ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাউফলে তিন শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ৮ জুন ২০১৮

বাউফলে তিন শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ৭ জুন ॥ বাউফলে একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের সামনে তার তিন শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিার স্কুলে যেতে পারেননি। এ ঘটনায় ওই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বুধবার মধ্য মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের ক্লাস চলাকালীন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শর্মি আক্তার, খাদিজা আক্তার ও নাহিদ হোসেনকে দফতরী খলিলুর রহমানের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ডেকে নেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান ফরিদ। এ সময় প্রধান শিক্ষক ছাড়া অফিস কক্ষে বসা ছিলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান ফরিদের স্ত্রী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিতা। ওই তিন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে প্রবেশ করার পর সভাপতি দফতরীকে অফিস কক্ষের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর সভাপতি দুইটি বেত একত্র করে প্রথমে নাহিদকে এলোপাতাড়িভাবে পেটান এক পর্যায়ে নাহিদ পা ধরে প্রাণভিক্ষা চাইলে সভাপতি তাকে লাথি মারলে তিনি ছিটকে পড়ে যান। এরপর সভাপতি অন্য দুই ছাত্রী শর্মি ও খাদিজাকে এলোপাতাড়িভাবে পিটিয়ে জখম করেন। ঘটনার পর তিন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে প্রধান শিক্ষকের অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। প্রধান শিক্ষকের সামনে এমন নির্মম ঘটনা ঘটলেও তিনি কোন প্রতিবাদ করেননি। নির্যাতিত শিক্ষার্থী শর্মি ও খাদিজা জানায়, রমজান মাসে সরকারী বন্ধ থাকা সত্ত্বেও অষ্টম শ্রেণী ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে। আমরা কোচিং ক্লাস করার জন্যই বিদ্যালয়ে যাই। শ্রেণী কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে আমাদেরকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করা হয়। এদের মধ্যে নাহিদ বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবারও সে স্কুলে যায়নি। সহপাঠীরা জানায়, নাহিদ মেধাবী ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। অষ্টম শ্রেণীতেও সে জিপিএ-৫ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ অবস্থায় নাহিদকে মারধর করায় সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এদিকে খবর পেয়ে নির্যাতিত শিক্ষার্থী শর্মির বাবা করিম রাড়ি বিদ্যালয়ে গিয়ে তার মেয়েকে পেটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন সভাপতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, সভাপতির মেয়ের সঙ্গে নাহিদ মুঠোফোনে কথা বলেছে। আর কথা বলায় সহায়তা করেছে শর্মি ও খাদিজা। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ৩ জনকে পিটিয়ে জখম করেছেন। এদের মধ্যে নাহিদকে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার হুমকিও দিয়েছেন সভাপতি।
×