ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড় ধসে নিহত ১২

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৩ জুন ২০১৮

পাহাড় ধসে নিহত ১২

মোয়াজ্জেমুল হক/মোহাম্মদ আলী ॥ মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা তিনদিন বৃহত্তর চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণ অব্যাহত ছিল। বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটিচাপায় পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর ও কক্সবাজারের মহেশখালীতে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১১ জনই মারা গেছে নানিয়ারচরে এবং অপর একজন প্রাণ হারিয়েছেন কক্সবাজারের মহেশখালীর পানিরছড়ায়। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েকজন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গম নানিয়ারচর উপজেলার চারটি পয়েন্টে ব্যাপকভাবে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে একটি পয়েন্টে পাহাড়ের মাটির চাপায় এক পরিবারের ৫ জন ও আরেক পরিবারের মা-ছেলেসহ ১১ জন প্রাণ হারায়। অপর ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের মহেশখালীর পানির ছড়ায়। এতে পাহাড়ের মাটি চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন আবুল কালাম (৪০) নামের এক ব্যবসায়ী। মহেশখালীর ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায়। এ ঘটনায় নিহত কালামের স্ত্রী-পুত্রও আহত হয়েছে। যার মধ্যে ৮ বছর বয়সী তার পুত্রের অবস্থা গুরুতর। অপরদিকে নানিয়ারচরের ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার গভীর রাতের পর। পাহাড় ধসের এ চারটি স্থানের মধ্যে নানিয়ারচর সদরের বড়পুল এলাকার ধর্মচারণপাড়া ও হাতিমারা এলাকায় পাহাড় ধসে মাটিচাপায় যে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন- একই পরিবারের সুরেন্দ্র চাকমা (৫৫), রাজ্যদেবী চাকমা (৫০), ফুলদেবী চাকমা (১৮), ইতি চাকমা (১৯)। আরেক পরিবারের মা ও দেড় বছরের শিশু সন্তান মারা গেছে। তারা হলেনÑ স্মৃতি চাকমা (২৩) ও তার পুত্র আইয়ুব দেওয়ান (১৮ মাস)। নিহত অন্যরা হলেনÑ রমেন চাকমা (৩০), রিপেল চাকমা (১৪), রিতা চাকমা (৮)। এই দুজন সম্পর্কে ভাইবোন। নিহত শেষজন হলেন বিসু কেতু চাকমা (৬০)। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনা, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সকালে অকুস্থলে যান রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, নানিয়ারচরে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। এছাড়া জেলার বরকল, বিলাইছড়ি, জুলাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী ও কাউখালির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন প্রাণহানির খবর মেলেনি। কাপ্তাই লেক সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি পাহাড়ী ঢলে নিমজ্জিত হয়েছে। ওসব এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন উদ্ধার কাজও শুরু করতে পারেনি। তবে নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন ও নানিয়ারচর থানার ওসি আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুপুরে জেলা প্রশাসনের জরুরী সভা হয়েছে। জেলার প্রতি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সদরে খোলা হয়েছে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়া বাঘাইছড়িতেও অনুরূপ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গেল বছরের একই দিনে পার্বত্য জেলাজুড়ে ব্যাপকভাবে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল। এতে প্রাণহানি হয় ১২০ জনের। সর্বত্র সৃষ্টি হয়েছিল বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। টানা আঠারদিন রাঙ্গামাটির সঙ্গে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। পাহাড় ধসের কারণে ঘরবাড়ি হারা তিন সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। একই সময়ে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সড়কে ১৩৭টি স্পটে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছিল। এদিকে রাঙ্গামাটি শহর এলাকায়ও বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটির সঙ্গে দুর্গম সাজেকের সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগ চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে ধসে পড়া মাটি সরিয়ে যোগাযোগ সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড়ী ঢল ক্রমাগতভাবে নামছে। ফলে লোকালয়সহ বিভিন্ন পয়েন্ট পানির নিচে রয়েছে। এর পাশাপাশি ঢলের তোড়ে কয়েকটি ব্রিজ কালভার্টও ধসে গেছে।
×