ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্নমানের নতুন গাড়িতে বাজার সয়লাবে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৮:০১, ১২ জুন ২০১৮

নিম্নমানের নতুন গাড়িতে বাজার সয়লাবে শঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবচয় সুবিধা কমিয়ে নতুন গাড়ির চেয়ে পুরনো গাড়ি আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে। এতে করে ১ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাবে জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম। অন্যদিকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বাড়ানোর ফলে নিম্নœমানের নতুন গাড়ির বাজার তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি সেটা হয়, তাহলে তা পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা দেশে বেড়ে যাতে পারে। এ লক্ষ্যে নতুন-পুরাতন গাড়ির শুল্ক বৈষম্য দূরীকরণে ইয়োলো বুকের নতুন মূল্য হতে ডিলার, ট্রেড ডিসকাউন্ড বাবদ ১০ শতাংশ বিয়োজন পূর্বক বছরভিত্তিক অবচয়ের হার পূর্ববর্তী অবস্থায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস্ ইম্পোর্টার্স ডিলারস এ্যাসোসিয়েশন-বারভিডা’র পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সভাপতি মোঃ হাবিব উল্লাহ ডন। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ শরীফ, আনোয়ার হোসেন ও আবদুল মান্নান চৌধুরী খসরু ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, নতুন গাড়ি আমদানিতে কর ফাঁকিতে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি অনেক কমে গেছে। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, কোন অবস্থাতেই নতুন গাড়ির শুল্ককর রিকন্ডিশন গাড়ির চেয়ে কম হতে পারে না। অথচ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনাও নিদারুণভাবে উপেক্ষিত। তিনি বলেন, জনবান্ধব সরকারের কাছে আমরা ভোক্তা প্রিয় নিরাপদ টেকসই ও সঠিক রাজস্ব প্রদানকারী গাড়ি হিসেবে রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানি, বিপনন ও ব্যবহারের আরও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকা- উপযোগী করতে একটি স্থিতিশীল ও গ্রহণযোগ্য শুল্ক নীতিমালার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বারভিডা সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অবচয় সুবিধা হ্রাস করায় ধনীরাই উপকৃত হবেন। মধ্যবিত্তদের গাড়ির দাম আরও বাড়বে। তিনি বলেন, নতুন গাড়ির সম্পূরক শুল্কে হাত দেয়া হয়নি। কিন্তু রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এ বাজেটে কোন সুসংবাদ নেই। নতুন গাড়ির শুল্ক পুরাতন গাড়ির চেয়ে কম হতে পারে না, অর্থমন্ত্রী এটা নিজে বলেছেন, কিন্তু সেখানেও এনবিআর তা বাস্তবায়ন করেনি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিকন্ডিশন গাড়ির শতভাগ জাপান থেকে আসে। ২ থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার ব্যবহারের পর অনেকেই তা বিক্রি করে দেয়। আমরা ৩ বছরের অবচয় সুবিধা পাই, ২ বছরের পাই না। উদাহরণস্বরূপ ১৫০০ সিসি’র ২০১৭ সালে তৈরিকৃত ও ব্যবহৃত একটি টয়োটা এক্সিও গাড়ির ক্ষেত্রে শুল্ক ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা এবং ২০১৮ সালে তৈরিকৃত একই নতুন বা ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির শুল্ক ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তাছাড়া ২০০০ সিসি’র ২০১৭ সালে তৈরিকৃত রিকন্ডিশন মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার জিপের শুল্ক ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এদিকে, ২০১৮ সালে তৈরিকৃত একই নতুন গাড়ির শুল্ক কর ২৭ লাখ ২০ হাজার ৬৬৩ টাকা। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ শরীফ বলেন, পুরাতন গাড়ির শুল্ক কখনও নতুন গাড়ির চেয়ে বেশি হতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক বৈষম্য হ্রাস করার দাবি রয়েছে আমাদের। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুষ্পষ্ট দিক নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু তারপর কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, এ বছর অবচয়ন সুবিধা ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে পুরাতন গাড়ির দাম বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে মধ্যবিত্তের ওপর। পুরাতন গাড়ির ক্ষেত্রে অবচয়ন সুবিধা কমিয়ে আনতে এখন ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে পুরাতন গাড়ির আমদানিকারকদের ব্যবসা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পাস হওয়ার আগে নতুন-পুরাতন গাড়ির শুল্ক বৈষম্য নিরসন করার দাবি জানাচ্ছি। পোশাক খাতের কর্পোরেট কর কমানোর দাবি ইএবি’র ॥ পোশাকখাতের কর্পোরেট করহার কমানোর দাবি জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। সংগঠনটির সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী লিখিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তৈরি পোশাক খাতের কর্পোরেট কর ১২ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের কর্পোরেট কর কমানো হয়েছে। কিন্তু যে খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে, সেই পোশাক খাতের কর্পোরেট কর বাড়ানো হয়েছে। ইএবি মনে করে, কর্পোরেট কর বাড়ানোর ফলে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, পোশাকশিল্পে কর্পোরেট কর হার ১০ শতাংশ নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। তৈরি পোশাক রফতানি খাতের যৌক্তিক দাবি ছিল পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশ, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানে আরও সক্ষমতা বৃদ্ধি পেত। শিল্পের স্বার্থে কর্পোরেট কর ১০ শতাংশ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ রইল। পরিবেশবান্ধব কারখানার জন্য কর্পোরেট কর কমপক্ষে ৫ শতাংশ কমানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য উৎসে কর কর্তনের হার ০.৭০ প্রযোজ্য আছে, যা ১ জুলাই থেকে ১ শতাংশ হিসাবে উৎসে কর বাস্তবায়িত হবে। যদি ১ শতাংশ হারে উৎসে কর বাস্তবায়িত হয় তাহলে রফতানিমুখী শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে, শিল্পের সক্ষমতা কমে যাবে। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী পুনর্বিবেচনা করবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী উৎসে কর ০.২৫ ভাগ করা এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বলবৎ রাখা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, যা আমাদের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি, যাতে করে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বজায় থাকে। সুদের হার না বাড়ে, যেন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করি। সব ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার দাবি ॥ সব ধরনের প্লাস্টিক ব্যাগ ও মোড়ক সামগ্রীর ওপর থেকে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)। একই সঙ্গে প্লাস্টিকের তৈজসপত্র এবং আহরিত বর্জ্য থেকে রি-সাইক্লিং করে দানা উৎপাদনকারী প্লাস্টিকের প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, ১৫০ টাকা পর্যন্ত দামের প্লাস্টিক ও রাবারের হাওয়াই চপ্পল, ও পাদুকরা ওপর থেকে মূসক অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টায় দেশের রফতানি বাণিজ্য বাড়ছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সামনে এসডিজি অর্জন এবং মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার মতো বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রফতানি বাড়ানো প্রয়োজন। এ কারণে রফতানিতে উৎসে কর .০৭০ কমিয়ে .০৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। প্রস্তাবিত বাজেটে এ হার ১ শতাংশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ শিল্প উন্নয়নে প্লাস্টিক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় স্প্রেয়ার পার্টস ও অন্যান্য শিল্পখাতের ন্যায় রেয়াতি হারে আমদানি করার সুযোগ দিতে হবে।
×