ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে তৎপর মিয়ানমার সেনারা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১০ জুন ২০১৮

তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে তৎপর মিয়ানমার সেনারা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সীমান্তের ওপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয়গ্রহণকারী রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার বহুমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গেল বছরের ২৫ আগস্ট রাতের পর রাখাইনে যে সেনা অভিযান শুরু হয় তাতে অনেকেই মারা গেছেন। অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। প্রাণ রক্ষার্থে এ পর্যন্ত ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। অনুরূপ প্রক্রিয়ায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। এদের বাংলাদেশে ঢেলে দেয়ার তৎপরতায় ইতোমধ্যেই প্রায় দেড় হাজার বিভিন্ন ফাকফোঁকরে চলেও এসেছে। এখন রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যে ইউএনএইসিআরের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। এ অবস্থায় তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার জন্য ইতোপূর্বেকার মতো ফাঁকা গুলিবর্ষণ, মাইকিং, বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান শুরু করেছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জিরো পয়েন্টে আশ্রিত এসব রোহিঙ্গা সহজে যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে তার জন্য নজরদারি আগের থেকে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। শূন্য রেখায় আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের দেখতে ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থা এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছে। সেখানে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা বারবার বলছেন, তারা নিজ এলাকা অর্থাৎ রাখাইনে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনী এতে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। শুধু তাই নয়, যাওয়ার পথে তারা স্থল মাইন পুঁতে রেখেছে, তেমনি সেনা অবস্থানের জন্যও ব্যাংকারও খুঁড়ে রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাক্যাম্পও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা কোন অবস্থাতে বাংলাদেশে আসতে চায় না। অথচ, তাদের চলমান জীবনের জন্য সবকিছু পৌঁছানো হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পথে। এরপরও এরই মাঝে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ওই শূন্যরেখা থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছে। যারা চলে এসেছে তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এমন কোন দিন নেই সেনা সদস্যরা তাদের হুমকি দেয় না। প্রতি রাতে ফাঁকা গুলিবর্ষণ চলে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা সদস্য। অপরদিকে এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে জানান দিয়েছেন, তারা রাখাইনের অধিবাসীদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেবেন। এ বক্তব্য সুচির সর্বশেষ। এ অবস্থায়ও কেন রোহিঙ্গা তাড়ানোর তৎপরতা চলছে তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আদৌ রোহিঙ্গাদের কখন ফিরিয়ে নেয়া হবে তা এখনও সুনির্দিষ্ট হয়নি। তবে বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে সকলে সোচ্চার অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এই ইস্যুতে রয়েছে সর্বাগ্রে। এতে সুফলও এসেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধানসহ সাহায্য সংস্থার প্রধান এবং মানবাধিকার কর্মীরা বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গেছেন। আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও অনেকে। এদিকে মৌসুম শুরু না হলেও বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় পাহাড় কেটে যেসব অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলো নিয়ে প্রশাসন ও স্থানীয়রা রয়েছে শঙ্কায়। রোহিঙ্গারাও আতঙ্কিত। বিবিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ছোট ছোট ধসের ঘটনা ঘটেছে। বড় ধরনের ঘটনা ঘটলে নিশ্চিতভাবে প্রাণহানির চিত্রও দেখা যাবে লক্ষণীয়। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল ফিতর আসন্ন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ সদস্য মুসলিম সম্প্রদায়ের। ঈদকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে ঈদ উপহার পর্বও শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ইফতার সামগ্রী, পোশাক-আশাক প্রদান করা হচ্ছে। যা নিয়ে রোহিঙ্গারা আনন্দিত ও উল্লসিত।
×