ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামিহা রহমান

ঈদের শাড়ি

প্রকাশিত: ০৮:০৭, ৮ জুন ২০১৮

ঈদের শাড়ি

বাঙালী নারীর পছন্দের ভূষণ শাড়ির কদর বিশ্বজোড়া। ফ্যাশনের জগতে শাড়ি নারীকে বৈচিত্র্যময় রূপে ফুটিয়ে তুলতে শতভাগ সক্ষম। আর তাই তো ঈদের সাজে নতুন পোশাক হিসেবে শাড়ির গুরুত্ব আগাগোড়া। শাড়ি মানে কটন, সিল্ক, মসলিন, বেনারসি এবং জর্জেটের ফেব্রিকে হালকা কিংবা ভারি কাজ। সঙ্গে লাবণ্যময় একটু সাজ! ব্যস উৎসবকে রাঙিয়ে তুলবে রঙিন আদলে। ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। উৎসবে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছুর কথা ভাবাই যায় না। ঈদের সাজ-পোশাকে শাড়িতেই স্বাচ্ছন্দ্য। সব ধরনের অতিথি ও উৎসবের রঙে শাড়িতে বাঙালী নারীর সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। ঘরোয়া পরিবেশে অতিথি সামাল দিতে হোক আর বেড়াতে যান আত্মীয়ের বাড়িÑ শাড়িতে থাকুন পরিপাটি। ফ্যাশন মানেই স্বাচ্ছন্দ্য। এ কথা কার না জানা। তবু জানা জিনিসও মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দিতে হয়। কারণ, ভিনদেশী নানা রং-বাহারি পোশাকে ঈদ শপিংয়ের বাজার সয়লাব। তবু বাঙালীই জানে তার আসল ঐতিহ্যের কথা। তাই তো বাঙালী সংস্কৃতিতে শাড়ি দখল করে আছে বিশাল একটি জায়গা। সাজসজ্জার কথা এলেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে শাড়িতে মোহময় বাঙালী ললনার প্রতিচ্ছবি। ফ্যাশনের জগতে শাড়ি নারীকে বৈচিত্র্য রূপে ফুটিয়ে তুলতে শতভাগ সক্ষম। আর তাই তো ঈদের সাজে নতুন পোশাক হিসেবে শাড়ির গুরুত্ব আগাগোড়া। এবারের ঈদেও কেনাকাটায় শাড়ি প্রাধান্য পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ঈদে মেয়েদের কেনাকাটার ঘটা একটু বেশিই থাকে। সেদিক থেকে বরাবরই শাড়ি প্রাধান্য পায় অন্য পোশাক থেকে ছাড়িয়ে। বাঙালী নারীর অঙ্গে ঈদের কেনাকাটায় বাজারেও হাজির হয় নানা রকমের শাড়ি। বর্তমানে তো মিক্স এ্যান্ড ম্যাচের হুজুগ? কাঁথা, ব্লক, এ্যাসিড পেইন্ট সবাই একসঙ্গে শাড়িতে একটাই করছে। এতেই শাড়িতে উঠে আসছে অনবদ্য সৌন্দর্য। বেশ কিছুকাল আগেও শুধু কটনই ছিল ঈদের শাড়ি। সঙ্গে যুক্ত হতো মসলিন, জামদানির বাহার। বর্তমানে সেই আদল বদলে জরি, পুঁতি, চুমকির আলোড়নে তৈরি করা হচ্ছে আটপৌরে মসলিন, জামদানি, বেনারসি আর জর্জেটের সাম্রাজ্য। রঙে এসেছে ফেস্টিভ লুক। সামান্য লাবণ্যময় সাজ ঈদের সকাল-বিকালকে করে তুলবে বাজিমাত। ঢাকার এমন কিছু বিশিষ্ট দোকান আছে যাদের প্রিন্টের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। বিদেশ থেকেও মানুষ আসেন এসব প্রিন্টের খোঁজে। সেই সব ব্লক, কালার কম্বিনেশন আজও অমলিন। তাই গড্ডলিকার স্রোতে গা না ভাসিয়ে নিজস্বতা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সচেতন থাকুন, আধুনিক স্টাইল সম্পর্কে অবহিত থাকুন। এমনটাই বলছিলেন অভিনেত্রী আফসানা মিমি। তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ঈদের সময় বেশিরভাগ আয়োজনই থাকে সকাল এবং সন্ধ্যায় তাই আপনার বাড়িতে অতিথি আসুক বা আপনি কোন আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়ি যান, সেজেগুজে তো যেতেই হবে। নতুন শাড়ি তো পরতেই হবে। তা না হলে ঈদের আমেজটাই পূর্ণতা পাবে না বলেই আমার মনে হয়।’ ঈদের বাজারে মিলছে তাঁত, কোটা, চেক, জামদানি নানা রকমের হয় সুতি শাড়ি। যে কোন বয়সীই পরতে পারেন এসব শাড়ি। সুতি শাড়ি কেবল ঐতিহ্যবাহীই নয়, স্টাইলিশও বটে। যুগ যুগ ধরে সুতি শাড়ি তার রং-রূপ পাল্টেছে কিন্তু এর কদর কমেনি এতটুকুও। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আঁচল এবং পাড়ের ধরনে রয়েছে বিভিন্ন রকমফের কাজ। মিক্সড মিডিয়া, ব্লক, কারচুপি, আলগা পাড় এবং টারসিলে সাজানো হয়েছে শাড়ির জমিন। যেহেতু গ্রীষ্মের দাবদাহ আর বর্ষার আগমন তাই বেশির ভাগ শাড়ি তৈরি করা হয়েছে এন্ডি কটন আর মসলিনের ফেব্রিকে আনা হয়েছে ফেস্টিভ লুক। সঙ্গে মসলিন, জামদানি, বেনারসি আর জর্জেটের কাপড়ের শাড়ি তো আছেই। হাল্কা থেকে গাঢ় সব ধরনের রঙেই শাড়িতে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। আবার সুতি শাড়িতে ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ভেজিটেবল ডাই, সুতি শাড়িতে কাঁথা স্টিচ, ফুলেল ও জামদানি প্রিন্ট, কুঁচি প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, গুজরাটি কাজের নকশা, এ্যামব্রয়ডারি করেও এতে নতুন রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আছে কোটা, নেট সুতি ও ফাইন সুতির কিছু শাড়ি। সুতির মতোই দেখাবে এবং আরামদায়ক এমন হাফ সিল্কের শাড়ি। কিছু কিছু শাড়িতে করা হয়েছে ঝকমকে পাথরের রং শাড়ির পাড়ে, আঁচলে শোভা পাবে হীরা, মুক্তা, চুনির রঙের এফেক্ট। নানা রঙের শেড থাকবে শাড়িতে ও আঁচলে। এবার গ্রীষ্মের দাবদাহেই এসে পড়েছে বর্ষা। তবু বাইরে নাভিশ্বাস ওঠা গরমের রেশ। এ জন্যই বেশি নিরীক্ষায় না গিয়ে মাত্র চার ধরনের ন্যাচারাল ফেব্রিক নিয়েই কাজ হয়েছে। সম্পূর্ণ সংগ্রহ তৈরি হয়েছে সুতি, এন্ডি আর মসলিনে। এতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উৎসবের আবহ। মূল রং নীল, সবুজ, ম্যাজেন্টা আর সহকারী রং লাল, হলুদ, কমলা, মেরুন, গেরুয়া, বাদামি আর সাদার বিভিন্ন শেড ব্যবহার করা হয়েছে। শাড়িগুলোতে ডিজাইনে থিমের ব্যবহারের পাশাপাশি, প্যাটার্ন আর কালার কম্বিনেশনে থাকছে সৃজননিরীক্ষা। ফলে বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ ক্রেতাদের আকর্ষণ করবে বলেই আশা করা যায়। সাজগোজ তো শুধু শাড়ি বা অন্য পোশাক নয়। সঙ্গে আছে মানানসই এ্যাক্সেসরিজও। নারীরা শাড়ির সঙ্গে কখনও চিরায়ত বাঙালী সাজ আবার কখনও বিচিত্র সমাবেশ আনেন। বর্তমানে বোট নেক, হাই নেক, সিøভলেস নানা কাটের ও নানা রকমের ব্লাউজ, চুলের সাজ ও গয়নায় নারী হয়ে উঠতে পারেন আকর্ষণীয়। আড়ং, বিশ্বরঙ, রঙ বাংলাদেশ, অঞ্জন’স, কে-ক্রাফট, সাদাকালো প্রভৃতি ফ্যাশন হাউস এবং নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, মৌচাক মার্কেট থেকে শুরু করে রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, মেট্রো শপিং মল, পুলিশ প্লাজায় পাবেন ঈদের শাড়ি।
×