ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোপাল নাথ বাবুল

অন্যরকম আনন্দ

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৭ জুন ২০১৮

অন্যরকম আনন্দ

রোজা ফরাসী শব্দ। এর আরবী শব্দ সাওম। সাওমের বহুবচন সিয়াম। মিথ্যা, প্রতারণা, হিংসা- বিদ্বেষ, পরনিন্দা, পরচর্চা, ধূমপানসহ বিভিন্ন মাদক গ্রহণ, পাপকর্ম, বিভিন্ন বদভ্যাস ত্যাগ করার সহজ উপায় পুরো রমজান মাস একাগ্রচিত্তে সিয়াম সাধনা করা। এক কথায়, ষড়রিপুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হলো সিয়াম সাধনা। সারা বছর প্রতীক্ষার পর পুরো এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আসে অতি আনন্দের ঈদ-উল-ফিতর। মুসলমান ভাইদের মতো এখন প্রতিবছর অন্যান্য সম্প্রদায়ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। কারণ, ঈদ এখন আর এক সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ঈদ এখন সার্বজনীন একটি উৎসব। ঈদ এলে সবার মন খুশিতে ভরে যায়। কারণ, এতে চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ লম্বা ছুটি ভোগ করতে পারে। পরিবারসহ অনেকে পরিকল্পনা করে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যায়। এভাবে মুসলমান ভাইদের মতো অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। আমার কবীর জ্যাঠা প্রতিবছর ঈদের আগের দিন সেমাই, চিনিসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি দিয়ে যান এবং ঈদের দিন রাতের বেলা সপরিবারে অবশ্যই জ্যাঠার বাড়িতে দাওয়াত গ্রহণ করতে হয়। নইলে মহাকা- ঘটে যায়। এভাবে জ্যাঠার পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। স্বাধীনের পূর্ব থেকে জ্যাঠার পরিবারের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বাবার মুখে শুনেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পরিবার সাতকানিয়ার কাঞ্চনায় অবস্থান করার সময় এ জ্যাঠা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট মাথায় করে ধান-চালসহ পুকুরের মাছ ও বিভিন্ন শাকসবজি নিয়ে দিয়ে আসতেন। এভাবে সারা নয় মাস ধরে তিনি আমাদের পরিবারের খাবার জুগিয়েছেন। আমার বাবা আর জ্যাঠা যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল। একই মায়ের সন্তানের মতো সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন এ দুজন। দুজন দুই সম্প্রদায়ের হওয়ার পরেও অনেকের কটু কথাকে পরোয়া না করে দুজনের সম্পর্ককে এখনও আপন ভায়ের মতো ধরে রেখেছেন। গ্রামে কবীর জ্যাঠার পরিবার ছাড়াও বন্ধুদের বাড়িতে সেমাইয়ের দাওয়াত থাকে ও রাতে খাবারের দাওয়াত রক্ষা করতে হয়। পুরো ঈদের দিনটা হৈচৈ করে বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়ে দেয়া হয়। এ এক অসামান্য আনন্দ। এ আনন্দ চলে ঈদের কয়েকদিন পর্যন্ত। কিন্তু মাঝে মধ্যে অনেক দুঃখের কথাও শোনা যায়। প্রতিবছর নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার অনেক কষ্টের মধ্যেও মানুষকে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হয়। তাছাড়া, যাত্রাপথে ওভারটেক, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো ও অনভিজ্ঞ চালকের কারণে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় মানুষকে মৃত্যুর কবলে পড়তে হয়। যা কাম্য নয়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×