ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর;###;দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের;###;পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করবেন উন- ট্রাম্পের আশাবাদ

নতুন অধ্যায় শুরু ॥ সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-উন বৈঠক

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৩ জুন ২০১৮

নতুন অধ্যায় শুরু ॥ সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প-উন বৈঠক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হলো ট্রাম্প-কিম ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক। সিঙ্গাপুরের অবকাশ দ্বীপ সান্তোসার বিলাসবহুল ক্যাপেলা হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে দুই নেতা প্রথমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বহু কাক্সিক্ষত ও ঐতিহাসিক এই শীর্ষ বৈঠক। কয়েক ঘণ্টা বৈঠক শেষে একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন। দুই নেতা এখন নতুনভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। এই বৈঠক জাতির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করছেন তারা। খবর বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস ও এএফপির। মঙ্গলবার ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চলা যৌথ সামরিক মহড়া তিনি স্থগিত করবেন। কারণ এটি খুবই উস্কানিমূলক। আর এই মহড়া খুব ব্যয়বহুলও। এই সামরিক মহড়া উত্তর কোরিয়াকে ক্ষিপ্ত করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা ৩২ হাজার মার্কিন সেনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন খুব দ্রুত পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে আশাবাদী। কিম জং বৃহৎ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সাইট ধ্বংস করতে রাজি হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে চলা অর্থনৈতিক অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। ট্রাম্প বলেন, কিমের সঙ্গে বৈঠক কল্পনার চেয়ে ফলপ্রসূ হয়েছে। উত্তর কোরীয় নেতা কিম যদি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় রাজি হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমরা এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত শুরু করব। আসলেই খুব, খুব দ্রুত। সংবাদ সম্মেলনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এয়ারফোর্স ওয়ানে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই তিনি সিঙ্গাপুর ত্যাগ করছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আলোচনার আর তেমন কোন বিষয়বস্তু নেই। রওনা দেয়ার ঠিক আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, আমরা এটা পরীক্ষা করতে যাচ্ছি, আমরা সেটা পরীক্ষা করব পরিপূর্ণভাবে। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে তিনি বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত শীর্ষ বৈঠকের পর তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রতি নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের ইঙ্গিত দেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে তিনি দুটি টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাতকার দেন। সিঙ্গাপুর থেকে ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে তিনি যাবেন গুয়াম ও হাওয়াইয়ে। যৌথ ঘোষণা সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছেন এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ ব্যাপক। এটি একটি দারুণ বিস্তারিত দলিল। এটি স্বাক্ষর করে তিনি ও ‘চেয়ারম্যান কিম’ দুজনেই খুব সম্মানিতবোধ করছেন। কিম বলেছেন, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছি এবং অতীত পেছনে ফেলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই বৈঠক হওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক এক বৈঠক হয়েছে। অতীত পেছনে ঠেলে ঐতিহাসিক একটি নথিতে সই হয়েছে। বিশ্ব ব্যাপক একটি পরিবর্তন দেখবে।’ চুক্তিতে সই হওয়ার পর দুই দেশের পক্ষ থেকে পরস্পরের প্রতি প্রশংসা করা হয় এবং ছবি তোলা হয়। চুক্তি সইয়ের পর ট্রাম্প বলেছেন, ‘কিমকে অবশ্যই আমি হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানাব।’ এ ছাড়া তার সঙ্গে ‘বিশেষ বন্ধন’ তৈরির কথা বলেন তিনি। কিমের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি খুব ভাল আলোচক। নিজের দেশের মানুষের পক্ষে তিনি সমঝোতা করছেন।’ কিমকে কেমন দেখলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, ‘খুব বুদ্ধিমান মানুষ। তার দেশকে তিনি খুব ভালবাসেন।’ আবার কিমের সঙ্গে বসার কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া দ্রুত পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচী শুরুর কথা বলেন তিনি। এদিকে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক এ বৈঠককে উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের দিক থেকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ওই বৈঠকের প্রশংসা করেছেন। ওয়াং ই আশা করেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে পরস্পর অবিশ্বাস ও প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে দেশ দুটি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এ প্রচেষ্টার সঙ্গে থাকবে এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাবে বলে আশা করছে চীন। বৈঠক শুরুর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা করমর্দন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর দুই দেশের পতাকা সজ্জিত স্থানে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প কিমের কাঁধে হাত রাখেন। পরে তারা আলোচনার জন্য সামনে অগ্রসর হন। এ সময় ট্রাম্প বলেন, ‘ আমি সত্যিই খুব দারুণ অনুভব করছি। খুবই চমৎকার এবং সফল একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক স্থাপিত হবে এবং এতে কোন সন্দেহ নেই আমার।’ এ সময় কিম জং উন বলেন, ‘ এখানে আসাটা মোটেই সহজ ছিল না। অতীত, পুরনো কুসংস্কার ও চর্চা বাধা হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আমরা সব বাধা অতিক্রম করেছি এবং আমরা এখানে একত্র হয়েছি।’ পরে তারা কোন দোভাষী ছাড়াই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনার জন্য একান্ত বৈঠকে বসেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিম জং-উনের যৌথ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন, জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক সংস্থার প্রধান ইউকিয়ো আমানো। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক আমানো এক বিবৃতিতে বলেন, যে কোন দেশের আমন্ত্রণে পারমাণবিক বিষয়ক যে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে তার সংস্থা প্রস্তুত। এদিকে ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি ট্রাম্প ও কিমকে অভিনন্দন জানান এবং তাদের সাহস ও প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, কোরীয় উপদ্বীপ একটি নতুন পথ খুঁজে পাবে। যুদ্ধ ও সংঘাতের অন্ধকার দিনগুলো পেছনে ফেলে আমরা সহযোগিতা ও শান্তির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করব। তবে তিনি উল্লেখ করেন, ৭০ বছরের বিভেদ ও শত্রুতা একটি কালো ছায়ার সৃষ্টি করেছে। আর এই কালো ছায়ার কারণেই বিশ্বাস করতে হচ্ছে, যা আমাদের চোখের সামনে ঘটল। জাপানোর প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবেও ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরের প্রশংসা করেছেন। তিনি এটিকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর টোকিওতে আবে বলেন, এটাকে পূর্ণাঙ্গ চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি আমরা।
×