য হন। প্রথম দফায় আসা দলটি পুলিশের বাধায় সঙ্গে আনা ব্যানারও খুলতে পারেনি। আর পরের দফায় তারা ২০ মিনিটের মতো শহীদ মিনারের সিঁড়িতে অবস্থান নিতে পারেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৫০ জনের মতো বিশিষ্টজন শহীদ মিনারে সমবেত হন। তারা সেখানে যাওয়া মাত্র পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখান থেকে চলে যান তারা। এ সময় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, একটি মানবিক আবেদন নিয়ে আমরা এখানে এসেছিলাম। আমরা চাই, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে যেন মানবিক কারণে মুক্তি দেয়া হয়। আমাদের সঙ্গে আনা ব্যানারে সেই কথাটিও লেখা ছিল। কিন্তু পুলিশ ব্যানারটি খুলতেই দেয়নি। এখানে দাঁড়াতেও দেয়নি, বসতেও দেয়নি। ওই সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. জেড এন তাহমিদা খাতুন, অধ্যাপক তাজমেরি এন ইসলাম, ডাঃ এম এ আজিজ, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ। বেলা ১১টার দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশিষ্টজনদের আরেকটি দল শহীদ মিনারে যান। তার সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক মেজবাহ উল ইসলাম, হোসনে আরা, আখতার হোসেন খান, আবদুর রশীদসহ ১৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা শহীদ মিনারের সিঁড়িতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থান নেয়ার পর পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
×