ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নূর ইসলাম হাবিব

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এর প্রভাব

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৬ জুন ২০১৮

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এর প্রভাব

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ঝড়পরধষ গবফরধ আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গ্রামের চায়ের দোকানে মানুষজন তথ্যের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে না। তার বদলে এসেছে স্মার্টফোন বা আইফোননির্ভরতা। গণমাধ্যমে তথ্যের বিপণনের সাবেকী প্রথা এখন আর নেই। চার পাশে, দেশে-বিদেশে কী ঘটছে সেগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগুলপ্লাসসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। আমাদের টাইম লাইন, নিউজফিড ভরে যায় প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় সংবাদ, ছবি ও ঘটনায়। এই সুযোগটি করে দিচ্ছে ইন্টারনেট। সারা বিশে^ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ ভাগ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। তরুণদের মধ্যে এ হার আরও বেশি, প্রায় ৯০ ভাগ। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মধ্যে শতকার ৮০ ভাগ মানুষের রয়েছে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট। ইন্টারনেট মাধ্যমের সুযোগে সামাজিক যোগাযোগের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। ইন্টারনেটে চালু হওয়া সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো মানবীয় যোগাযোগের সর্বাধুনিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষ মানবীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দূরত্বকে পুরোপুরি অকার্যকর করে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও আইফোন। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি তথ্য, মতামত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারে। এগুলো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রাণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনলাইন সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের থাকে অনেক উৎস ও অনেক প্রাপক। প্রথাগত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের থাকে একটি উৎস ও অনেক প্রাপক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া থেকে আলাদা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে রয়েছে, ভধপবনড়ড়শ, সবংংধহমবৎ, মড়ড়মষব, রহংঃৎধমৎধস, ষরহশবফষহ, ঢ়রহঃবৎবংঃ, ঃঁসনষবৎ, ংহধঢ়পযধঃ, ঃরিঃঃবৎ, ারনবৎ, বিপযধঃ, যিধঃংধঢ়ঢ়, ুড়ঁঃঁনব, ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে সবচেয় জনপ্রিয় এবং অগ্রপথিক হচ্ছে ভধপবনড়ড়শ. ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক জাকারবার্গ (গধৎশ তঁপশবৎনবৎম) ফেসবুক নামের নেটওয়ার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালে এটি শুধু ওই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত ছিল। পরে এই ওয়েব সাইটটি অন্যান্য অঞ্চল ও বিশ^বিদ্যালয় হয়ে সমগ্র বিশে^ জনপ্রিয়তা আর্জন করে। আগস্ট ২০১৭-এর হিসেব অনুযায়ী সারা বিশে^ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা প্রায় ২০৪ কোটি ৭০ লাখ। গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় ৮৪% বয়োপ্রাপ্ত লোকের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট রয়েছে। ১৩-১৭ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্য ৬০ ভাগ এর অধিকের অন্তত একটি সামাজিক যোগাযোগ প্রফাইল রয়েছে। তারা দিনে দুই ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করে। তৃতীয় বিশে^র দেশ হিসেবে আমাদের দেশের খুব কম সংখ্যক মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করেন। তারপরও ছাত্র-শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিশু-কিশোর, গৃহিণী, পেশাজীবী কে নেই ফেসবুকে। ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সক্রিয়ভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছে (সেপ্টেম্বর-২০১৭)। বিশ^ব্যাপী ইউটিউব ব্যবহারকারী ১৫০ কোটি, হোয়াটসআপ ১২০ কোটি, ফেসবুক মেসেঞ্জার ১২০ কোটি ও উইচ্যাট ব্যবহারকারী ৯৩ কোটি ৮০ লাখ (আগস্ট-২০১৭)। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব : ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব রেখে চলেছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে দিচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুক জাদুতে দূর হয়েছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। ফেসবুকের মাধ্যমে এর সদস্যরা নির্দিষ্ট কাউকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আবার কারও বন্ধুত্বের আহ্বান ফিরিয়েও দিতে পারেন। ফেসবুকের মাধ্যমে শেয়ার করা ছবি, ভিডিও, মতামত ইত্যাদির ওপর মন্তব্য করা যায়। আবার চলে পাল্টা মন্তব্য। ব্যক্তিগত বার্তা পাঠানো যায়, যা কেবল যাকে পাঠানো হয় সেই পড়তে ও দেখতে পারে অন্যরা নয়। তাছাড়া নতুন বা পরিচিত বন্ধু খোঁজার জন্য ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী গ্রুপ করে নেয়া যায়। ফেসবুকের সবচেয়ে মজার জিনিসটি হচ্ছে চ্যাটিং। কাক্সিক্ষত বন্ধুটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর ফেসবুকে থাকা সাপেক্ষে তার সঙ্গে চ্যাট করা যায়। সংবাদের ক্ষেত্রে প্রভাব : বর্তমানে সংবাদের জন্য মানুষের সংবাদপত্র, বেতার ও টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা আগের তুলনায় অনেকগুণে কমেছে। ২০১১ সালে চবি জবংবধৎপয ফধঃধ থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০% লোক সংবাদের জন্য অনলাইনের ওপর নির্ভর করে এবং এদের মধ্যে ৬০% সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ জেনে যায়। সিএনএন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, তিন-চর্তুথাংশ মার্কিন নাগরিক ই-মেইল অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ পেয়ে থাকে। মার্কিন তরুণদের ক্ষুদ্র একটি অংশ শুধু মাঝে মধ্যে সংবাদপত্র পড়ে। এর শতকরা হার ১০ ভাগেরও কম। কিশোর-কিশোরীদের ওপর প্রভাব : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর দিক হলো কিশোর-কিশোরীদের কাছে পর্নোসাইট উন্মুক্ত হয়ে পড়া। সহজেই তারা বয়স্কদের সাইটে ঢুকতে পারে যা তাদের অপরিপক্ব মানসিকতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেরতে পারে। সাংবাদিক সাঈদ সরকার এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে তরুণ ও কিশোর সমাজের। সুস্থভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কায়িক শ্রমের গুরুত্ব রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করার। কিন্তু ফেসবুকের মায়ায় প্রায়ই আটকে পড়ছে তরুণ ও কিশোর সমাজ। লেখাপড়া, কোচিং, প্রাইভেট, টিভি দেখা ইত্যাদি কারণে সময় বের করা এমনিতেই ক্ষীণ। তারপরও যেটুকু পাওয়া যায় তাও কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। হাতে হাতে এখন আইফোন, স্মার্টফোন। যখন তাদের ভবিষ্যতে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার কথা তখন তারা ভাবছে ফেসবুকে কত আকর্ষণীয় ছবি আপলোড করা যায়। অথবা এমন কী কথা লেখা যাবে যাতে লাইক, শোয়ারের বন্যা বয়ে যাবে। এতে বুদ্ধির বন্ধ্যাত্ব তৈরি হচ্ছে, বিঘিœত হচ্ছে মেধার বিকাশ।’ সামাজিক বৈষম্য তৈরি : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজে ধনী-দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান তৈরি করে। হতদরিদ্র ও দরিদ্র জনসাধারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধা গ্রহণ করতে অক্ষম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্যপ্রাপ্তিতে শিক্ষিত-অশিক্ষিত ও ধনী-দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করে। যাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের দক্ষতা আছে তারা চাকরি, প্রভাবশালীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এবং নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের সুযোগ বেশি পেয়ে থাকে। আসক্তি তৈরি করা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি করে। অধিক সময় ব্যয় হয়, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং যৌন আলাপচারিতা বেশি হয়। এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের বিকারগ্রস্ত করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মানসিক চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অনেক ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। একজন ইংরেজ মনোচিকিৎসক বলেছেন, তিনি বছরে প্রায় ১০০ জনকে মনোচিকিৎসা দিচ্ছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে মনোবিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। চাকরি ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব : কোন তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করলে চাকরি ক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ২০১৩ সালে ৬টি দেশের ১৭ হাজার তরুণের মধ্যে পরীক্ষা করে দেখা গেছে ১৬-৩৪ বছর বয়সী তরুণের ১০ জনের মধ্যে ১ জন চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য। ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯৩% নিয়োগদাতা প্রার্থী বাছাইয়ের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পোস্টিং পরীক্ষা করে দেখেন। বেলজিয়ামের এযবহঃ টহরাবৎংরঃু-র চৎড়ভবংংড়ৎ ঝঃরলহ ইধবৎঃ এক জরিপে দেখিয়েছেন- ফেসবুকে যাদের প্রফাইল ছবি বিতর্র্কিত তারা নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ডাক পাননি। নিয়োগকারী সংস্থা অনেক সময় চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে ফেসবুক পরীক্ষা করেন। কলেজে ভর্তি : ছাত্র-ছাত্রীদের ফেসবুক কমেন্ট, পোস্টিং কোন কলেজের নীতিমালা বা মূল্যেবোধর পরিপন্থী হলে সে কলেজে সে ভর্তির সুযোগ পাবে না। পূর্বে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর, রিপোর্ট কার্ড, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম ইত্যাদি বিবেচনা করা হতো ভর্তির সময়। এখন সময় বদলেছে, পশ্চিমা বিশ্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র ভর্তির সময় ভর্তিচ্ছুদের ফেসবুক প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমাদের দেশেও অদূর ভবিষ্যতে এরকম ভর্তি পদ্ধতি শুরু হবে আশা করা যায়। জঙ্গী সংগঠনগুলো কর্তৃক ব্যবহার : জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের কর্মকা- পরিচালনা ও নিজেদের সংগঠিত করার কাজে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করে থাকে। আইএস তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা ও তরুণদের তাদের সংগঠনে রিক্রুট করার কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছে। তাদের রয়েছে অনলাইন ম্যাগাজিন ওংষধসরপ ঝঃধঃব জবঢ়ড়ৎঃ. তারা অনেক অনলাইন মেটেরিয়াল তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়। এভাবে তারা তরুণদের উ™¦ুদ্ধ করে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে। অনেক তরুণ-তরুণী তাদের অনলাইন বক্তব্য দ্বারা উ™¦ুদ্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে গোপনে দেশত্যাগ করেছে। ২০১৩ সালে আমাদের দেশে রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা, বৌদ্ধদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নবেম্বর-২০১৭ সালে রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলা ও হতাহতের ঘটনায় ছিল দুর্বৃত্ত কর্তৃক ফেসবুকের অপব্যবহার। প্রত্যেক ক্ষেত্রে ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে এ ধরনের অপকর্ম সংঘটিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে গবেষণা : চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে কয়েক বছর আগে এর শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর গবেষণা করা হয়। এই গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকের কারণে অনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পক্ষে মত দিয়েছেন সকল শিক্ষক এবং তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী। ফেসবুকে নগ্ন ছবি/ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়, নারীদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা হয় এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রচার চালানো হয়। মতাদর্শগত পৃথক গ্রুপগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে একে অপরকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে। এ গবেষণায় এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী ও প্রায় অর্ধেক শিক্ষকের মতে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ফেসবুকের প্রভাব রয়েছে। ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মতে দূরের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ফেসবুকের প্রভাব রয়েছে। আবার মূল্যবোধর অবক্ষয়, সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি, যৌন হয়রানি, সামাজিকভাবে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ব্যক্তিগত ক্রোধের কারণে কাউকে ঝামেলায় ফেলার মতো প্রভাবও রয়েছে ফেসবুকের। জনমত গঠনে ও সচেতনতা সৃষ্টিতে ফেসবুকের প্রভাব রয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ কেউ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বলেও গবেষণায় জানা যায়। শিক্ষাক্রমে ফেসবুকের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাবই রয়েছে। সুপারিশ : ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য গবেষণায় কতগুলো সুপারিশ করা হয়েছে। অনৈতিক কাজ বন্ধ করার জন্য এ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি বৃদ্ধি করা, অশালীন ছবি ও তথ্য সম্পর্কে একটা শালীন নীতিমালা প্রণয়ন করা, ব্যবহারকারীদের নীতি ও নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করা এবং ফেসবুকের নেতিবাচক দিক বর্জন করার কথা বলা হয়েছে। নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করে এরকম গ্রুপগুলো চিহ্নিত করে এ এ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করার উদ্যোগের সুপারিশও করা হয়েছে গবেষণায়। বিনোদন লাভের জন্য অনেক শিক্ষার্থী ফেসবুক ব্যবহার করে। বিনোদনের নামে কেউ যেন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের ছেলেমেয়েরা কী পরিমাণ সময় ব্যয় করছে ফেসবুকে, পর্ণসাইট ভিজিট করছে কি-না, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কি-না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। লেখক : সহকারী পরিচালক, আইএসপিআর
×