ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

ঈদ মানে আনন্দ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৭ জুন ২০১৮

ঈদ মানে আনন্দ

রমজানে এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর আসে আনন্দের ঈদ। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হবার দিন। সন্ধ্যাকাশে চাঁদ দেখা দিলেই সবার মনে ঈদের আনন্দলহরী বইতে শুরু করে। পবিত্র একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয় সর্ব পৃথিবীব্যাপী। শূচি-শুদ্ধ হৃদয় মনে মুসলিম ধর্মাবলম্বী ভাইবোনেরা ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে। শত্রু-মিত্র ভুলে সবার সঙ্গে মিশে যায় একই কাতারে। ধনী-গরিব, শ্রেণী ভেদাভেদ নির্বিশেষে ঈদের মঙ্গলবারতা পৌঁচ্ছে যায় সবার ঘরে ঘরে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুলের অমর সৃষ্টি ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই হৃদয়ের মাঝে খুশির তান আপনি বেজে ওঠে। ঈদের আনন্দ সত্যিকার অর্থে তখন উপলব্ধিতে আসে। ঈদ অবশ্যই আনন্দে ভরপুর আর সে আনন্দকে আরও মহিমাময় করে তোলে ত্যাগ-তিতিক্ষা আর উষ্ণ আলিঙ্গন। পাবার নয় বরং এই আনন্দের ঈদে অন্যকে দেয়ার মনোবাসনাই একজনের মধ্যে জাগাতে পারে সত্যিকার আনন্দ। আর এই আনন্দে পার্থিব আনন্দের চেয়ে বরং স্বর্গীয় আনন্দের পরিমাণই বেশি। একজনের অঢেল আছে বলেই যে আনন্দ করবে নিজের ইচ্ছাপ্রসূত তা কখনো কাম্য হতে পারে না। বরং দরিদ্র প্রতিবেশীর প্রতি সহযোগিতা, ভালবাসা ও আনন্দ ভাগাভাগি হয়ে উঠতে পারে প্রকৃত ঈদের আনন্দ। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষে এর বিপরীত চিত্র অধিকাংশ সময় লক্ষ্যণীয়। পাশের বাড়ির প্রতিবেশী ঈদ আনন্দ সহাকারে করতে পারলো কিনা তা অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করি না। বরং নিজের আনন্দটাকেই বেশি প্রধান্য দিয়ে ফেলি। ‘এই জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি’ এই বাক্যে আকৃষ্ট হয়ে বেশি পাওয়ার মধ্যেই মিথ্যা আনন্দ খুঁজি। পাবার চেয়ে যে দেয়ার মধ্যে আনন্দ বেশি রয়েছে তা ভুলে গিয়ে পাবার পথটাকেই প্রশস্ত করে ফেলি। সামর্থ্য নেই বলে যে ঈদের আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হবে তা কখনও গ্রহণীয় হতে পারে না। যারা সামর্থ্যবান তাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে সামর্থ্যহীনদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। কারণ মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের আনন্দের সহভাগি হওয়ার অধিকার রয়েছে। আর যখনই সামর্থ্যবানরা মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদের আনন্দ বিলোনোয় এগিয়ে আসবে তখনই সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায্যতা, ভালবাসা ও নৈতিকতা। পবিত্র বাইবেলের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতে পারে “তুমি তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসবে।’ আমরা নিজেকে সবাই ভালবাসি। ঘৃণা করি না কখনো। তাই নিজেকে যে রকম ভালবাসি যখন প্রতিবেশীকে সে রকমভাবে ভালবাসতে পারি তখনই ত্যাগের মহিমা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই মানবতা প্রতিষ্ঠায় আমরাই এগিয়ে আসতে পারি। যখন মানুষকে মানুষ হিসেবে মেনে নিই তখনই মানবতার জয়গান রচিত হয়। ঈদ মানেই যেহেতু আনন্দ ও সবার মুখে হাসি উজ্জ্বলতর হয়ে উঠে তাই যাদের কোন সামর্থ্য নেই এই ঈদের দিনে তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মধ্যেই প্রকৃত সুখ আর সত্যিকার মানবতা গড়ে ওঠে। দেশ ও সমাজের ভেতর থেকে বৈষম্য-ভেদাভেদ দূর হয়ে যায়। ‘জগতের আনন্দযজ্ঞে সবার নিমন্ত্রণ’ রবি ঠাকুরের গানের এই পঙ্ক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও ঈদের আনন্দধামে ঈদের আনন্দ অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে নিমন্ত্রিত। বনানী, ঢাকা থেকে
×