ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় জাদুঘরে উন্মুক্ত হলো বাদ্যযন্ত্র গ্যালারি

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১০ জুন ২০১৮

জাতীয় জাদুঘরে উন্মুক্ত হলো বাদ্যযন্ত্র গ্যালারি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মোচিত হলো আরেকটি নতুন দিগন্ত। উন্মুক্ত হলো নবসাজে সজ্জিত বাদ্যযন্ত্র গ্যালারি। সঙ্গীতের ধ্বনি সৃষ্টিকারী নানা বাদ্যযন্ত্র এখন শোভা ২৮ পাচ্ছে নম্বর গ্যালারিটিতে। সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয় উচাটন করা বীণা-বাঁশি, মাদল, মৃদঙ্গ, শঙ্খ, খমক, একতারা-দোতারা, মন্দিরা, ঢাক-ঢোলসহ অতিপরিচিত যন্ত্রের সঙ্গে বিলুপ্ত ও বিপন্নপ্রায় সঙ্গীত যন্ত্রের সমন্বয়ে সাজানো প্রদর্শনালয়টি। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া সংস্কারের কাজ শেষে শনিবার খুলে দেয়া হলো গ্যালারিটি। সকালে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নতুনভাবে সজ্জিত বাদ্যযন্ত্র গ্যালারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী নবসজ্জিত গ্যালারিটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন জাদুঘরের ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের কিপার ড. স্বপন কুমার বিশ্বাস, জাতিতত্ত্ব ও অলঙ্করণ শিল্পকলা বিভাগের কিপার নূরে নাসরীন, জাদুঘরের সংরক্ষণ রসায়নবিদ মোঃ আকছারুজ্জামান নূরী এবং সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগের উপ-কিপার শক্তিপদ হালদার। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের সচিব মোঃ শওকত নবী। আনুষ্ঠানিক বক্তৃতার পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় নয়নজুড়ানো নবসজ্জিত বাদ্যযন্ত্র গ্যালারি। সেখানে চারপাশের কাচঘেরা শোকেসে ঠাঁই পেয়েছে চার ধরনের মোট ১৩৩টি বাদ্যযন্ত্র । রয়েছে ১৯৭০ সালে সংগৃহীত বাদ্যযন্ত্র থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়েরও বাদ্যযন্ত্র। একতারা, দোতারা, ঢাক, ঢোল, কাড়া, মৃদঙ্গ, মন্দিরা, ডমরু, ঝাঁঝর, কাঁসর, করতাল, ঢাক, বীণা, বাঁশি থেকে শুরু করে হারমোনিয়াম, বেহালা, গিটার, বিউগলসহ নানা দেশের নানা যুগের বাদ্যযন্ত্র। আছে বায়ুর দ্বারা অনুরণন সৃষ্টি করা বাদ্যযন্ত্র শুষির, চর্মাচ্ছাদিত এবং চামড়ার আঘাতে বেজে ওঠা আনন্দ যন্ত্র, প্রাণিজ তন্তু, সূতা বা ধাতব দিয়ে তৈরি ততযন্ত্র এবং আঘাতে বাজানো ধাতুর তৈরি ঘনযন্ত্র। আর্কাইভস দিবসের সেমিনার ও প্রদর্শনী ॥ প্রদর্শনী ও সেমিনারসহ নানা আয়োজনে শনিবার উদ্যাপিত হলো আন্তর্জাতিক আর্কাইভস দিবস। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ১৩০০ সাল থেকে শুরু করে এই ভূখ-ের বিভিন্ন সময়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি। সে সঙ্গে আর্কাইভসে যুক্ত হলো চার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দলিল ও এক হাজার লোকগানের সিডি। এ বছর আর্কাইভস দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আর্কাইভস: গবর্নেন্স, মেমোরি এ্যান্ড হেরিটেজ’। বিকেলে আগারগাঁওয়ের আর্কাইভস ও গণগ্রন্থাগার অধিদফতর মিলনায়তনে মূল প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। প্রবন্ধ পাঠ করেন অতিরিক্ত সচিব মোঃ মনজুরুর রহমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক চিত্তরঞ্জন মিশ্র। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ। আলোচনা করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা মালেক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এ কে এম জসীম উদ্দীন। সভাপতিত্ব করেন আর্কাইভস ও গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক দিলীপ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর্কাইভ দিবসের এ অনুষ্ঠানে আর্কাইভসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেকর্ড হস্তান্তর করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক মোঃ আবদুল হান্নান খান এবং শিল্পকলা একাডেমির সংগ্রহ করা এক হাজার লোকগানের সিডি হস্তান্তর করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আর্কাইভস দিবসের প্রদর্শনীটি চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। বাদল রহমান স্মারক বক্তৃতা ॥ মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্রকার ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ বাদল রহমান। কাল ১১ জুন বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শনিবার স্মরণ করা হলো এই গুণিজনকে। এ দিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো ‘বাদল রহমান স্মারক বক্তৃতা। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সপ্তমবারের মতো এ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ বছর বাদল রহমান স্মারক বক্তৃতা দেন চলচ্চিত্র সমালোচক, লেখক ও চলচ্চিত্র সংসদকর্মী মাহমুদুল হোসেন। বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র: বিকল্প আধুনিকতা ও বিউপনিবেশায়ন’। বাদল রহমান স্মরণে স্মৃতিতর্পণে অংশগ্রহণ করেন অগ্রজ চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হাশেম সুফি ও সুশীল সূত্রধর । সভাপতিত্ব করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন। আলোচনা ও স্মৃতিতর্পণে বক্তারা বলেন, চলচ্চিত্রকার বাদল রহমান বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্রের নির্মাতা এবং চলচ্চিত্র শিক্ষক ছিলেন। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের উত্তাল রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মুখ সারির সাংস্কৃতিক নেতা। চলচ্চিত্রকার বাদল রহমান বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসারে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি আজীবন দেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নেতৃত্বের ভূমিকায়। মৃত্যুকালেও তিনি ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
×