ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংস্কার চায় বাংলাদেশ চেম্বার

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১১ জুন ২০১৮

বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংস্কার চায় বাংলাদেশ চেম্বার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর বোর্ডরুমে শনিবার ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর আলোচনার জন্য বিসিআই সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধূরী বাবুর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নিম্নোক্ত প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। বিসিআইয়ের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ১২টি বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, ২০১৮-২০১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, জ্বালানি, অবকাঠামো, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উদ্যোগ ও গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়ন অবকাঠামোসহ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে এ সকল লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতা ও ভাতা বৃদ্ধি, পরিবহন ও যোগাযোগ, জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যা আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি অবকাঠামো খাতে ২৪ হাজার ১৭৩ কোটি ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৪৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখন অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের গুণগত মান যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এ সকল বিষয়সহ সমগ্র বাজেট বাস্তবায়নে সরকারকে উচ্চমানের দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং সুলভ অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থবছরের শেষ ৩ মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরও বলা হয়, রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ১৪ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ হারের বেশি না হওয়া সত্ত্বেও প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা বাস্তবসম্মত নয় এর ফলে উৎপাদনশীল খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়। বাজেটে করনেট বৃদ্ধির কোন ঘোষণা নেই যার ফলে নিয়মিত করদাতাদের ওপরই চাপ বৃদ্ধি পাবে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা এবং আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্য দিকে ই-কমার্সে মূসক মুক্ত রাখা হয়েছে পক্ষান্তরে সরাসরি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মূসক বিদ্যমান থাকলে অসঙ্গতি সৃষ্টি হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্য শুল্ক-কর বৃদ্ধি করা হলেও রফতানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এটি অত্যন্ত জনস্বাস্থ্যবিরোধী একটি পদক্ষেপ। এর ফলে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে জমির উর্বরতা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার নির্দেশনা উপেক্ষিত হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট করহারে শুধু ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। যে সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্প্রেড ৩ শতাংশের মধ্যে রাখবে এবং কৃষি, শিল্প ও রফতানি এসএমই ও নারি উদ্যোক্তা খাতে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী ব্যাংকগুলোকেই কেবলমাত্র এই সুবিধা প্রদান করার প্রস্তাব কর হয়। তবে আমাদের সামনে বেশকিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা, বিনিয়োগের স্থবিরতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তুতি, চলতি হিসাবে ঘাটতি। এসব বড় চ্যালেঞ্জের জন্য সুনির্দিষ্ট সংস্কার কর্মসূচী প্রয়োজন রয়েছে।
×