ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার নয়া ফাঁদ

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১১ জুন ২০১৮

প্রতারণার নয়া ফাঁদ

প্রতারণার নানা ফাঁদ দেশজুড়ে। প্রতারিত হওয়ার দিগন্তগুলো ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। প্রতারকরা যেন চারপাশে গুঞ্জন করছে। এদের পাতা ফাঁদে যে কেউ যে কোন সময় পড়ে যেতে পারে। আর প্রতারিত হওয়া শুধু নয়, তাদের লাঞ্ছিত-নিপীড়িতও হতে হয়। দেশে প্রতারণার আরেক নয়া ফাঁদ উদ্ঘাটিত হয়েছে, যা ঘুণাক্ষরে কারও মনে আসার কথা নয়। এমনটা কেউ অতীতে দেখেওনি, ভাবেওনি। প্রতারক বাড়িওয়ালার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে ভাড়াটিয়া, তারপর আর্থিক সর্বনাশ তো ঘটছেই। উপরন্তু বাধ্য হয়ে বাড়িও ছাড়তে হচ্ছে। এসব অভিনব প্রতারণার জুড়ি মেলা যেন ভার। তাই প্রতারক বাড়িওয়ালাদের পৃথক ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতারকদের চিহ্নিত করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পথ প্রশস্ত হতে পারে। ঢাকা শহরে দুই-একজন বাড়িওয়ালা জমি ও ফ্ল্যাটের লোভ দেখিয়ে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রতারিত ভাড়াটিয়াদের হাতে প্রতারক বাড়িওয়ালারা ধরিয়ে দিচ্ছে ভুয়া দলিল। প্রতারকরা টার্গেট করে প্রবাসীদের দেশে থাকা স্ত্রী ও পরিবার । প্রতারিতরা টাকার জন্য চাপ দিলে বাড়িওয়ালারা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের ‘চরিত্রহীন’ আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। এতেও কাজ না হলে ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। ভাড়াটিয়ার চারিত্রিক দোষ থাকার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে মহল্লায় পরিকল্পিতভাবে সালিশ বসিয়ে হেনস্তা করে বাড়ি থেকে রীতিমতো তাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের একাধিক অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সিএমএম আদালতে এক গৃহবধূর দায়ের করা মামলায় তদন্তকালে পিবিআই এসব তথ্য পায়। মহিলার স্বামী প্রবাসী। তিনি পল্লবীর একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। প্রতারক বাড়িওয়ালা ও তার সিন্ডিকেটের সদস্য ঢাকায় বাড়ি তৈরির জন্য জমি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য প্ররোচিত করে। ভবিষ্যতে জমি বা ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যেতে পারে, তাই অসিসত্বর কেনার গুরুত্ব তুলে ধরত। এই বাড়িওয়ালার মাধ্যমে জমি কিনতে সিন্ডিকেটের সদস্যরা গৃহবধূকে উদ্বুদ্ধ করে। দীর্ঘ সম্পর্কের সুবাদে তাদের ফাঁদে পা দেন গৃহবধূ ও তার স্বামী। গাজীপুরে জমি কেনার জন্য তারা পর্যায়ক্রমে বাড়িওয়ালাকে ২২ লাখ টাকার বেশি প্রদান করেন। বাকি টাকা জমির দলিল করে দেয়ার পর প্রদানে চুক্তি হয়। চুক্তির পর বাড়িওয়ালা গৃহবধূকে জমির দলিল দেয়। কিন্তু জমি দখলের জন্য গেলে বাড়িওয়ালার লোকজন বাধা দেয়। তাদের জমির দলিল ভুয়া বলে তারা জানায়। তারা ভূমি অফিসে গিয়ে দেখেন দলিল ভুয়া। জমির মালিকের কোন সই নেই। গৃহবধূ তখন টাকা ফেরত চান। কিন্তু টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বাড়িওয়ালা। উপরন্তু গৃহবধূর বিরুদ্ধে তাদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি, চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগ এনে উকিল নোটিস পাঠিয়ে আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে দিনের পর দিন হয়রানি করতে থাকে। টাকা আত্মসাত করে উল্টো গৃহবধূর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। পরে চরিত্রহীন আখ্যা দিয়ে গৃহবধূকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। প্রতারকদের গ্রেফতার করা যায় না আত্মগোপনের কারণে। বরং গোপনে তৎপর প্রতারক চক্রটি। অভিনব এ ধরনের প্রতারণা হয়ত আরও হচ্ছে। হয়ত তদন্ত হলে আরও ঘটনা প্রকাশ হবে। প্রতারণার জাল সর্বত্র বিছানো। তা উদ্ঘাটনের কাজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, তারা নিশ্চয়ই করবেন।
×