ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীর ৪৬৭ পরিবার পাচ্ছে নতুন ঘর

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১০ জুন ২০১৮

পটুয়াখালীর ৪৬৭ পরিবার পাচ্ছে নতুন ঘর

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী, ৯ জুন ॥ আলেয়া বিবির বাড়ি দশমিনা উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের যৌতা গ্রামে। ২২ বছর আগে থেকে দিনমজুর স্বামী মোশারেফ খলিফা ও সন্তানসহ কষ্টে কাটছিল আলেয়া বিবির। প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করে সন্তান সাবিনা, সজল ও শারমিনদের একবেলা-দু’বেলা খাওয়াতে হয়েছে। বড় ও মেঝ সন্তান শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে না পারলেও সরকারের উপবৃত্তি সুবিধা পেয়ে শারমিন আজ ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া। মোশারেফের মরহুম বাবা আজাহার খলিফা থেকে প্রাপ্ত স্থানীয় ৩ কড়া জমিতে খুপড়ি ঘর করে একযুগের বর্ষা মৌসুমের দিনগুলো গুনে পার করেছে। স্বপ্ন ছিল ওই জমিতে একটি ঘর করবেন। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরায় যার দশা, তার আবার স্বপ্ন পূরণ? স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার জন্য বাসস্থান প্রতিশ্রুতি ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নাম দেয় সরকার। ২৯৭ বর্গ ফুটের সেমিপাকা স্বপ্নের সে ঘরখানা পায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাই আলেয়া-মোশারেফ দম্পত্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মিলাদ দিয়ে নবনির্মিত গৃহে উঠেছেন। তিন সন্তানের জননী ডালিম বিবি। একই এলাকার মরহুম ছত্তার প্যাদার ছেলে দিনমজুর মোঃ আলমগীর প্যাদার সঙ্গে বিয়ের পর অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। এরই মধ্যে আশিক (১৪), ইয়ামিন (১০) ও ইয়াসিন (৭) জন্ম নেয় ডালিম-আলমগীর দম্পত্তির ঘরে। স্থানীয় ৪ কড়া মাপের নিচু জমিতে খড়ের ঘরে কাটিয়ে দিয়েছেন সংসার জীবন। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চল রনগোপালদী ইউনিয়নে বসবাস এদের। ঝড় হলেই আশঙ্কা এই বুঝি কুড়েঘর গেল উড়ে। সিডর, নার্গিস, আইলা, মহোসেন, কোমেন কোন ঝড়ই ক্ষমা করেনি ডালিমদের। ঘর ভাঙ্গা আর ঘর গড়া ডালিমদে নিয়তি। সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছেন ঝড়ে রক্ষা পাওয়ার জন্য, ঘর না ভাঙ্গার জন্য। কিছু ভাল খুঁটি দিয়ে একটি শক্তপোক্ত ঘর তাদের আজন্ম চাওয়া। ডালিম-আলমগীর দম্পত্তিও স্থানীয় সংসদ সদস্যর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সেমিপাকা ঘর পেয়ে মহাখুশি। ডালিম এমপি ও শেখ হাসিনাকে নামাজ পড়ে দোয়া করেছেন। যৌতার সোহেল, চরবোরহানের প্রতিবন্ধী সাজেদা, বেতাগীর অনীল, চর ঘুনির ঈমাম সিকদার, পূর্ব আলীপুরার জেলে আল-আমিন, বাঁশবাড়িয়ার স্বামী পরিত্যক্তা সালমা, দশমিনার রিক্সাচালক শুক্কুর, খলিশাখালীর দিনমজুর জসিমসহ ৪৬৭টি পরিবার পাচ্ছেন এই সেমিপাকা ঘর। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাস বলেন, এ পর্যন্ত ২৪০ পরিবার নবনির্মিত সেমিপাকা ঘরে বসবাস শুরু করেছেন। ৩০ জুনের মধ্যেই ৪৬৭ পরিবার উন্নয়ন বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঘর বসবাস উপযোগী করে তুলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ নির্মাণ কাজ করছে। প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, ‘সবার জন্য বাসস্থান’ জাতীর জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বস্তবায়নে আমরা ২০১০ সাল থেকে ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলতি বছরেই ১৭ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। আগামী দুই বছরে সারাদেশে ব্যাপক হারে এ কর্মসূচীর বাস্তবায়ন চলবে।
×