খালেদার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে, দাবি ব্যক্তিগত ডাক্তারদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা। শনিবার বিকেলে নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তার চার ব্যক্তিগত চিকিৎসক খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে ভর্তি করতে সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল তিনটায় খালেদা জিয়াকে দেখতে কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিকেল চারটায় তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় পর কারাগার থেকে বেরিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী তাদের পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ৫ জুন খালেদা জিয়া হঠাৎ করে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি ওই সময়টার কথা বলতে পারছেন না। তার একটি মাইন্ড স্ট্রোক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসা নিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলে জানান অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী। খালেদা জিয়াকে কেমন দেখেছেন জানতে চাইলে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, উনার কথায় কিছুটা জড়তা আছে, তবে কমিউনিকেশন করতে পারছেন। তার চিকিৎসার বিষয়ে কি কি করা উচিত আমরা আমাদের সুপারিশে বলে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়া তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মধ্যে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী ছাড়াও ছিলেনÑ নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ মোহাম্মদ মামুন। উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে বিগত চার মাস ধরে তিনি সেখানেই আছেন। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়ার আত্মীয়স্বজন, তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতারা পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দফায় দফায় সাক্ষাত করেছেন। খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই তারা বার বার অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। এক পর্যায়ে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। কিন্তু তারপরও খালেদা জিয়া সুস্থ না হওয়ায় তাকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করার পাশাপাশি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানোর দাবি জানায় বিএনপি। শুক্রবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে জানান ৫ জুন কোন এক সময় নাকি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া মাথা ঘুরে পড়ে যান। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে আজ রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনেরও ঘোষণা দেন। এ রকম এক পরিস্থিতিতে শনিবার খালেদা জিয়ার ৪ ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয় এবং তারা খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পাঁচ দফা আবেদন জানানোর পর এই প্রথম অনুমতি পেলেন। আরও জানানো হয় তিন সপ্তাহ ধরে তিনি ভীষণ জ্বরে ভুগছেন, যা কোন ক্রমেই থামছে না। মার্চ মাসের শেষদিকে খালেদা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিএনপির উদ্বেগের পরিপ্রক্ষিতে তার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে সরকার। তবে চার সদস্যের ওই বোর্ডের সদস্যরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর নয়। তবে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার নানা পরীক্ষা করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাই দেয়া হচ্ছে।