ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রান্সফর্মারের বুশিং থেকে আগুন লেগেছিল

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৪ জুন ২০১৮

ট্রান্সফর্মারের বুশিং থেকে আগুন লেগেছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীবাগে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সাবস্টেশনে ট্রান্সফরমারের বুশিং থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। খুব দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ায় অন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাগুলো কাজে আসেনি। মন্ত্রণালয় এবং ডিপিডিসি দুই তদন্ত কমিটিই তাদের প্রতিবেদনে অগ্নিকা-ের একই কারণ দেখিয়েছে। যদিও বুশিং থেকে অগ্নিকা- কেবলমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বুধবার রাতে রাজধানীর পরীবাগে ডিপিডিসির একটি সাবস্টেশনে আগুন লেগে যায়। রাত সোয়া নয়টায় লাগা আগুন নেভে রাত সাড়ে নয়টার দিকে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ওই দিন রাতের বড় অংশ জুড়ে ঢাকার মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘটনার তদন্তে বিদ্যুত বিভাগ যুগ্ম সচিব নাজমুল আহসানকে আহ্বায়ক করে মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। পাঁচ সদস্যের কমিটিতে এছাড়াও বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। অন্যদিকে ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী সরওয়ার এ কায়নাত নূরকে প্রধান করে পৃথক কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিতে তিন দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান নাজমুল আহসান বলেন, তারা দেখেছেন বুশিং থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন লাল বুশিংয়ের ত্রুটি থেকে ট্রান্সফরমারে আগুন লেগেছে। তিনি বলেন, ট্রান্সফরমারটিও পুরনো ছিল। তিনি আজ সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানান। ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী সরওয়ার এ কায়নাত নূর বলেন, একটি ট্রান্সফরমারই পুড়ে গেছে। ট্রান্সফরমারটি ৩৩ বছরের পুরনো। সাধারণত ২০ বছর এ ধরনের ট্রান্সফরমারের অর্থনৈতিক আয়ু থাকে। সেই হিসেবে এটি পুরনো বলে দাবি করেন তিনি। এখন এ ধরনের একটি ট্রান্সফরমারের দাম ৫ কোটি টাকা। তবে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করতে গেলে ট্রান্সফরমারটির ক্রয় মূল্যকে বিবেচনা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৩৩ বছর আগে এটির দাম খুব বেশি ছিল না। তিনি গতকাল প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানান। প্রসঙ্গত ট্রান্সফরমারটি তৈরি হয় ১৯৮৫ সালে। পরীবাগ সাবস্টেশনে স্থাপন করা হয় ১৯৮৬ সালে। ঢাকার বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে এই সাবস্টেশনটি পুরনো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রক্ষণবেক্ষণের অভাবে এসব ট্রান্সফরমারে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে থাকে। আর তদন্তে অন্য সব বিষয়কে আড়াল করতে যান্ত্রিক ত্রুটিকে বড় করে দেখানো হয়। নিয়োমিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে ট্রান্সফরমার ৫০ বছরও চলতে পারে। দেশের অনেক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে ৫০ বছরের বেশি পুরনো। সে সব বিদ্যুত কেন্দ্রে ট্রান্সফমারও পুরনো। আবার দেশের অনেক জায়গাতে ৪০ থেকে ৪৫ বছরের পুরনো ট্রান্সফরমার রয়েছে। সেগুলোতে আগুন লাগার ঘটনা তো ঘটছে না। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বুশিংয়ের এক প্রান্ত তেলের মধ্যে থাকে। অন্য প্রান্ত বিদ্যুত লাইনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এখানে বুশিংয়ের উপরের অংশ ঠিক মতো পরিষ্কার না করলে ময়লা জমে তেল চুইয়ে বাইরে আসে। সেই তেল বিদ্যুত পরিবাহী হয়ে যায়। যা থেকে আগুন ধরে থাকে। তিনি বলেন, সাবস্টেশন যারা পরিচালনা করে তারা রক্ষণাবেক্ষণ করে না। রক্ষণাবেক্ষণে অন্য আরেকটি পক্ষ কাজ করে। হয়ত সঠিক সময়ে তাদের অবহিত করা হয়নি বা করা হলেও তারা আসেনি। না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার কোন কারণ নেই বলে দাবি করেন তিনি। বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, এর থেকে অনেক পুরনো ট্রান্সফরমার আমাদের রয়েছে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করলে ৫০ বছরেও ট্রান্সফরমারের কিছু হওয়ার কথা নয়। জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, তারা নিয়মিতই রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি করেন। কোন কারণে বুশিং খুলে গিয়ে তেল বের হয়ে আসায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি। তবে এই ট্রান্সফরমারটি বদলে ফেলার একটি প্রকল্প ছিল বলে জানান তিনি। যদিও পাশেই একই সময়ে একই কোম্পানির একটি ট্রান্সফরমার ভালভাবে চলছে বলে দাবি করেন তিনি।
×