ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়াল আগুনে পুড়ে স্বজন হারানোরা আহাজারি করেন এখনও

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৪ জুন ২০১৮

  ভয়াল আগুনে পুড়ে স্বজন হারানোরা আহাজারি করেন এখনও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভয়াবহ নিমতলী ট্র্যাজেডি দিবস আজ। আট বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকার নবাব কাটারার ৪৩ নম্বর বাড়ির এক তলার কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি থেকে সৃষ্ট আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নেয় ১২৫ জনের প্রাণ। সেদিন নিমতলীর সেই দুর্ভাগা বাসিন্দাদের কাছ থেকে অগ্নিশিখা কেড়ে নেয় তাদের প্রিয়জনকে, করে দেয় সহায়-সম্বলহীন, পুড়িয়ে ছাই করে দেয় ওই স্থানের বাসিন্দাদের সুখ-স্বপ্ন আর আনন্দ। এই দুর্ঘটনায় সহায় সম্বল হারিয়ে বেদনায় কাতর বাসিন্দাদের অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে যান। অনেকেই আবার নতুন করে সেখানেই শুরু করেন জীবন সংগ্রাম। এই ভয়াল অগ্নিকা-ের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ৩ জুন কুঁকড়ে ওঠেন নিমতলীবাসী, স্বজনের মনে করে আহাজারিতে ভেঙ্গে পড়েন। নিমতলী ট্র্যাজেডির আট বছর উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)সহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে বেলা ১১টার দিকে নিমতলী ছাতা মসজিদের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে পবার পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের দোকান ও কারখানা সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বিশেষ করে পুরান ঢাকায় রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান রয়েছে। ফলে এসব গুদাম, কারখানা ও দোকানের রাসায়নিক পদার্থের অব্যবস্থাপনায় বা সামান্য ত্রুটিতে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা অথবা ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকান সরিয়ে নেয়া না হলে আবারও যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুরান ঢাকায় বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থের গুদাম, কারখানা ও দোকানগুলো ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার জনজীবন, জননিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, নিমতলী ট্র্যাজেডির আট বছর পার হলেও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা, গুদাম ও দোকান এখনও সরেনি। বরং অলি-গলিতে গড়ে উঠছে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও দোকানসহ প্লাস্টিক, পলিথিন ও জুতার কারখানা। নিমতলীসহ পুরান ঢাকার মানুষ অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের সঙ্গে আতঙ্কে বসবাস করছে। এসব কারখানা, গুদাম ও দোকানে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। তবে রাসায়নিক পদার্থের অব্যবস্থাপনা বা সামান্য ত্রুটিতে ঘটতে পারে নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। তাই অবিলম্বে এসব রাসায়নিক পদার্থের কারখানা, গুদাম ও দোকান অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে একটি ভবনের নিচতলার রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তেই তা বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাজধানীতে এক হাজারেরও বেশি কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম রয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এর মধ্যে সাড়ে আটশরও বেশি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশনের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স গ্রহণের বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা, গুদাম পরিচালনার কোন সুযোগ নেই।
×