ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজাহান মিয়া

হাইড্রোলিক হর্নের অসহনীয় তান্ডব বন্ধ করা জরুরী

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১১ জুন ২০১৮

 হাইড্রোলিক হর্নের অসহনীয় তান্ডব বন্ধ করা জরুরী

শব্দ, শব্দ, শব্দ! চারদিকে ভয়ঙ্কর সব শব্দ। কান ফাটানো, বুক ফাটানো বিকট শব্দ। সকাল থেকে সন্ধ্যা, রাত থেকে ভোররাত- সব সময় কেবল শব্দ আর শব্দ। প্রতিনিয়ত এই শব্দ সন্ত্রাস রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব শহর, নগর ও বন্দরে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি, একটি বড় রাস্তার এক শত ফুটের মধ্যে আমার বাসার অবস্থান হওয়ায় অনেক সময় রাতে কানে তুলা দিয়ে শুয়েও এ ধরনের শব্দের হাত থেকে বাঁচা যাচ্ছে না। রাতে ঘুমের একটু আরাম একেবারে হারাম হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্নভাবে শব্দদূষণের তা-ব মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আরও একবার লিখার তাগিদ বোধ করছিলাম। যদিও লিখে আর কি হবে এ হতাশা ও দুঃখবোধটা মনের মধ্যে গভীরভাবে কাজ করছিল, তবুও মনকে একটু প্রশমিত করার জন্যই বিষয়টি নিয়ে আরও একবার লিখার ইচ্ছা প্রবলভাবে জেগে ওঠে। তাই নতুন করে আবার আমার এই প্রয়াস। যদিও যাদের উদ্দেশে লেখা তারা যদি জনসাধারণের স্বার্থে সমস্যাটি সমাধানে এগিয়ে না আসেন, তা হলে তো দুঃখের আর সীমা থাকে না। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা ‘কানে দিয়েছি তুলো পিঠে বেঁধেছি কুলো’ মন্ত্র নিয়ে ঠায় বসে থাকেন। ভাবখানা এমন যেন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকেও তাদের নজর দেয়ার একেবারেই কোন সময় নেই। শব্দদূষণ একটি মারাত্মক নীরব ঘাতক, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের ক্ষতি সাধন করে। শব্দদূষণ মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যার রূপ পরিগ্রহ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে নদী-খাল-বিল এবং অন্য জলাশয়গুলো দূষণ ও দখলের ঘৃণ্য প্রতিযোগিতার ফলশ্রুতিতে অবধারিত বায়ুদূষণের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শব্দদূষণ। আসলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা। নদী দখল ও দূষণ এবং বিপর্যয়কর বায়ু ও মারাত্মক শব্দ দূষণের কবলে পড়ে ঢাকার পরিবেশ ভয়ঙ্কর দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে এসব এলাকায় বসবাসকারী অসহায় মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত প্রচ- স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এসব এলাকার নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ শূন্যের কোঠায়। এছাড়া শব্দ দূষণ কোথায়ও সহনীয় মাত্রায় নেই। দূষণের মাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় এসব যায়গায় বিশুদ্ধ পানি ও বায়ুর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বুড়িগঙ্গার ভয়ঙ্কর দূষিত পানি, ভারি সীসাযুক্ত বাতাস, মারাত্মক শব্দদূষণ এবং ত্রুটিপূর্ণ পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে মহানগরী ঢাকাকে। বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে মেগাসিটি ঢাকা। পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ। বাংলাদেশে এখন ভয়ঙ্কর দূষণের নাম হচ্ছে শব্দদূষণ। সহনীয় মাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি শব্দের মধ্যে বাস করতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকার মানুষদের। কেউ কেউ এটাকে আরও বেশি খারাপ বলে মনে করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ মানুষের জন্য সহনীয়। অথচ রাজধানী ঢাকায় অনেক এলাকায় শব্দ উৎপন্ন হয় এক শত ডেসিবলের ওপরে। বিশেষজ্ঞদের মতে হঠাৎ ১৪০ ডেসিবল শব্দমাত্রা আমাদের কানে বা শ্রবণেন্দ্রীয়তে প্রচ- ব্যথা তৈরি করতে পারে। ১৯০ ডেসিবল মাত্রা শ্রবণ শক্তি একেবারে নষ্ট করে দিতে পারে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে শব্দদূষণের মাত্রা ৮০ থেকে ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত। কোন কোন স্থানে ১১০ ডেসিবলের চেয়েও বেশি এবং এই মাত্রা ক্রমান্বয়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। ৬০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার মধ্যে দীর্ঘদিন বাস করলে শ্রবণশক্তি কমে যায়। হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বৃদ্ধি পায়। শিশুদের বেড়ে ওঠা হয় বাধাগ্রস্ত। শব্দদূষণের কারণে হৃদরোগ, অনিদ্রা, মাথাধরা-মাথাব্যথা, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। উচ্চ শব্দে ছোট শিশুদের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ক্রমাগত উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস করে, রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, হৃদযন্ত্রের কম্পন বৃদ্ধি করে, শিশুদের বেড়ে ওঠা ব্যাহত করে, গর্ভবতী মায়েদের মৃত সন্তান জন্ম দেয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। শব্দদূষণ হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এবং মাংসপেশিতে খিঁচুনির সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শব্দদূষণের ফলে ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশ মনসংযোগে বিঘœ সৃষ্টি করে। উচ্চমাত্রার শব্দ ছেলেমেয়েদের মধ্যে অস্থিরতা ও উগ্র মনোভাব সৃষ্টিতে অনেকাংশে দায়ী। তবে বিভিন্নভাবে সৃষ্ট শব্দ ছাড়াও ঢাকা মহনগরীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাস-ট্রাক-লরীর কর্ণবিদারী জঘন্য শব্দসন্ত্রাসের আগ্রাসনের যাঁতাকলে প্রতি মুহূর্তে পিষ্ট হচ্ছে নগরবাসী। এটাকে নির্দ্বিধায় একটা বড় ধরনের জীবনবিনাশী সন্ত্রাসমূলক কর্মকা-ই বলা যায়। ঢাউস ঢাউস সাইজের বাসগুলোর আরেক কথায় যন্ত্রদানবগুলোর চালক নামক দুর্বৃত্তগুলোর দস্যুতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বেআইনীভাবে বেশিরভাগ বড় বাসগুলোতে হাইড্রোলিক হর্ন লাগিয়ে এবং শুধু শুধু তা বাজিয়ে রাস্তায় ত্রাস সৃষ্টি করে। প্রায়ই বড় বড় বাসের দস্যুপ্রকৃতির এই চালকগুলো একই সময়ে রাস্তার দু’পাশেই বিকট শব্দে অযথা হর্ন বাজিয়ে মানুষের মধ্যে ভয়ানক ভীতির সৃষ্টি করে। পথচারী বা রিক্শার যাত্রীসহ অন্যান্য ছোট ছোট যানে চলাচলকারী অসহায় মানুষদের কিছুই করার থাকে না। রাজধানী ঢাকায় কান ফাটানো হর্ন বাজানো যেন একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা ফাঁকা থাকলেও চালকরা জোরে হর্ন বাজায়। ওদের বেপরোয়া ও নির্লজ্জ মনোভাবের কোন সীমাপরিসীমা নেই। ওরা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। ওরা নিজেরা নিজেদেরকে রাস্তার মহারাজা বলেই মনে করে। যেমন আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যানজটের আটকা পড়ে আছে সব ধরনের যানবাহন। কোনদিকে যাওয়ার উপায় নেই। তারপরও বড় বড় বাসের চালকরা হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে রিক্সার যাত্রী, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী এমনকি পথচারীদের কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এটা স্রেফ পশুর মতো আচরণ। কোন রিক্সায় বা বাবা-মায়ের সঙ্গে কোন অবুঝ শিশু থাকলে ঐ কোমলমতিদের কি অবস্থা হয় তা সহজেই অনুমেয়। আমি নিজে দেখেছি হাইড্রোলিক হর্নের বিকট আওয়াজে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চলন্ত রিক্সায় মায়ের কোলে থাকা অবুঝ শিশুর কি বুকফাঁটা চিৎকার। কিন্তু মানুষ নামের পশু শ্রেণীর বাস-ট্রাক-লরীর ড্রাইভার বাহাদুরদের সে বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এই ঘৃণ্য মানসিকতা সভ্য সমাজে আর চলতে পারে না। এটা জরুরী ভিত্তিতে বন্ধ করতে সামাজিক অন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে অনেকেই মনে করছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা উড়ন্ত ধূলাবালি উদরস্থ করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালনের সময় হাইড্রোলিক হর্নের তা-বটা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা বুঝতে পারলেও তারাও থাকেন একেবারেই নির্বিকার। মনে হয় তাদেরও কিছু করার নির্দেশ নেই। রাস্তায় চলাচলকারী সহজ সরল মানুষগুলো আসলেই অসহায়। রিক্সায় চলাচলকারী গরিব, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের এই দুর্বৃত্তপণা মুখ বুঁজে সহ্য করা ছাড়া তাদের আর কিছুই করার থাকে না। দেশের বিভিন্ন রকম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন বাড়ছে শব্দদূষণের মাত্রা। রাতের বেলায় আবাসিক এলাকায় শব্দ সৃষ্টিকারী নির্মাণকাজসহ যে কোন ধরনের কাজ বন্ধ করতে হবে। ঢাকা শহরের সর্বত্র দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। শব্দদূষণ আইনে উল্লেখ আছে আবাসিক এলাকার ৫০০ গজের মধ্যে ইট ভাঙ্গার মেশিনসহ শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী কোন ধরনের কাজ করা যাবে না। এমনকি দিনের বেলায়ও তা করা যাবে না। নির্মাণকাজের জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল বিশাল লোহার পাত বা বড় বড় রড ট্রাক থেকে নিচে ফেলার সময় সৃষ্ট শব্দে আশপাশের মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। গায়ে হলুদ, বিয়ে, জন্মদিন, নববর্ষ ইত্যাদি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আশপাশের মানুষের অসুবিধার কথা বিন্দুমাত্র বিবেচনায় না নিয়ে অত্যন্ত উচ্চমাত্রার শব্দসৃষ্টিকারী সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে। ফলে, প্রতিবেশীদের রাতের ঘুমের মারাত্মক ব্যাঘাতই ঘটে না হৃদরোগীদের হৃদকম্পন বেড়ে যায়। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনারও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ভ্যানগাড়িতে মাইক দ্বারা উচ্চ স্বরে প্রচার চালিয়ে পণ্য ও লটারির টিকিট বিক্রিও বন্ধ করতে হবে। অধিকাংশ গাড়িতে পূর্বে সংযোজিত হর্নটি পাল্টে ফেলে বা সেটি রেখেই অনেক বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন লাগানো একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিগন্যালে লাল বাতি দেখে থেমে যাওয়া যানবাহন সবুজ বাতি দেখতে না দেখতেই রেসের ঘোড়ার মতো পাল্লা দিয়ে সামনের দিকে ধাবিত হয়। মোটরসাইকেল চালকরা গন্ডারের মতো ভোঁ ভোঁ করে তেড়ে আসতে থাকে। অনেক স্থানে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকেলেও ‘লাটভাই’ খেতাব অর্জনকারী মোটরসাইকেল চালকরা হর্ন বাজাতে বাজাতে ধেয়ে চলে দোর্দ- প্রতাপের মহড়া দিয়ে। আবাসিক এলাকার ভেতরে গলিপথ দিয়ে হাঁটলেও শোনা যায় প্রাইভেটকারের তীব্রভাবে হর্ন বাজানোর আওয়াজ। পথচারীদের চমকে দিয়ে তাদের হৃৎপিন্ডে কাঁপন ধরিয়েও যেন তাদের শান্তি হয় না। কোন ভ্রুক্ষেপ করে না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, শব্দদূষণরোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ বা উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বিভিন্ন মডেলের নতুন নতুন গাড়ি নামছে। সীমিত রাস্তায় যানবাহন চলছে সীমাহীন সংখ্যায়। সেই সঙ্গে সীমাহীন উচ্চ শব্দ। এ্যাম্বুলেন্সের একটানা সাইরেন বাজানো সবচেয়ে অসহনীয় মনে হয়। সাইরেন বাজতেই থাকে। কোন থামাথামি নেই। এরকম শব্দের তান্ডবে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। তাই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী বাস-ট্রাক-কারসহ সকল যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান পরিচালনা জরুরী হয়ে পড়েছে। শব্দদূষণ তথা শব্দসন্ত্রাস বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। সমাজের নাগরিকদের তরফ থেকে জোরালো সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাও প্রয়োজন। সমস্যাটি হচ্ছে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতা ও সমাজের বিত্তশালীরা রাস্তায় চলাচল করেন বিশাল বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে। তাদের তো উচ্চশব্দ সৃষ্ট সমস্যাটির সঙ্গে একবারেই পরিচিত থাকার কথা নয়। তারা বসবাসও করেন রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায়। সেখানে হয়তো হাইড্রোলিক হর্নের শব্দ ঢুকতেও ভয় পায়। তা না হলে যানবাহনের ড্রাইভার এমনকি মালিকদের দস্যুপনার দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে না কেন? যারা বড় রাস্তার পাশে বসবাস করেন তাদের দুর্দশার আর শেষ নেই। হাইড্রোলিক হর্নের নির্মমতায় বাসায় তাদের টেকা দায় হয়ে পড়ে। পত্র-পত্রিকায় হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে এত লেখালেখির পরও যানবাহনের চালকদের এই দুর্বৃত্তপণা কেন বন্ধ হচ্ছে না? মারাত্মক শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্ন বা বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী অন্য যে কোন কোন ধরনের হর্ন গাড়িতে ব্যবহারের বিরুদ্ধে দেশ আইন রয়েছ্ েঅথচ তার কোন প্রয়োগ নেই। আইনটি বাস্তবায়নের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে ও আইন ভঙ্গকারী বা আইন অমান্যকারীদের অবশ্যই শাস্তি আওতায় আনতে হবে। বিদ্যমান বিধিটির ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করতে হবে। একথা মানতেই হবে যে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষীয় উদাসীনতায় শব্দদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ২০০৬ সালে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণীত হলেও এর কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এর ২৫, ২৭ ও ২৮ ধারা মতে শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদ- ও কারাদ- উভয় প্রকার শাস্তির বিধানই রয়েছে। বিধি-বিধান থাকলেই হবে না তার যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, অধিদফতর এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সমন্বিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিগত দশ বছরে আমি বেশ কয়েকবার বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে পুলিশ কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। জরুরী বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি দেয়ার জন্য ঢাকার বর্তমান পুলিশ কমিশনার জনাব আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছেও থাকল আমার বিশেষ অনুরোধ। জনস্বার্থে বিয়য়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে মাননীয় হাইকোর্ট স্বতপ্রণোদিত হয়েও এ বিষয়ে দয়া করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কারণ, এর আগেও অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাননীয় হাইকোর্ট অনেক কিছু করেছেন। তাই মাননীয় উচ্চ আদালতকেই এ বিষয়ে শেষ ভরসাস্থল বলে মনে করছি। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×