ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লন্ডন ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৩ জুন ২০১৮

লন্ডন ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান

সংসদ রিপোর্টার ॥ লন্ডনে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সন্তান ও উত্তরসূরিদের সরকারী চাকরিতে প্রবেশ বন্ধ এবং যারা চাকরিতে আছেন তাদের বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হরিলুট বন্ধ করতে না পেরে উল্টো বাজেটে তাদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করার জন্য অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সূচনা দিনে আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সরকারী দলের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী, ইসরাফিল আলম, মোহাম্মদ নোমান, কবি কাজী রোজী, জাসদের নাজমুল প্রধান ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বানের সমালোচনা করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য হবে? বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সঙ্গে? স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য হতে পারে না। বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ঐক্য গড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বদরুদ্দোজা নয়, এর পেছনে আরও অনেকে আছে। এরা কি ষড়যন্ত্র করছে ? তিনি বলেন, এর সঙ্গে রয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা কি ছিল আমার জানা নাই। তবে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল করেছেন। আবার একজন শিল্পপতিও বটে। তার পোশাক তৈরি কারখানায় শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। সেই ব্যক্তি এখন বিভিন্ন ছবক দিচ্ছে। এদের ষড়যন্ত্রে দেশবাসী সাড়া দেবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সঙ্গে আছে, স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। মন্ত্রী আরও বলেন, কোটা সংস্কারের নামে যারা আন্দোলন করতে গিয়ে ভিসি’র বাসায় হামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের ও তাদের উত্তরসূরিদের সরকারী চাকরিতে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। এমনকি স্বাধীনতা বিরোধীদের যারা এখনও সরকারী চাকরিতে বহাল আছেন তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সন্তানদের সরকারী চাকরিতে নিয়োগ দিলে ওরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধ্বংস করবে। তিনি স্বাধীনতার চেতনা বিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে শুধু বৈঠকই করেননি, ভূরিভোজও করেছেন। ওখানে বসে উনি কি ষড়যন্ত্র করছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির সঙ্গে সাক্ষাত করার আইনের ব্যতয় ঘটে কি না? সেটা খতিয়ে দেখে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন, সেদিকে মনোযোগী না হয়ে বিএনপি এখন বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। দেশবাসী আগামী নির্বাচনেও এদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাট নিয়ে কথা বলা যাবে না। চুরি করলে চোর বলা যাবে না। এটা কোন মহারাজার দেশে বাস করছি ? তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি হয়ে গেল। কোন হদিস নাই, জবাবদিহিতা নাই। তদন্ত কমিটি হলো রিপোর্ট প্রকাশ করলেন না। তাহলে তদন্ত কমিটি কেন করলেন ? যাদের নাম প্রকাশ করতে পারলেন না তারা কি রাষ্ট্র চালায়? তারা কি রাষ্ট্রের চাইতেও ক্ষমতাধর ? জাসদের নাজমুল হক প্রধান দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এখনও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন সবদিক থেকেই এগিয়ে যাচ্ছে তখন এই অপশক্তিরা পেছন থেকে ছুরি মেরে অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু পাকিস্তানের পেতাত্মাদের পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বাজেটের কিছু অংশের সমালোচনা করে বলেন, দেশের কয়েকটি ব্যাংকে রীতিমতো হরিলুট হয়ে গেল। সাগরচুরির মতো হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হলো। কিন্তু অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বাজেটে এসব ব্যাংকগুলোকে পুরস্কৃত করলেন। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
×