ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে চলছে ঈদ বকশিশের নামে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৬ জুন ২০১৮

কেরানীগঞ্জে চলছে ঈদ বকশিশের নামে চাঁদাবাজি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৫ জুন ॥ ঈদকে সামনে রেখে চলছে অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজি। ঈদের বকশিশ, ঈদি, কাসিদা পার্টির নামে বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলছে এই চাঁদাবাজি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ঈদ কার্ড বিলি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হচ্ছে চাঁদা। ফুটপাথ ও যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছেন পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য। কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজনৈতিক সংগঠনের নামে ঈদ বকশিশ বলে চাঁদা তোলা হচ্ছে বেশি। ঈদ বকশিশের নামে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঈদের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা ঈদ বকশিশ দাবি করছেন। প্রতিষ্ঠান ভেদে এই বকশিশের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিচ্ছেন তারা। তাছাড়া গ্যাস, বিদ্যুত, টেলিফোনসহ বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের সবাই এ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শিল্পপতিরা হয়ে যান তাদের টার্গেট। ঈদ এলেই কেরানীগঞ্জে বকশিশের নামে শুরু হয় চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলম টাওয়ারের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ বকশিশের নামে শুরু হয়েছে উপরি আদায় আর চাঁদাবাজি। মস্তানরা নানা অজুহাতে সারা বছরই চাঁদা আদায় করে থাকে। কিন্তু ঈদ মৌসুমে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তারা বাড়তি ইনকামের জন্য এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী বলেন, চাঁদাবাজরা টেলিফোন করে চাচা, কাকা, মামা বা ভাইজান এই ধরনের সম্বোধন করে বলে ঈদ তো এসে গেল, কিছু ব্যবস্থা করে রাখবেন। সহজ কথায় না বুঝলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। যে ব্যবসায়ী যত বড় তার কাছে তত বেশি বকশিশ বা চাঁদা দাবি করা হয়। অন্যদিকে যে মস্তান যত বড় তার নজরানার পরিমাণও তত বেশি। ব্যবসায়ীরাও ঝামেলা এড়াতে সমঝোতা করে কম-বেশি চাঁদা দিয়ে দেন। এ মৌসুমে ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ওস্তাদ পুলিশরাও। কার কাছে কিভাবে বকশিশ চাইতে হবে তা তাদের ভাল করেই জানা। আর যদি কারও বিরুদ্ধে কোন মামলা বা অভিযোগ থাকে তবে তো কোন কথাই নেই। তিলকে তাল বানিয়ে পকেট ভারি করতে তাদের সময় লাগে না। পূর্ব আগানগরের এক তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী বলেন, সাদা পোশাকে কয়েক সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এসে গেছেন। আর বলে গেছেন, এবারে ঈদের বকশিশের অঙ্কটাও একটু বেশি দেয়ার জন্য। আবদারের সুরে বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তার ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ তো করতে হবে। চর কালিগঞ্জ এলাকার এক ডাইং ব্যবসায়ী বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার কাছে ২শ’ শাড়ি দাবি করেছে। তারা নাকি গরিবদের মাঝে বিলি করবে। এখন আমি পড়েছি বিপাকে আমার কাজ কাপড়ে রং করা, আমি এখন শাড়ি কোথায় পাই। জিনজিরা বাজার এলাকার ফুটপাথে ঈদ পোশাক বিক্রেতাদের অভিযোগ আমাদের কাছে প্রতি ব্যবসায়ী হিসেবে ২ হাজার টাকা ঈদ বকশিশ দাবি করে গেছে। আর বলে গেছে, আমরা ওমুক ইউনিয়নের তমুক লীগের নেতা। ২৫ রজমানে আসব টাকা রেডি করে রাখিস। সংবাদ মাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, মোবাইলে সেভ করা নম্বর ছাড়া অপরিচিত নম্বরের কল ধরি না। উপরি বা বকশিশ যে যাই বলুক না কেন? ঈদ এলেই শুরু হয়ে যায় মৌসুমি চাঁদাবাজি। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে ততই এই ঈদ নামের উপরি আদায়ের ঈদ বকশিশের মৌসুমি চাঁদাবাজির হিড়িক বাড়ছে। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকের মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন বলেন, ঈদ বকশিশের নামে চাঁদা আদায়ের কোন অভিযোগ এখনও পাইনি। যদি এ ধরনের কোন তথ্য পাওয়া যায় তবে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×