ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের কূটনৈতিক পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১২ জুন ২০১৮

ট্রাম্পের কূটনৈতিক পরীক্ষা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি এক সময় বলেছিলেন উনের সঙ্গে বৈঠকে বসাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হোক সেটি তিনি চান না। তার ওই কথা শান্তিকামী মানুষ হতাশ হয়েছিল। সিঙ্গাপুরে বহু প্রত্যাশিত এ বৈঠকে যাবেন না বলেও তিনি কয়েকমাস আগে বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুই নেতা বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস। ১৯৬০ এর দশকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রায় পরমাণু যুদ্ধের কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। এবারের বৈঠকটি ট্রাম্পের জন্য পরমাণু অস্ত্রের হুমকি থেকে মুক্ত হওয়ার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। ট্রাম্পের তিন পূর্বসূরি এ নিয়ে কাজ করেও সফল হতে পারেননি। উত্তরসূরিদের কাছ থেকে ট্রাম্প ও তার প্রশাসন উত্তর কোরিয়া সমস্যাটি পেয়েছে। ট্রাম্প সব সময় প্রথার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। উনের সঙ্গে এবারের বৈঠককে দেখা হচ্ছে অপ্রথাগত উপায়ে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের চেষ্টা হিসেবে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর টেনে ধরার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর তার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ওবামা বলেছিলেন উত্তর কোরিয়াই হবে তার জন্য সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তবে উত্তর কোরিয়া নিয়ে কিছু একটা করার কথা ট্রাম্প এরও অনেক আগে থেকে চিন্তা করেছেন। ১৯ বছর আগে ট্রাম্প বলেছিরেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের আগে দেশটির ক্ষ্যাপাটে শাসকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত। পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়া এখন যেমন হুমকি হয়ে উঠেছে ১৯ বছর আগে দেশটি স্বাভাবিকভাবেই এতটা ক্ষমতাধর ছিল না। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারভিযান চালানোর সময় ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি প্রেসিডেন্ট হলে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এমনকি গত বছর যখন দুই দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ একে অন্যের বিরুদ্ধে বাগযুদ্ধে লিপ্ত তখনও তিনি সরাসরি বৈঠকে বসার বিকল্পটি হাতছাড়া করেননি। তিনি এমন হুমকিও দেন যে, উত্তর কোরিয়া যদি আমেরিকাকে টার্গেট করে তবে উত্তর কোরিয়ার অবস্থা হবে ‘ফায়ার এ্যান্ড ফিউরি’র (আগুনে ভস্মীভূত) মতো। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কোরিয়া বিষয়ক সাবেক আলোচক জোসেফ ইউন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ভেবেছেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে থেকেই উত্তর কোরিয়া তার আগ্রহের বিষয় ছিল। দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া যথাযথ গতিতে এগোচ্ছে না এরকম হতাশা থেকে ইউন গত বছর পদত্যাগ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রশাসন উত্তর কোরিয়া নীতি নতুন করে পর্যালোচনা করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়েছেন। শনিবার কানাডায় জি-৭-এর শীর্ষ বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প বেশ আস্থার সঙ্গে বলেন, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যায্য বাণিজ্য সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করবে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। ওই সম্মেলনেই তাকে কিম উনের সঙ্গে আসন্ন বৈঠক নিয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তিনি যে কয়েক মাস আগেও উনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বাক্যবাণ ছুড়েছেন সেটি যেন ভুলেই গিয়েছেন। দুজন দুজনকে পাগলও বলেছেন। কয়েক মাস আগেও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ওপর ‘আগুনের বৃষ্টি ঝরানোর’ হুমকি দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, কিম যুক্তরাষ্ট্রের মূলভূখ-ে আঘাত হানতে সক্ষম পরমাণু অস্ত্র তৈরিকে তার দেশ অনেকটা অগ্রসর হয়েছে বলে সতর্ক করেছেন।’
×