ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কল্যাণকামী রাষ্ট্রের বাজেট

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১০ জুন ২০১৮

কল্যাণকামী রাষ্ট্রের বাজেট

একটানা ১০ বছর বাজেট দেয়ার মাধ্যমে রেকর্ডও গড়লেন অর্থমন্ত্রী। দশকজুড়ে বাজেট পেশের অনন্য রেকর্ড গড়ল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। অনেক আশাবাদ আছে এই বাজেটে, আছে উচ্চাভিলাষ। সম্ভাবনাময় আগামীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়নে তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এমনটাই মনে হয়েছে। বাজেটে বিপুল ব্যয়ের কথা যেমন আছে, তেমনি আছে উপার্জনেরও পথনির্দেশ। অন্যবারের তুলনায় এবার বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত বাজেটসমূহের ধারাবাহিকতারই অংশ। ইতোপূর্বে প্রতিটি বাজেটেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আকার বেড়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের জনবহুল দেশগুলোর একটি। আমাদের জাতীয় আয় বাড়ছে, বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। বাজেট হচ্ছে কোন সরকারের উন্নয়ন কৌশলের বাস্তবায়নের ভিত্তি। এই বাজেটকে এবারও আমরা ‘করবান্ধব’ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। একই সঙ্গে এটি যে ক্যলাণকামী ও সমৃদ্ধির সোপানে অগ্রযাত্রার লক্ষ্যে প্রণীত বাজেটÑ তাতেও কোন সংশয় নেই। প্রবৃদ্ধি সাত দশমিক আট শতাংশ নির্ধারণ যে যৌক্তিক, সেকথাও বলতে হবে। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নযোগ্য বলে প্রত্যয় রয়েছে তাঁর। বাজেটের সমালোচনাকারীদের সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য : যারা নির্বোধ যাদের দেশপ্রেম নেই তারা বাজেটকে ভুয়া বলছেন। চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার এই বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর বর্তমান সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতির শিখরে আরোহণের সময়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন অকল্পনীয়। শিক্ষা উন্নয়ন খাতে এবারও সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এটিকে ইতিবাচকভাবে না দেখার কোন কারণ নেই। আগামী অর্থবছরের বাজেটে একটি লক্ষ্যযোগ্য দিক হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ভাতার হার বৃদ্ধি। একই সঙ্গে বাড়ছে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারাই হচ্ছেন প্রধান বিবেচনার কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের কাছে এটাই প্রত্যাশিত। গত বছরের বাজেটে তাদের কেবল সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি নয়, ১০ হাজার টাকা হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এছাড়াও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। এটি ছিল বাজেটের বড় ইতিবাচক দিক। এবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৬৪ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। লক্ষণীয় বর্তমান সরকারের শাসনামলে প্রতিটি বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাত গুরুত্ব পেয়ে আসছে। পরীক্ষামূলক হলেও সরকারী-বেসরকারী চাকুরেদের পেনশন দেয়ার একটি পরিকল্পনাও বাজেটে রয়েছে। শহুরে মধ্যবিত্তের ওপরও নতুন করে কোন কর বসাননি অর্থমন্ত্রী। করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই রেখেছেন। এবারের বাজেটে মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯৫৬ ডলারে নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করা হয়েছে। নারী উন্নয়নে বরাদ্দ বেড়েছে। ভর্তুকি বেড়েছে কৃষিতে। বলা হয়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা। মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৩২ হাজার কোটি টাকা। প্রতি অর্থবছরের শেষে দেখা যায় অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয় না। কাজেই বাজেট প্রস্তাব বা পাস নয়, দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সর্বোচ্চ দক্ষতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতে চাই।
×