ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১০ জুন ২০১৮

সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত

স্টাফ রিপোর্টর ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নিয়েছে। এ কারণে দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে সুস্পষ্ট লঘুচাপের জন্যই প্রকৃতিতে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। তবে এটি উপকূল বা স্থলভাগে উঠে আসার সময় বৃষ্টিপাত ঝরাতে পারে। এর প্রভাবে ভ্যাপসা গরমে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়ছে। রাতেও ঠিক মতো ঘুমাতে পারছে না। আবার একই কারণে আজ রবিবার বিকেল চারটার মধ্যে বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে। এসব এলাকার পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হয়েছে। শনিবার আবহাওয়া অফিসের বিশেষ সতর্ক বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর পূর্বদিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের পাশাপাশি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে গভীর সাগরে তাদেরকে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে। এদিকে একই কারণে রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া দমকা বাতাস বয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের অপর এক বার্তায় বলা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে শনিবার বিকেল চারটা থেকে আজ রবিবার বিকেল চারটার মধ্যে বরিশাল চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বা অতি ভারি বৃষ্টিপাত ৮৯ মিলিমিটার) অতিভারি বর্ষণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতিভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, লঘুচাপের প্রভাবে গ্রীষ্মের এই বিদায় মুহূর্তে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। মৌসুুুুমি বায়ু দেশের ভেতরে থাকলে তা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তিনি জানান লঘুচাপই উপকূলের বা স্থলভাগের উঠে আসার সময় বৃষ্টি ঝরতে পারে। এছাড়া এর প্রভাব কেটে গেলে মৌসুমি বায়ুও সক্রিয় হয়ে পড়বে। তখন বৃষ্টি বেড়ে যাবে। অধিদফতর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগে বিস্তার লাভ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরও অগ্রসর হওয়ার অনুকূলে রয়েছে। এদিকে শুক্রবারের চেয়ে শনিবার ভ্যাপসা গরমের মাত্রা আরও বেড়েছে। সারাদিন প্রচ- রোদের তপ্তদাহে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। গত কয়েকদিনে বৃষ্টি না হওয়ায় জ্যৈষ্ঠের গরমে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। ভ্যাপসা গরমে অনেকে রাতেও ঠিকমতো ঘুমোতেও পারছে না। চারদিকে বাতাসের চিহ্নমাত্র নেই। গাছের পাতা যেন নড়ছেই না। শনিবার আকাশে অল্পস্বল্প মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে। ঢাকায় মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের খবর রয়েছে। সূর্যের তেজ যেন গরম চুল্লির রূপ ধারণ করেছে। শরীর থেকে গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে ঘাম। জ্যৈষ্ঠের মাসে বিদায়লগ্নে ভ্যাপসা গরম টেকা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দীন আহমেদ বলেন, লঘুচাপটি উপকূল পেরিয়ে যাওয়ার সময় এর প্রভাবে বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী কয়েক দিন চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূল ও এর আশপাশের এলাকায় বেশি বৃষ্টি হবে। এরপর মৌসুমি বায়ুর যখন সারাদেশে বিস্তার ঘটবে, তখন রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলেও বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বয়ে যাওয়া মৃদু দাবদাহও কেটে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদরা জানান, সাগর উত্তপ্ত হলে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। যখন লঘুচাপ থাকে তখন উপকূল ও আশপাশের এলাকায় ভ্যাপসা গরম হয়। এই লঘুচাপ যখন উপকূলের দিকে এগিয়ে যায় তখন এর প্রভাবে বৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়। মে মাসের শেষ দিকেও এমন একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল উত্তর বঙ্গোপসাগরে। সেটা পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়। এ কারণে সে সময় ভ্যাপসা গরম ছিল। তবে ওই নিম্নচাপ বাংলাদেশ উপকূলে না এসে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে চলে যায়। এর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর আবারও বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তারা জানান বর্তমানে সৃষ্ট লঘুচাপটি কেটে গেলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। মাসের দেশের দিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
×