ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্র শিল্পে ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৬ জুন ২০১৮

ক্ষুদ্র শিল্পে ঝুঁকি

বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলাটা বহুলাংশে নির্ভরশীল ক্ষদ্র ও মাঝারি আয়তনের শিল্পের (এসএমই) প্রবৃদ্ধির ওপর। শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশসমূহে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। মধ্যম আয়ের লোকেরা যে অর্থনৈতিকভাবে সফলকাম হতে পারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্বল্প পুঁজি নিয়ে যারা ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলেন তাদের নানা ব্যবসায়িক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মুনাফা হ্রাস কিংবা লোকসানের মুখোমুখি হওয়া এসব তো আছেই, প্রাকৃতিক দুর্বিপাকসহ বিভিন্ন দৈবদুর্বিপাকে বড় আর্থিক ঝুঁকির ভেতর অনেক সময় তাদের পড়তে হয়। অথচ সৎ উপায়ে কঠোর পরিশ্রম এবং বিনিয়োগের পাশাপাশি অন্য লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে ওই শিল্পোদ্যোক্তাদের ইতিবাচক অবদান থাকে। অথচ ক্ষুদ্র শিল্পের ঝুঁকির কারণে তাদের অবস্থা থাকে ভঙ্গুর। জনবান্ধব সরকার বিষয়টি সম্পর্কে সর্ম্পূণ সচেতন বলেই ক্ষুদ্র শিল্পে পরিবেশ ঝুঁকি কমাতে ৯৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সাধারণত স্থায়ী সম্পদ ও জমি ছাড়া ৭৫ লাখ টাকার নিচে মূলধন রয়েছে এবং ১৬ থেকে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন এমন উদ্যোক্তারাই ক্ষুদ্র শিল্পের তালিকাভুক্ত। তবে এই প্রকল্পের আওতায় কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ২০ লাখ টাকা বা তার নিচে মূলধন রয়েছে এবং ১০ জনের মতো শ্রমিক রয়েছে এমন ক্ষুদ্র্র শিল্পগুলোকে সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত ক্ষুদ্র শিল্পের পরিবেশ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ১ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পরিবেশসম্মত প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। পাশাপাশি ব্যবসা বিকাশে তাদের গুচ্ছভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এবং পরিবেশসম্মত টেকসই পদ্ধতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করা হবে। এ প্রকল্পে ১০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। অবশিষ্ট ১৪০ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে পিকেএসএফ। এসবই ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য সুসংবাদ। দেশে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, শস্য উৎপাদন, পোল্ট্রি, ফিশারি, ডেইরি, অপ্রাতিষ্ঠানিক হস্তচালিত তাঁত, প্লাস্টিক পণ্য, ফুটওয়্যার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, তথ্যপ্রযুক্তি, সিল্ক ও মুদি দোকানসহ বহুমুখী ক্ষুদ্র শিল্প বিদ্যমান। মোট দেশজ উৎপাদনেও (জিডিপি) তার অন্তর্ভুক্তি নেহাত কম নয়। দেখা যাচ্ছে জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ এসব খাতের প্রতিষ্ঠান থেকেই আসে। অবিন্যস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোগের কারণে পরিবেশের ওপর ঝুঁকির মাত্রা বাড়ছে। ক্ষুদ্র উদ্যোগের প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়ে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ আইনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন অনুযায়ী ৩ হাজার ১৫০ ডলার বা আড়াই লাখ টাকার নিচে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কোন পরিবেশগত সনদ দেখাতে হয় না। আমরা আশা প্রকাশ করছি, গৃহীত প্রকল্পটি পরিবেশের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বর্তমানে পিকেএসএফের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ২৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৭৬ শতাংশ নারী। তাদের ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের আরও টেকসই ভিত্তি দিতে নতুন প্রকল্পটির আওতায় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করার ভাবনাটি বাস্তবায়িত হোক সেটাই প্রত্যাশা।
×