ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী

অথঃ মওদুদ সমাচার

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৩ জুন ২০১৮

অথঃ মওদুদ সমাচার

অনেক দিন পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একটা ছবি দেখলাম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রচারিত খবরের সঙ্গে ছবিটা দেয়া হয়েছে। মওদুদ আহমদকে বহুকাল ধরে চিনি। তার ছাত্রজীবন থেকে। তখন থেকেই জানি, ক্ষমতায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি না থাকলে মওদুদ আহমদের চেহারা সুরত ভাল থাকে না। এ জন্যে বারবার দল বদল করতে তার সময় লাগেনি। কখনও তিনি জেনারেল এরশাদের ব্লু বয়, কখনও বেগম জিয়ার ডান হাত। জেনারেল জিয়াউর রহমানেরও তিনি প্রিয়পাত্র ছিলেন। পরে কী কারণে জেনারেল জিয়া স্বহস্তে চিঠি লিখে তাকে বরখাস্ত করেন। ব্যারিস্টার মওদুদ যদিও গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেন বলে দাবি জানান, কিন্তু জেনারেলদের কাছেই তিনি বেশি প্রিয়পাত্র। জেনারেল জিয়া তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। জেনারেল এরশাদ তাকে জেল থেকে বের করে এনে মন্ত্রী এবং ভাইস প্রেসিডেন্টও বানিয়েছিলেন। মওদুদ আহমদ এরশারেদর পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছেড়ে জিয়া-পতœীর কাছে ফিরে যান। জিয়া-পতœী বেগম খালেদাও যে তাকে খুব একটা বিশ্বাস করেন তা নয়। তথাপি মওদুদ জেনারেলদের এবং তাদের দলের সেবা করতেই ভালবাসেন। কিন্তু তার কণ্ঠে সব সময় গণতন্ত্রের বাণী। বিডিনিউজ-এর প্রচারিত খবরটির সঙ্গে মওদুদ আহমদের মাইকের সামনে বসা ছবিটি দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। খবরে বলা হয়েছে তিনি ঢাকায় ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের’ সভায় বক্তৃতা করছিলেন। তার চেহারা হাস্যোজ্জ্বল। তিনি আওয়ামী লীগকে কড়া ধমক দিয়ে বক্তৃতা করছিলেন, তার সঙ্গে এই হাস্যোজ্জ্বল চেহারা বেমানান। দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতাহারা এবং সম্প্রতি গৃহহারা হওয়ার পর মওদুদ আহমদের চেহারায় একটা মালিন্য ও হতাশার ছাপ পড়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার পর একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী এবং বিএনপির প্রবীণ নেতা হিসেবে তার যতোটা লম্ফঝম্প করার কথা ছিল। তা তাকে করতে দেখা যায়নি। কেবল জেলে বন্দী নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া এবং সভাসমিতিতে নিম্ন কণ্ঠে কিছু কথাবার্তা বলা ছাড়া মনে হচ্ছিল তিনি আড়ালে আবডালেই থাকতে চান। কিন্তু হঠাৎ সিংহের মতো গর্জন করে তার মঞ্চে আবির্ভাব এবং হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে চমকিত হয়েছি। তার এই হাসিতে হতাশা ও বিষণœতা নেই। উৎফুল্ল, চাপা হাসি। যে হাসিতে ঠোঁট ফাঁক হয় না, দু’দিকের গাল ফুলে যায়। চোখে যে হাসির আভাস দেখা দেয় তাকে মনস্তাত্ত্বিকেরা আখ্যা দিয়েছেন সাহস ও সততার হাসি নয়, ধূর্ততায় হাসি। মনে প্রশ্ন জাগল দলের এই দুর্দিন এবং নিজেরও এই ক্ষমতাহারা ও গৃহহারা অবস্থায় তার মুখে ধূর্ততার এই উৎফুল্ল হাসি কেন? কিছুক্ষণের মধ্যে ছবিটা ভাল করে দেখার পর প্রশ্নটার জবাব পেলাম। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের খবরটার সঙ্গে প্রকাশিত মওদুদ আহমদের ছবির নিচে লেখা আছে, ‘মওদুদ আহমদ (ফাইল ছবি)।’ এবার মনের ধান্ধা ঘুচল। মওদুদ আহমদের বক্তব্য এখনকার, কিন্তু ছবিটা পুরনো। বিবাহের কনের পুরনো এবং সদ্য যৌবন-ফোটা ছবি দেখিয়ে বরপক্ষকে যেমন প্রতারণা করা হয়, এটা কি সে রকম কিছু? মওদুদ আহমদের পুরনো ছবির কথা থাক্, তার গত সপ্তাহের বক্তব্যের কথায় আসি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পরও বিএনপির শীর্ষ অধিকাংশ নেতাই বলছেন, তাদের নেত্রীর নির্দেশ, তার মুক্তির আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হবে। কোন কারণেই অশান্তি সৃষ্টি করা যাবে না। হিংসার আশ্রয় নেয়া যাবে না। বিএনপি এ যাবত এই নির্দেশ মেনে চলেছে। এটা মেনে চলার একটা বড় কারণ, অতীতে বিএনপি বহুবারে আন্দোলনের নামে রাজপথে হত্যাকা-, সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তাতে অসংখ্য নিরীহ নর-নারীর মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়নি। দেশবাসীর কাছে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে পরিচিত হয়েছে। বিদেশে বিএনপির ভাবমূর্তি ধ্বংস হয়েছে। কানাডার আদালত পর্যন্ত বলেছে, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী দল’। এবার বিএনপি বড় রকমের কোন অশান্তি সৃষ্টি করতে যায়নি, পারেনি। এটা তার প্লাস পয়েন্ট। তারপর হঠাৎ এই পবিত্র রমজান মাসে মওদুদ আহমদের এই গর্জন কেন? মূষিক কি তাহলে সিংহ সাজতে চায়? ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ নামে এক ভুঁইফোড় সংস্থার (হয়তো বিএনপিরই ছায়া প্রতিষ্ঠান) সভায় তিনি সিংহ গর্জনে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে জোরালো কর্মসূচী দেয়া হবে। তবে তা দেয়া হবে উপযুক্ত সময়ে।’ তিনি দলের নেতাকর্মীদের সেজন্য ধৈর্য ধরার উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘এদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) কোন ভবিষ্যত নেই। কিছুদিন অপেক্ষা করুন। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কর্মসূচী দেয়া হবে। সেই কর্মসূচী হবে কঠোর। এটা কোনো নরম বা ভদ্রলোকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী হবে না।’ এটা একটা হুমকি। আমার প্রশ্ন, বিএনপি কি আবার দেশে অশান্তি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়? যদি চায় তাহলে হুমকিটি মির্জা ফখর বা রিজভি’র মুখ থেকে না এসে বিএনপির এখনকার প্রান্তিক নেতা মওদুদ আহমদের মুখ থেকে শোনা গেল কেন? দলে তারেক রহমানের উত্থানের পর বিএনপির বহু প্রবীণ ও শীর্ষ নেতা দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যেমন ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) ওলি এবং আরও অনেকে। এই প্রবীণ নেতাদেরই অন্যতম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এখন পর্যন্ত কি করে দলে টিকে রইলেন? বর্তমানে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেও এতোই কোণঠাসা হয়ে আছেন যে, দলের নীতি-নির্ধারণী কোন কথা বলার সুযোগ ও সাহস তার আছে কিনা তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ করেন। তাহলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে হঠাৎ এই ধরনের বড় রকমের নীতি-নির্ধারণী বক্তৃতা দেয়ার সাহস পেলেন তিনি কোথা থেকে? বিএনপির অন্দর মহল থেকেই শুনেছি, ডাঃ বি. চৌধুরী, কর্নেল ওলি প্রমুখকে দল ছাড়তে হয়েছে, কিন্তু মওদুদ আহমদ দলে রয়ে গেছেন। তার স্বভাবসুলভ চাতুরির বলে। প্রথমত, তিনি তারেক রহমানের রাজনৈতিক আত্মীয় (তারেকই জামায়াতকে তাদের আত্মীয় বলে ঘোষণা দেন) জামায়াতের কাছে অবাঞ্ছিত নন। দ্বিতীয়ত, তিনি নিজের বয়স, সিনিয়রিটি ও সম্মানের পরোয়া না করে তারেক রহমানকে দেখামাত্র বান্দা হাজির বলে মাথা নত করে কুর্নিশ করতে পারতেন। অন্যদিকে ডাঃ বি. চৌধুরী, কর্নেল ওলি প্রমুখকে জামায়াত পছন্দ করতো না এবং তারা আত্মসম্মানের খাতিরে তারেক রহমানকে কুর্নিশ করতেও চাইতেন না। এটা বিএনপির অন্দর মহলের খবর। কতোটা সঠিক জানি না। তবে সত্যের কাছাকাছি বলে বিশ্বাস হয়। সম্প্রতি মওদুদ আহমদের এই হুঙ্কারের পর বিএনপি’র অন্দর মহল থেকেই আরেকটা খবর শুনছি, এটা নাকি বিএনপির নতুন রণকৌশল। অর্থাৎ খালেদা জিয়া ও তার একান্ত অনুগতরা বলবেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা। কিন্তু তারেক রহমান বিলাতে নিরাপদ অবস্থানে থেকে হুমকি দেবেন হিংসা ও সন্ত্রাস দ্বারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাবার। এই ব্যাপারে তারেক রহমান নিজে মুখ খুলবেন না। দলের যদু মধুকে দিয়েও কথা বলাবেন না। দলে এখনও মওদুদ আহমদের মতো প্রবীণ নেতা আছেন। তাকে দিয়ে কথাটা বলালে যুৎসই হয়। আর মওদুদ আহমদও তারেকের কৃপাদৃষ্টি পেলে ধন্য হন। অর্থাৎ দুয়ে দুয়ে চার হয়। তাই খবরটি অবিশ্বাস্য মনে হয় না। আনুগত্যের খেলায় মওদুদ আহমদ সব খেলা খেলতে জানেন। বিএনপির এই দ্বিমুখী নীতির খবর যদি সঠিক হয় তাহলে এর একটা তাৎপর্য আছে। বিএনপি দেশে এবং বিদেশে এখন একটি সন্ত্রাসী দল বলে পরিচিত। ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদের দশম নির্বাচন বর্জন করে তা বানচাল করার জন্য তারা আন্দোলনের নামে টানা হরতাল চালিয়ে দেশময় সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। পরের বছর আবার টানা ৯০ দিন হরতাল পালনের নামে আগুনে বোমায় অসংখ্য নরনারী হত্যার পরও বিএনপি তার উদ্দেশ্য সফল করতে পারেনি। দেশবাসীর কাছে ধিকৃত হয় এবং বিদেশেও সন্ত্রাসী দল বলে চিহ্নিত হয়। এবার তাই বিএনপির নতুন রণকৌশল। দলের শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ বলবেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা। তাদের একজন বা কিছুসংখ্যককে দিয়ে বলানো হবে আবার অশান্তি সৃষ্টির কথা। তারা লক্ষ্য করবেন দেশের মানুষ কোন্টি চায়? যদি তারা দেখেন দেশের মানুষ সত্যই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন চায় তাহলে তারা ব্যাঘ্রমূর্তিতে আবার আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস ও হত্যাযজ্ঞে নামবেন। আর যদি তারা দেখেন দেশের মানুষ অশান্তি চায় না, নির্বাচন চায় (তারা নির্বাচনই চাচ্ছে) তাহলে নানা ধরনের দরকষাকষি, হুমকি-ধমকির পর লেজ গুটিয়ে নির্বাচনে আসবেন। বিদেশীদের কাছেও তাদের সন্ত্রাসী ভাবমূর্তি মুছে ফেলে ভাল মানুষ সাজবেন। এবং তাদের সহানুভূতি ও সাহায্য চাইবেন। বিএনপির মধ্যে ভিকটিম সিনড্রম আছে এবং সেটা দেখাতে তারা খুবই পারদর্শী। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ শুধু দলের নীতি পরিবর্তনের ঘোষণাই দেননি, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। দলের নেত্রী কর্তৃক ঘোষিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিচালনার নীতি বদল করে হিংসাত্মক পন্থা গ্রহণের কারণ বর্ণনা করে বলেছেন, ‘কারণ আমরা জানি কোন ফ্যাসিবাদী সরকারকে, কোন স্বৈরাচারী সরকারকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে উৎখাত করা যায় না। পৃথিবীর কোথাও সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশেও অতীতে হয়নি।’ মওদুদ আহমদ একজন দক্ষ আইনজীবী হয়েও গোড়াতেই ভুল করেছেন। গণবিপ্লব আর সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতি এককথা নয়। অতীতে বাংলাদেশে যত গণবিপ্লব বা গণআন্দোলন হয়েছে, যেমনÑ উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বা নব্বুইয়ের গণআন্দোলন কোনটাতেই সন্ত্রাস ও হত্যা ছিল না। জনগণকে ভয় দেখানোর ক্যাডার-সন্ত্রাসও ছিল না। সেই আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। আন্দোলনকারীরা নিরীহ মানুষ হত্যা করেনি। আর এই আন্দোলনগুলোও পরিচালিত হয়েছে সামরিক ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। মওদুদ আহমদ নিজেও তো ১৯৯০ সালে যে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় তার সদস্য ছিলেন। এগুলো সবই ছিল গণআন্দোলন। পরবর্তীকালে বিএনপি যা করেছে সবই ছিল গণহত্যা। আগুনে পুড়িয়ে নারীপুরুষ শিশু হত্যার বর্বরতা। তাতে সাধারণ মানুষ ভীত হয়েছে, কিন্তু বিএনপিকে সমর্থন দেয়নি। বিএনপির গণসমর্থন-বঞ্চিত সন্ত্রাস বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে। আসলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করার শক্তি তাদের নেই। শক্তি থাকলে কেউ হুঙ্কার দেয় না। কথায় বলে অক্ষমের দম্ভই সার। আর আওয়ামী লীগ তো কোন ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী দল নয়। পাকিস্তানের স্বৈরাচারী ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তার জন্ম। আর বিএনপির জন্ম ক্যান্টমেন্টে এক সেনাপতিকে ক্ষমতায় রাখার স্বার্থে। মওদুদ আহমদ এই সামরিক ফ্যাসিবাদী দল এবং তার পরবর্তী এরশাদের ফ্যাসিবাদী দলেরও সেবাদাসের ভূমিকা নিয়েছেন। এখন তিনিই বলুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দল কোন্টি? আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিশাল জয়লাভের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। নির্দিষ্ট সময়েই (২০১৪) তারা নিবআচন দিয়েছে। বিএনপি নানা বাহানায় নির্বাচনে আসেনি। তাই বলে নির্বাচন কি অবৈধ হয়ে গেল? ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনেও তো মওলানা ভাসানীর ন্যাপ (তখন পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি তৃতীয় বৃহত্তম দল) অংশ নেয়নি, তাই বলে কি সেই নির্বাচন অবৈধ বলে কেউ মনে করেছে? বিএনপির অভিযোগ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির কোন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে বিএনপি ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান দ্বারা সারা বিশ্বে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। তারপর গণআন্দোলনে তাদের পতন হয়। এই দলের মুখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনের কারসাজির কথা কি শোভা পায়? আওয়ামী লীগ এবারও নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন দিয়েছে। নির্বাচন দ্বারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হিংসা ও সন্ত্রাসের দ্বারা তাকে উচ্ছেদের এই হুমিক কেন? বাপের বেটা হলে মওদুদ সাহেবেরা নির্বাচনে আসুন, জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যান। নির্বাচন বর্জন করে পেট্রোলবোমা নিয়ে মাঠে নামবেন না। নিরীহ মানুষ হত্যা করবেন না। তাতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবেন না; বরং নিজেরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। পেছনে একবার তাকিয়ে দেখুন কোথায় আজ জিয়াউর রহমান, হুসেইন এরশাদ? বিএনপির মাদাম জেনারেল? যিনি দম্ভভরে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগামী পঞ্চাশ বছরেও ক্ষতায় আসতে পারবে না। সেই অহঙ্কারী নেত্রীও আজ কারাবন্দী। তার মুক্তির জন্য মওদুদ সাহেবেরা আন্দোলনের জন্য দেশের মানুষকে ডাক দিয়েও কোন সাড়া পাননি। তারা পারবেন গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে? মওদুদ সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি, তার আইনের কেতাবে সন্ত্রাস আর আন্দোলন কি এক কথা? তিনি সন্ত্রাস আবার শুরু করার কেন হুমকি দিচ্ছেন? জন্মাবধি তার দলতো কেবল সন্ত্রাসই করেছে। আন্দোলন কবে করেছে? বিএনপি নেতারা আয়নায় একবার নিজেদের চেহারা দেখুন। এদেশের সবচাইতে বড় সন্ত্রাসী কি মওদুদ আহমদের বর্তমান নেতা তারেক রহমান নয়? আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপি করবে বিএনপি নেতারা এই আশঙ্কা করলে তারা কঠোর পর্যবেক্ষক টিম গঠন করুন। জাতিসংঘের শক্ত পর্যবেক্ষক টিম ডেকে আনুন। তারপরও নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে প্রমাণিত হলে আন্দোলনে নামুন। তখন দেশের মানুষকে সঙ্গে পাবেন। তা না করে হত্যা, সন্ত্রাস ও গু-ামি দ্বারা সরকার উচ্ছেদ করতে চাইলে তারা ব্যর্থ হবেন। মওদুদ সাহেবের অতীতের ও বর্তমানের নেতা যথাক্রমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বেগম জিয়া যেমন ১৯৯০ ও ১৯৯৬ সালে জনতার রোষে পতিত দেব-দেবী হয়েছিলেন, মওদুদ সাহেবদেরও সেই পরিণতি ঘটবে। মওদুদ আহমদ তার দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আমি তাকেই আগামী ছয় মাস ধৈর্য ধরতে বলি। তারপর দেখুন কী হয়! লন্ডন, ১২ জুন, মঙ্গলবার, ২০১৮
×