ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটিতে বিকল্প ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১১ জুন ২০১৮

ছুটিতে বিকল্প ভাবনা

ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। উদ্দেশ্য শেকড়ের টানে গ্রাম-গঞ্জের বাড়িতে যাওয়া এবং মা-বাবা-ভাই-বোন-দাদা-দাদি-নানা-নানিসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি ও উপভোগ করা। এ নিয়ে প্রতিবছর দুর্ভোগ ও ভোগান্তিও কিছু কম হয় না। বাস-ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমার সর্বত্রই টিকেট পেতে চরম দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। এই সুযোগে বিমানের টিকেটও বিক্রি হয় চড়া মূল্যে। তবুও যদি স্বস্তি মেলে! রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। অতি বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত। তদুপরি অসহনীয় যানজট। লঞ্চ-স্টিমার-ট্রেনেও ভোগান্তির অন্ত নেই। প্রতি বছরের এ এক গলদঘর্ম ও প্রাণান্তকর প্রায়শ্চিত্তের চিত্র। সে অবস্থায় এর বিকল্প ভাবা যায় কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় ক্রিসমাস ও খ্রীস্ট নববর্ষ উপলক্ষে প্রলম্বিত ছুটির উদাহরণ আছে। চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ায়ও চান্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে দীর্ঘ অবকাশ যাপনের সুযোগ মেলে। দলে দলে মানুষ সে সময় বেরিয়ে পড়ে রাজধানী ছেড়ে। দেশেও অনুরূপ কিছু করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। প্রতিবছর ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল আযহা, পূজা-পার্বণ অথবা অন্যবিধ উৎসব উপলক্ষে লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে যায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারের লোকজন ঈদের ছুটি উদযাপন করতে যায় বিদেশ-বিভুঁইয়ে। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ছোট-বড়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে মানুষ এই আনন্দ ও খুশি ভাগ করে নেয় পরস্পর। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রাজধানীতে বিনোদন আনন্দ উপভোগের সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত। যে যা-ই বলুন না কেন, শুধু আহার-বিহার-জান-ভোজনে তো আর পেট ভরে না। এর জন্য চাই চিত্তবিনোদন তথা মনের খোরাক। ঘরে বসে বিনোদনের অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো টেলিভিশন। খবরের কাগজের যারা নিয়মিত পাঠক তারা ঈদের ছুটির অবকাশে পত্রিকা হাতে না পাওয়ায় নিতান্ত বাধ্য হয়ে বসেন টিভির সামনে খবরের আশায়। সেখানে খবরাখবর অনেকাংশে মেলে বটে, তবে সেইসঙ্গে জোটে বিজ্ঞাপনের প্রাবল্য ও প্রলাপ। ফলে অনেক সময় খবর সংগ্রহের নেশাতেই ভাটা পড়ার উপক্রম ঘটে। এর বাইরেও নাটক ও টেলিশনের নামে অধিকাংশ চ্যানেলে যা সব সম্প্রচারিত হয়ে থাকে সে সবের অধিকাংশই একঘেয়ে, ত্রিভুজ প্রেমের, গতানুগতিক গল্প, প্রায় একই নায়ক-নায়িকার সরব উপস্থিতি। কাহিনীতে নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। টিভিতে আলাদাভাবে নাচ-গানের ভাল অনুষ্ঠান হয় না বললেই চলে। বাইরের জগতের বিনোদনও যে খুব সহজলভ্য ও সহজসাধ্য, তা কিন্তু নয়। সেই একঘেয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, আশুলিয়া বাঁধ, সোনারগাঁও, শিশুপার্ক, রমনাপার্ক, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, জাদুঘর ইত্যাদি। ছুটির অবকাশে এসব স্থানে স্বভাবতই উপচে পড়ে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তেমন। বেসরকারী উদ্যোগে কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র ও চিলড্রেনস পার্ক গড়ে উঠলেও গুনতে হয় বাড়তি অর্থ। খাবারের দাম গলাকাটা। তদুপরি গণপরিবহনও সহজলভ্য নয়। ঈদের ছুটির অবকাশে সবাই যেন বাড়তি টুপাইস কামানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত। অথচ মধ্যবিত্তের সাধ ও সাধ্য উভয়ই সীমিত। আসলে ক্রমবর্ধমান নাগরিক রুচি ও চাহিদা পূরণের নিমিত্ত আমাদের বিনোদনের জগত ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। দেশে ভাল সিনেমা তৈরির পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো সংস্কার করে খুলে দিতে হবে। শিল্পকলা একাডেমি ও বেইলি রোডকে ঘিরে নাটকপাড়া আবার জমিয়ে তুলতে হবে। ঈদ উপলক্ষে গান-বাজনা-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে পাড়ায় ও মহল্লায়। খেলাধুলাইবা বাদ থাকে কেন? ঈদকে ঘিরে শুরু হোক না কেন ফুটবল টুর্নামেন্ট অথবা ক্রিকেট আসর! এসব ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগও কাম্য।
×